প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৩০
জনবল সংকট।। নেই নৌযান
ঝুঁকিপূর্ণ ভাড়া ভবনে চলছে বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম
মতলব উত্তর উপজেলার বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ ভাড়া ভবনে নিরাপত্তাহীনতা এবং জনবল সংকট নিয়েই চলছে।
বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি থাকার কথা সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের বেলতলী অঞ্চলে। কিন্তু নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় নৌ পুলিশ ফাঁড়িটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে ষাটনল ইউনিয়নের কালীপুর বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ একটি মার্কেটের দোতলায়। এখানে ২০১৯ সালে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপিত হওয়ার পর প্রায় ছয় বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সংস্থাটির নিজস্ব ঠিকানা হয়নি। প্রায় ছয় বছর ধরে ফাঁড়ির কার্যক্রম চলছে একটি পুরোনো মার্কেটে। সেখানে নেই কোনো নিরাপত্তা, নেই আসামি রাখার হাজতখানা। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই পরিচালিত হচ্ছে নৌ পুলিশ ফাঁড়িটির কার্যক্রম।
প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছেন না ফাঁড়ির নৌ পুলিশের সদস্যরা। নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে স্পিডবোট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। নৌপথের বিশাল এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনবল সংকটেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
মেঘনা নদীর ষাটনল লঞ্চ ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলা, গজারিয়া উপজেলা, দাউদকান্দি উপজেলার সীমানা পর্যন্ত এবং মতলব উত্তর উপজেলার ধনাগোদা নদীর শ্রী রায়েরচর বাংলাবাজার থেকে কালীরবাজার, খাগুরিয়া, হাফানীয়া, বেলতলী, কালীপুর ও লালপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার নৌপথের বিশাল এলাকা বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আওতায় রয়েছে।
বর্তমানে ফাঁড়ির দায়িত্বে রয়েছেন একজন পুলিশ পরিদর্শক, একজন উপ-পরিদর্শক, দুজন সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ ৫ জন সদস্য। এ জনবল নিয়েই নিয়মিত নৌ পথে টহলের কাজ চলছে। নৌ পুলিশের সরকারি কোনো স্পিডবোট না থাকায় নদীতে অপরাধ দমন বেশ চ্যালেঞ্জিং। বর্তমানে ইঞ্জিনচালিত একটি শ্যালো নৌকা নিয়ে নদীপথে টহলের কাজ চালানো হচ্ছে। নদীপথে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধে নৌ পুলিশের অভিযানে গত ২ মাসে ৪টি মামলা ও ১৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই অঞ্চলে চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় নৌ পুলিশের তৎপরতায় বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এখান থেকে নিয়মিতই কয়েক প্রকারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাল্কহেড, কার্গো ও জাহাজ দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল সরবরাহ করে থাকেন। সম্প্রতি বেলতলী অঞ্চলের মেঘনা নদীর মতলব-গজারিয়ার নৌ সীমানার তীরবর্তী অঞ্চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের সংঘর্ষে বাবলা খালাসি নামে একজন নৌ ডাকাত নিহত হয়েছে।নৌযান পরিচালনাকারীরা বলছেন, এখনও নানা কৌশলে নদীতে চাঁদাবাজি চলছে ও রাতের আঁধারে অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। নৌ পুলিশের সীমাবদ্ধতা দূর হলে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নৌ পুলিশ ফাঁড়ির স্থায়ী কার্যালয় তৈরির লক্ষ্যে বেলতলী লঞ্চঘাটের দক্ষিণ দিকে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের বাইরে বদরপুর মৌজার বিএস দাগ নং ২০৭৬ এবং ২০৭৭ দাগে ৩৩ শতক জমি কেনা হয়েছে। সেখানে নৌ পুলিশের একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়। তবে স্থাপনা নির্মাণের কাজ ওই সাইনবোর্ডেই থমকে আছে।
কালীপুর বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ দীল মিয়া দলু জানান, এখানে স্বল্প জনবল দিয়ে নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নৌ পথে নিরাপত্তার জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তবে নদীতে চাঁদাবাজি নির্মূল করতে ফাঁড়িতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের পাশাপাশি আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি।
বেলতলী নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, স্বল্প জনবল দিয়ে নিয়মিত নদীতে টহলের কাজ অব্যাহত রেখেছেন তারা। এখানে নৌ পথের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্পিডবোট একান্ত প্রয়োজন। তাদের অভিযানের কারণেই মূলত নৌ পথে অবৈধ বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজি কমেছে।
চাঁদপুরের নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জানান, আবাসন সমস্যার কারণে জনবল বাড়ানো যাচ্ছে না। নৌপথে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত একটি স্পিডবোট দেয়ার বিষয়টি সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।