সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২১, ০০:০০

লকডাউনের প্রথমদিন

চাঁদপুর শহরে শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক জব্দ

মিজানুর রহমান ॥
চাঁদপুর শহরে শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক জব্দ

কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও তিনদিনের সীমিত পরিসরে লকডাউন শুরু হয়েছে। গতকাল ২৮ জুন সোমবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় এই বিধিনিষেধ (লকডাউন)। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ থাকবে বলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল এই লকডাউনের প্রথমদিন অনেকটা সফল বলা যায়। দূরপাল্লার সকল ধরনের গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। তবে শহরের অভ্যন্তরে ও বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কিছু সিএজজি রিকশা চলেছে, অটোবাইক চলেছে। এগুলো পুরোপুরি বন্ধ করতে পারলে লকডাউন শতভাগ বাস্তবায়ন বলা যাবে। কিছু কিছু দোকান কিছুক্ষণ খুললেও তারা চোর-পুলিশ খেলেছে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) জানান, অতি প্রয়োজনীয় যানবাহন, পণ্যবাহী গাড়ি ও রিকশা বাদে সব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলমান লকডাউনে চলাচল বন্ধ থাকবে।

তিনি জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে এবং লকডাউন বাস্তবায়নে সকাল থেকেই পুলিশ ও ট্রাফিক সদস্যরা মাঠে রয়েছে। আমি নিজেও রাস্তায় নেমেছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক জব্দ করা হয়েছে। জনগণকে সচেতন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিংও করা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার চাঁদপুর জেলা পুলিশ তা প্রতিপালন করবে।

এদিকে সীমিত পরিসরে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথমদিন সোমবার সকাল থেকেই চাঁদপুর শহরের মার্কেট, শপিংমল বিপণীবিতান ও দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ ছিলো। কিছু কিছু দোকান এক সার্টার খুলে রাখার চেষ্টা করলেও মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের টহল দেখে কিছুক্ষণ বন্ধ রাখে আবার খুলে।

সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শহরের পালবাজার গেট, কালীবাড়ি কোর্ট স্টেশন, শপথ চত্বর, চিত্রলেখা মোড়, নতুন বাজার মোড়, মিশন রোড মোড়, বাসস্ট্যান্ড, পুরাণবাজার ব্রিজের গোড়া ও পলাশের মোড়ে গিয়ে দেখা যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইল টিম, ট্রাফিক, থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ টহল দিচ্ছে। রিকশায় দুজন হলে একজন যাত্রীকে নামিয়ে দিচ্ছে। মোটরবাইকেও একজনের বেশি যেতে দেয়া হচ্ছে না। নিয়ম অমান্য করে আসা রোগী ছাড়া ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে স্টেডিয়ামে ও পুরাণবাজার মধুসূদন স্কুল মাঠে রাখা হচ্ছে। তবে রিকশা চলেছে অনেক।

রাস্তায় বের হওয়ায় কয়েকজন রিকশা যাত্রী জানান, অটোর ৫ টাকার ভাড়া ২০/৩০ টাকা দিয়ে রিকশায় যাতায়াত করেছেন। অনেকে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। এ সময় বহু মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। তারা বলেন, প্রয়োজনীয় কাজে বাসা থেকে বের না হয়ে উপায় নেই।

অপরদিকে সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের না হলে তাদের খাওয়াবে কে? অনেকের গাড়ি আটকিয়ে রাখায় বিপাকে পড়েন তারা।

এদিকে গণপরিবহনের সাথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন চাঁদপুরের ট্রেন যাত্রীরা। যারা ভুলক্রমে স্টেশনে এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, তাদেরকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর রেলওয়ে বড়স্টেশন মাস্টার শোহেবুল সিকদার বলেন, ট্রেন গণপরিবহনের আওতাভুক্ত হওয়ায় সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার ভোর পাঁচটায় চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে গেছে। দুপুরে সাগরিকা ট্রেন আসেনি এবং ছেড়েও যায়নি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।

এদিকে দিনের শেষদিকে লকডাউন পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়ে আসে। এ সময় রাস্তায় শহরবাসীর যাতায়াত বেড়ে যায়।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে গতকাল সোমবার থেকে ১ জুলাই ভোর ৬ টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, ‘করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কিছু শর্তাবলি সংযুক্ত করে ২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।’

নতুন যুক্ত হওয়া শর্তাবলি :

১. সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

২. সব শপিংমল, মার্কেট, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৩. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

৪. সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেওয়া করতে হবে।

৫. জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্যে আরও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সম্প্রতি দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন দেয়ার সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সুপারিশের আলোকে সারা দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামী ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। আসন্ন বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মাঠে থাকবে।’

এছাড়া আজ ২৯ জুন মঙ্গলবার কঠোর লকডাউনের বিধি-নিষেধের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলে জানা গেছে। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৫ জুন কোভিড-১ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্যে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জুন ক্লোজিংয়ের জন্যে ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত এই ‘লকডাউন’ শেষ হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়