শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:১৯

স্বাধীনতার পর থেকে খেলাধুলায় পিছিয়ে নারায়ণপুর অঞ্চল

মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ
স্বাধীনতার পর থেকে খেলাধুলায় পিছিয়ে নারায়ণপুর অঞ্চল

খেলাধুলাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা সব সময় শহরকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চল সব সময় অবহেলিত। যার দিকে সুদৃষ্টি দিতে দেখা যায়নি কাউকে। চাঁদপুর জেলার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তিক অঞ্চল মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে খেলাধুলার উন্নয়নে কোনো কাজ হতে দেখা যায়নি।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নারায়ণপুর। যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা বিস্তারসহ নানা দিক থেকে নারায়ণপুর অঞ্চল এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে খেলাধুলায়। খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে না উঠায় এই অঞ্চল থেকে বিগত সময়ে কোনো খেলোয়াড় বেরিয়ে আসতে দেখা যায়নি। আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বেশ ক’টি জমজমাট ফুটবল খেলার আসর বসেছিল নারায়ণপুর পপুলার উচ্চ বিদ্যালয় এবং আশ্বিনপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। তারপর থেকে খেলার কোনো বড় আসর বসতে দেখা যায়নি।

নব্বইয়ের দশকের এক বর্ষা মৌসুমে উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নে ১৬ টিমের হা-ডু-ডু খেলার এক জমজমাট আসর বসেছিল। প্রায় দেড় মাসব্যাপী এই খেলায় এলাকার ক্রীড়ামোদীদের মাঝে প্রাণসঞ্চার করেছিল। যতদূর মনে পড়ে, ফাইনাল খেলাটি হয়েছিল মতলব দক্ষিণের নৌকা সমিতি এবং দাউদকান্দি উপজেলার কোনো একটি ক্রীড়া সংগঠনের নামে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর পৌরসভা, নায়েরগাঁও উত্তর, দক্ষিণ এবং খাদেরগাঁও ইউনিয়ন মতলব পূর্বাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এখানে কোনো ক্রীড়া সংগঠন গড়ে উঠেনি। সেজন্যে এখানে নেই খেলাধুলার আলাদা কোনো প্লাটফর্ম। যেসব খেলাধুলা হয়ে থাকে তা কেবল বিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী হয়। যার ফলে খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত ক্রীড়ানুরাগীরা।

নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক মো. কামরুল হাসান পাটোয়ারী ও শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, নারায়ণপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও কিশোরের দল প্রতিদিন বিকেলে নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠ, নারায়ণপুর পপুলার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, আশ্বিনপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, পয়ালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, কাশিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিজেদের মতো করে খেলাধুলা করে থাকে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখান থেকেও জাতীয় মানের খেলোয়াড় তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি এই প্রজন্ম মাদক থেকেও দূরে থাকবে।

নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক তৎকালীন আশ্বিনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, খেলাধুলার এখন কোনো পরিবেশ নেই। যুবকরা মোবাইল প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত। তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আশ্বিনপুরে দুটি জনপ্রিয় ক্রীড়া সংগঠন ছিলো। একটার নাম দোলনচাঁপা আরেকটার নাম চাঁপাকুঁড়ি। এই দুই সংগঠন বা ক্লাবের মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতা ছিলো একটা নেশার মতো। সে সময়কার নামকরা ফুটবলার ছিলো আশ্বিনপুরের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রধান। তিনি তখন ঢাকার তিতাস স্পোর্টিং ক্লাবে ফুটবল খেলতেন।

মো. সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী আরও বলেন, ১৯৯০ সালের পর এ সকল ক্রীড়া সংগঠন যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বলা চলে এরপর এলাকায় সেভাবে ক্রীড়া সংগঠকও তৈরি হয়নি।

এ ব্যাপারে নারায়ণপুর পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, মতলব দক্ষিণের পূর্বাঞ্চলে কোনো ক্রীড়া সংগঠন নেই। শুধু নেই বললেই শেষ হয় না, বলা চলে কোনো ক্রীড়া উদ্যোক্তাও নেই। যার ফলে মতলব পূর্বাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র নারায়ণপুরে কোনো ধরনের খেলাধুলার আসর বসতে দেখা যায় না। মোস্তফা কামাল আরও বলেন, মাঝে মধ্যে এক গ্রামের কিশোরদের সাথে অন্য গ্রামের কিশোর বা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নাম দিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা অথবা ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হতে দেখা যায়। সেটাও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বেশি দূর এগোতে পারে না। কিন্তু এর বাইরে হা-ডু-ডু, নৌকা বাইচ, ব্যাডমিন্টনসহ অন্যান্য যেসব খেলা রয়েছে, সেগুলো গত ২৫ বছরেও নারায়ণপুর অঞ্চলে হতে দেখা যায় নি। তিনি মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নারায়ণপুর এলাকাকে কেন্দ্র করে খেলাধুলার উন্নয়নে সরকারি- বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতি জোর দাবি জানান। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত গোলাম মোস্তফার নিউজগুলো স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে প্রকাশিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়