প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫, ১৯:১৯
ডা. জোবাইদা রহমান: ইতিহাসের নীরব নির্মাতা এক মহীয়সী নারীর জাগরণ

|আরো খবর
“আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য আমার পৈত্রিক সম্পত্তিও বিক্রি করবো”
এই এক লাইনে লুকিয়ে আছে একটি জাতির স্বপ্নের সম্ভাব্য নেত্রীর আদর্শ ও আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি।
এই বাক্যটি কেবল এক স্ত্রীর আবেগপূর্ণ প্রতিজ্ঞা নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধরনের নেতৃত্বের সূচনা। তিনি প্রচারবিমুখ, তবে নির্ভীক; তিনি উচ্চশিক্ষিত, তবে বিনয়ী; তিনি নারী, কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক বৃত্তকে চ্যালেঞ্জ জানান মেধা, সম্মান ও ঐতিহ্য দিয়ে। তিনি ডা. জোবাইদা রহমান—একটি নাম, যা রাজনৈতিক প্রচারের আলোয় নয়, আত্মত্যাগ আর যোগ্যতার দীপ্তি দিয়ে উদ্ভাসিত।
রাজনীতি নয়, দায়বদ্ধতা—এই পার্থক্যই তাঁকে আলাদা করে তোলে
আজ যখন চারপাশে ক্ষমতার জন্য হাহাকার, দলীয় টিকিটের জন্য দর কষাকষি, তখন ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে নাম লেখাননি। তবু তাঁর মেধা, ঐতিহ্য, মানবিকতা আর সাহস তাঁকে করে তুলেছে আগামী দিনের নেতৃত্বের ‘আনঅফিশিয়াল ফ্রন্টরানার’। তিনি রাজনীতি করেননি, কিন্তু সংকটে দায়িত্ব এড়িয়ে যাননি—এটাই একজন প্রকৃত নেতার গুণ।
তাঁর এই আত্মনিয়োজিত অবস্থান অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। এই ভূমিকা তাঁকে কেবল রাজনীতির পাতায় নয়, জনগণের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে। আজকের বাংলাদেশে যেখানে জনসম্পৃক্ততা ফুরিয়ে আসছে, সেখানে এক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছেন নিরবতাই শক্তি—জোবাইদা রহমান।
একান্ত জীবনেও দৃশ্যমান রাজনীতির ছায়া: তারেক রহমানের পাশে এক অবিচল চেতনা
২০০৭ সালের দুর্বিষহ রাত, গ্রেপ্তারের পর জেলে নেওয়া হচ্ছে তারেক রহমানকে, সারা দেশের মিডিয়া ও প্রশাসন আতঙ্কে ভরা। ঠিক তখন এক নির্ভীক স্বর:
“আমার স্বামীর চিকিৎসার খরচ সরকার না দিলে, আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করবো।”এই উচ্চারণ ছিল সেই সময়কার সমস্ত রাজনৈতিক স্তব্ধতা ভেঙে দেওয়া এক বিস্ফোরণ। সেই সময়ে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় ছাড়িয়ে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন একজন জাতির নেত্রী হওয়ার নীরব প্রতিশ্রুতি।
তাঁর ব্যক্তিত্ব ও অবস্থান রাজনীতির প্রথাগত ব্যাকরণ ভেঙে দেয়। নেত্রী হিসেবে তিনি কখনো জনসভায় বক্তব্য রাখেননি, কোনো কেন্দ্রীয় সভায় সভাপতিত্বও করেননি। কিন্তু তাঁর একটি বাক্য, একটি নির্ভীক সিদ্ধান্ত—সবকিছু ছাপিয়ে মানুষের মনে তাঁকে একজন অঘোষিত নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
যার রক্তেই নেতৃত্ব: তিন প্রজন্মের রক্তস্রোতে দেশপ্রেম ও প্রজ্ঞার স্রোত
ডা. জোবাইদা রহমান কোনো ‘পলিটিক্যাল ব্র্যান্ড’ দিয়ে তৈরি নেত্রী নন। তিনি জন্মেছেন নেতৃত্বের রক্তে।
- দাদা ব্যারিস্টার আহমদ আলী খান, নিখিল ভারত আইন পরিষদের সদস্য, আসাম কংগ্রেস সভাপতি
- প্রপিতামহ ডা. আজদার আলী খান, বিহার ও আসাম মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা
- চাচা জেনারেল এম.এ.জি. ওসমানী, স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক
- পিতা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী, নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান
- মাতা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সমাজসেবী
এই বংশধারা রাজনীতির জন্য নয়, জাতি নির্মাণের জন্য জন্মায়। তাঁর পারিবারিক শিকড় এবং প্রজ্ঞার উত্তরাধিকার তাঁকে রাজনীতির প্রচলিত নেতৃত্বের চেয়ে আলাদা করে তোলে।
মেধায় অগ্রণী, নেতৃত্বে সম্ভাব্য: এক নারী, যার রাজনৈতিক শিক্ষা এসেছে জীবনের বাস্তবতা থেকে
- ১৯৯৫ সালের বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান
- ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে মেডিসিনে গোল্ড মেডেল সহ এমএসসি
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের গর্বিত প্রতিনিধি
পরিবারকে আগলে রাখা এই নারীর কাছে, একটি জাতিকেও আগলে রাখতে পারার দক্ষতা আছে
যখন স্বামী বন্দী, বিচারহীন হেনস্তা চলছে, দেশে ফিরতে পারছেন না; যখন মেয়ে জাইমার শিক্ষাজীবনকে আগলে রাখতে হয়—তখন এই নারী একাই টিকিয়ে রেখেছেন পরিবার ও মর্যাদা। ক্ষমতা না থাকলেও, ক্ষমতার চেয়ে বড় কর্তব্য পালন করেছেন।
রাজনৈতিক মঞ্চে পা না রেখেও দলের জন্য ‘আনঅফিশিয়াল গার্ডিয়ান’
বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানেন—ডা. জোবাইদা রহমান হয়তো আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে আসেননি, কিন্তু তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত, পারিবারিক রক্ষণাবেক্ষণ, এবং দলের আভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষায় তিনি মূর্তিমান আশ্রয়।
তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা: রাজনীতি নয়, আদর্শই তাঁর পরিচয়
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীরা আজ যখন রাজনীতিতে নারীদের প্রকৃত নেতৃত্ব খুঁজছে, তখন ডা. জোবাইদা রহমান হঠাৎ করেই তাদের স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠেন।
একজন 'রোল মডেল নেত্রী'-এর প্রোফাইল যেভাবে তৈরি হয়, তাঁর জীবন ঠিক তেমনই সাজানো
- আন্তর্জাতিক শিক্ষা
- পারিবারিক রুচি ও নৈতিক বোধ
- রাজনীতির দুঃসময়ে সাহসিকতা
- জনসম্পৃক্ততার প্রতি দায়িত্ববোধ
- নৈতিক ঋজুতা ও ব্যক্তিগত ত্যাগ
বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে তাঁর আগমন কি সময়ের দাবি?
আজ যখন দেশ একটি বিশ্বাসযোগ্য, শিক্ষিত, সুশৃঙ্খল নেতৃত্বের খোঁজে, বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে একটি প্রশ্নই ঘোরে—
ডা. জোবাইদা রহমান কি আমাদের ভবিষ্যৎ নেত্রী হবেন?রাজনীতির কোলাহলে নীরব একজন কাণ্ডারী
ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতি করেন না, কিন্তু রাজনীতি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি প্রচারে আসেন না, কিন্তু তাঁর চরণধ্বনি শোনা যায় মানুষের বিশ্বাসে। তিনি দাবী করেন না, কিন্তু মানুষ তাঁকে স্বপ্নে দেখে।
একটি জাতি যখন ক্লান্ত, বিভ্রান্ত, নেতৃত্বহীন, তখন ইতিহাস সবসময় একজন নীরব, স্থির, যোগ্য নারীকে সামনে আনে। হয়তো সেই ‘নারী ইতিহাসের’ নতুন অধ্যায় রচনার সময় ঘনিয়ে এসেছে।
"ডা. জোবাইদা রহমান"
প্রতিবেদন: মো. জাকির হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা বিএনপি
ডিসিকে/এমজেডএইচ