শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৩৫

লক্ষ্মীপুরে আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করছেন জামায়াত নেতা!

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)।।
লক্ষ্মীপুরে আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করছেন জামায়াত নেতা!

লক্ষ্মীপুর পৌরসভা থেকে ঠিকাদারকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল টার্মিনালের জন্যে। কিন্তু তিনি টোল আদায় করছেন আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে। ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যানপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে রসিদও। জেলা শহরের পৌরসভা এলাকায় নিয়মিতই দেখা যায় এ দৃশ্যের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদরের পৌর এলাকার উত্তর তেহমুনী, দক্ষিণ তেহমুনী, ঝুমুর এলাকা, মজু চৌধুরী হাট সড়ক ও সাবেক গোডাউন রোডে নিয়মিত টোল আদায় করা হচ্ছে। যদিও এসব এলাকার সড়ক থেকে টোল আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। টোল নেওয়ার কথা ছিলো লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের পাশে বাঞ্ছানগর এলাকায় অবস্থিত টার্মিনাল থেকে।

পৌর প্রশাসন সূত্র জানায়, টার্মিনাল এলাকায় টোল আদায়ের জন্যে প্রশাসন থেকে ২৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় ইজারা নেন আবদুল মতিন নামের জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা। তিনি জামায়াতে ইসলামীর জেলা শহরের যুব বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক। চলতি বছরের ১৭ মার্চ তিনি দরপত্র পান। পরে ১৩ এপ্রিল তার সঙ্গে পৌরসভা প্রশাসকের চুক্তি হয়। এ চুক্তিতে কোথায় থেকে টোল আদায় করা যাবে, কত টাকা নেওয়া হবে, তা উল্লেখ করা ছিলো। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত ফির বেশি টোল আদায় না করারও নির্দেশনা রয়েছে। তবে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।

টার্মিনাল ছাড়া সড়কেও প্রকাশ্যে টোল আদায় করা হচ্ছে। আবার ফি নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত হারের চেয়ে কয়েক গুণ। এ কারণে পরিবহন মালিকদের খরচ বেড়েছে। চালক-শ্রমিকেরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ট্রাকচালক আবুল কাশেম

বলেন, অবৈধ এ টোল আদায় নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলার যানবাহনের মালিক ও শ্রমিকেরা। ইতোমধ্যে তারা এ টোল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। জানতে চাইলে এসব কর্মসূচিতে থাকা ট্রাকচালক ফারুক হোসেন ও আবুল কাশেম বলেন, টার্মিনাল ছাড়া সড়কেও প্রকাশ্যে টোল আদায় হচ্ছে। আবার ফি নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত হারের চেয়ে কয়েক গুণ। এ কারণে পরিবহন মালিকদের খরচ বেড়েছে। চালক-শ্রমিকেরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা থেকে জেলা সদর দক্ষিণ তেমুহনি এলাকায় আসা ট্রাকচালক স্বপন মিয়া বলেন, পথে তিনটি পৌরসভা পার হলেও কোথাও টোল দিতে হয়নি। লক্ষ্মীপুর শহরে পৌর এলাকায় ঝুমুর এলাকায় তাকে ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। ট্রাকচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সড়কে দাঁড় করিয়ে জোর করে টোল নেন। দিনে একাধিকবার টাকা দিতে হয়।’ আরেক চালক আবদুস সোবহান বলেন, ‘টার্মিনাল ছাড়া টোল নেওয়া নিষেধ, সেটা সবাই জানলেও লক্ষ্মীপুরে ঢুকলেই টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমরা এটির অবসান চাই।’

অবৈধ এ টোল আদায়ের ইজারাদার ও জামায়াত নেতা আবদুল মতিন দাবি করেন, ইজারা তার নামে নেওয়া থাকলেও তিনি এ কাজের সাথে আর যুক্ত নন। তার কয়েকজন অংশীদার এখন টোল আদায় করেন। দল থেকে নিষেধ করায় তিনি আর টোল নেন না। স্থানীয় বিএনপির নেতা লোকমান হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি ইজারা নিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে আরও বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৫০ টাকা টোল নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। এসব কারণে কাগজে তার নাম থাকলেও তিনি সরে এসেছেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপি নেতা (সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক) লোকমান হোসেন বলেন, ইজারার জন্যে ১৮ জন দরপত্র নিয়েছিলেন। তবে আবদুল মতিনই ইজারা পেয়েছেন। এখন তার লোকজনই সড়ক থেকে টোল আদায় করছেন। এর সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নেই।

এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, টার্মিনালের বাইরে ও অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ তিনি শুনেছেন। তবে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানের বাইরে বা বেশি টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক বলেছেন, টোল আদায়কারীদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে টোল আদায় করলে মামলা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়