বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩

উরস শরীফ কী এবং কেন

মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল (আড়াইহাজারী)
উরস শরীফ কী এবং কেন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং লক্ষ কোটি দুরুদ ও সালাম প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বায়াতগণের উপর বর্ষিত হোক।

উরস কী? এটি কি শরীয়তসম্মত? এ বিষয়টি বোঝার আগে আমাদেরকে জানতে হবে যে, আউলিয়ায়ে কেরামগণের উরসে কী কী হয়? প্রথমত মাজার শরীফ (কবর) জিয়ারত, কোরআনে পাকের তেলাওয়াত, আল্লাহ তায়ালার জিকির, নাত শরীফ পাঠ, ইসলামী আলোচনা ইত্যাদি করা হয়। যা সম্পূর্ণ জায়েজ। যা শরীয়ত নিষেধ করেছে তা সর্বাবস্থায় হারাম।

উরস কী?

উরস-এর শাব্দিক অর্থ বিবাহ। আর উরূস আরবিতে বর ও নববধূকে বলা হয়। পরিভাষায় আউলিয়ায়ে কেরাম যেদিন ইন্তেকাল করেছেন ঐদিনকে উরস বলা হয়। কেননা এ দিনে আউলিয়ায়ে কেরাম প্রিয় রবের সান্নিধ্যে চলে গেছেন। আউলিয়ায়ে কেরামগণের জীবনী পড়লে আমরা বুঝতে পারি যে, তাঁরা আল্লাহ তায়ালার দিদার, ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে সারাজীবন ইবাদত-রিয়াজতে অতিবাহিত করেছেন। যে দিন তাঁদের মৃত্যু হয় সে দিনই তাঁরা আল্লাহ তায়ালার নিকটে চলে যান। এ মৃত্যু তাঁদের জন্যে আনন্দের বিষয়।

হাদিসে পাকে বর্ণিত রয়েছে যে, মুনকির-নাকির ফেরেশতার প্রশ্ন-উত্তর সঠিক দেয়ার পর ফেরেশতারা বলবে : তুমি ঐ নববধূর মতো ঘুমিয়ে যাও যাকে তার প্রিয়তমা ছাড়া কেউ জাগ্রত করবে না। (তিরমিজি, হাদিস নং : ১০৭১)। এই দিন আউলিয়া কেরামের উরস (নববধূ) হওয়ার দিন। এ জন্য এই দিনকে উরস বলা হয়।

আহলুসুন্নাত ওয়াল জামাত-এর নিকট আউলিয়া কেরাম-এর উরস করা জায়েয এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। এই উরস সম্পাদন করা ইসলামী শরীয়তসম্মত। কোরআন মাজিদে বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত ইয়াহিয়া (আলাহিস সালাম)-এর জন্য বলা হয়েছে : ইয়াহিয়া (আলাইহিস সালাম)-এর জন্য শান্তি বর্ষিত হোক, যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, যেদিন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং যেদিন তাঁকে জীবিত উঠানো হবে। (সূরা মরিয়ম, আয়াত নং : ১৫)। কোরআনে পাকে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর জন্য বলা হয়েছেÑআমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক যেদিন আমার জন্ম হয়েছে, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমাকে জীবিত উঠানো হবে। (সূরা মরিয়ম, আয়াত নং : ৩৩)।

এই দুটি আয়াতে মোবারাকায় ওফাত অর্থাৎ মৃত্যুর দিনে শান্তি বর্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা গেল যে, নবীগণ-অলিগণের মৃত্যু তারিখ স্মরণ করা বরকতময় কাজ। যেহেতু আল্লাহ তাআলা দুজন নবীর ওফাতের দিনের কথা বর্ণনা করেছেন। সেহেতু নবীগণের অলিগণের উরস করা সম্পূর্ণ জায়েজ।

প্রকৃতপক্ষে ঈসালে সাওয়াব (নেক আমল করে মৃত ব্যক্তির আমলনামায় পৌঁছানো), যা কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিত বর্ণিত রয়েছে, তাই আউলিয়া কেরামের জন্য ঈসালে সাওয়াব-এর পরিবর্তে উরস শব্দটি নামে বিখ্যাত হয়ে গেছে। আমাদের সমাজে ওরস বলতে বুযুর্গানে দ্বীন যেদিন মৃত্যুবরণ করেছেন সেদিন কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, অপরকে খাবার খাওয়ানো, বুযুর্গানে দ্বীনের রুহের উপর সাওয়াব পৌঁছে দেয়া ইত্যাদিকে বোঝায়। স্বয়ং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বছরে একটি নির্দিষ্ট দিনে সাহাবায়ে কেরামগণের (মাজার) কবরে গিয়ে জিয়ারত এবং তাঁদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতেন। ফতোয়ায় শামী, ১ম খণ্ড, বাবু জিয়ারাতুল কবরে বর্ণিত রয়েছে : ‘ইবনে শায়বাহ (রাঃ) রেওয়ায়েত করেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বছর ওহুদের যুদ্ধে শহীদ সাহাবাগণের কবরে যেতেন’। তাফসীরে কাবীর, তাফসীরে দুররে মানসুর ও তাফসীরে কুরতুবীতে সূরা আর-রাদে ২৪নং আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে যে, ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত রয়েছে যে, তিনি প্রত্যেক বছর শহীদদের কবরে যেতেন এবং তাঁদের প্রতি সালাম প্রেরণ করতেন। চার খলিফাও এমন করতেন।

আইম্মায়ে কেরামের বাণী :

ফতোয়ায়ে আজিজিয়া পৃষ্ঠা নং ৪৫-এ শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) বলেন, ‘দ্বিতীয়টি হচ্ছে যে, অনেক লোক একত্রিত হয়ে কোরআনে পাক খতম করা, খাবার-দাবার ফাতেহা করে উপস্থিত লোকদের মাঝে বণ্টন করা, এ ধরনের পদ্ধতি যদিও খোলাফায়ে রাশিদিন এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম-এঁর যুগে প্রচলিত ছিল না, কিন্তু কেউ যদি করে কোনো সমস্যা নেই। বরং জীবিতদের দ্বারা মৃতের উপকার লাভ হয়’।

‘যুবদাতুন নাসায়িহ ফী মাসায়েলিল জাবাহী’-এর মধ্যে শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) বলেন, ‘এই (উরস না জায়েজ হওয়ার) অপবাদ লোকদের অবস্থা সম্পর্কে না জানার কারণে। কোনো ব্যক্তিই শরীয়তের ফরজকৃত ফরজ ছাড়া কোনো কাজকে ফরজ হিসেবে জানে না। হ্যাঁ আল্লাহ তায়ালার নেককার বান্দাগণের কবর (মাজার) হতে বরকত লাভ, ঈসালে সাওয়াব, কোরআন তেলাওয়াত, খাবার বণ্টন দ্বারা তাদের সাহায্য করা ওলামায়ে কেরামের ইজমা রয়েছে যে, এটি পছন্দনীয় কাজ। উরসের দিন নির্দিষ্ট করা হয় এ জন্য যে, উনাদের ওফাতের তারিখকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যে। অন্যথায় যে কোনোদিন করাও ভালো’।

কিতাবের মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, মদিনাবাসীরা হযরত আমির হামজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর উরস শরীফ করতেন, যাঁর মাজার উহুদ পাহাড়ের ছিল। উপরে উল্লেখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো যে, ওরস শরীফ করা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত এবং দুনিয়া আখেরাতে কল্যাণ লাভের মাধ্যম।

মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল (আড়াইহাজারী) : অধ্যক্ষ, রেলওয়ে হাফিজিয়া সুন্নীয়া আলিম মাদ্রাসা, শাহজাহানপুর, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়