সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৮

শেখ হাসিনা-রেহানার বিলাসবহুল ৪ বাগানবাড়ি নিয়ে তোলপাড়! দুদকের অনুসন্ধান শুরু

ডুপ্লেক্স ভবন, শানবাঁধানো ঘাট, সুইমিংপুল— বিলাসের আড়ালে কী লুকিয়ে আছে?

প্রতিবেদন: মো. জাকির হোসেন
ডুপ্লেক্স ভবন, শানবাঁধানো ঘাট, সুইমিংপুল— বিলাসের আড়ালে কী লুকিয়ে আছে?
ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুরে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের নামে থাকা চারটি বিলাসবহুল বাগানবাড়ি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। সরকার পতনের পরপরই এসব সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গাজীপুর জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে দুদক সম্পদগুলোর বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে এবং বর্তমানে তদন্ত চলছে।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চারটি বাগানবাড়ির সন্ধান, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি বহু বছর ধরে অবৈধভাবে দখলে ছিল এবং বর্তমানে কিছু পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সম্পদগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে রক্ষিত ছিল।

বাগানবাড়িগুলোর সন্ধান ও বিলাসবহুল কাঠামো

১. টিউলিপ’স টেরিটরি (কানাইয়া, গাজীপুর)

✅ মালিক: শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক

✅ জমির পরিমাণ: ৮ বিঘা

✅ অবস্থান: গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায়

✅ বৈশিষ্ট্য:

একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ভবন।

শানবাঁধানো ঘাট ও বিশাল পুকুর।

গ্রামীণ পরিবেশে ঘেরা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

ঘটনা:

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং সম্পত্তির মালিকরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

২. তেলিরচালা বাগানবাড়ি (শিল্পাঞ্চল, গাজীপুর)

✅ মালিক: শেখ হাসিনা পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠজন

✅ জমির পরিমাণ: প্রায় ১০ বিঘা

✅ অবস্থান: গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল এলাকায়

✅ বৈশিষ্ট্য:

ডুপ্লেক্স ভবন ও সুইমিংপুল

পুকুর ও বিশাল খোলা জায়গা

উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা

ঘটনা:

৫ আগস্ট এই বাড়িতেও হামলা হয় ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাড়িটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং জনশূন্য।

৩. ফাওকাল বাগানবাড়ি (গাজীপুর)

✅ মালিক: তারিক আহমেদ সিদ্দিক (শেখ রেহানার দেবর)

✅ জমির পরিমাণ: প্রায় ৭ বিঘা

✅ অবস্থান: ফাওকাল এলাকায়

✅ বৈশিষ্ট্য:

বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ভবন ও বিশাল পুকুর

প্রচুর গাছপালা ও নিরাপত্তার জন্য উচ্চ দেয়াল।

ঘটনা:

৫ আগস্ট এখানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এটি শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গোপন বিশ্রামকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

৪. বাগানবিলাস (বাঙ্গালগাছ, গাজীপুর)

✅ মালিক: শেখ হাসিনা পরিবারের নামে নিবন্ধিত

✅ জমির পরিমাণ: প্রায় ২৫ বিঘা

✅ অবস্থান: গাজীপুরের বাঙ্গালগাছ এলাকায়

✅ বৈশিষ্ট্য: শত শত বিরল প্রজাতির গাছপালা।

✅ পুকুর ও রিসোর্ট ধরনের অবকাঠামো।

✅ নিরাপত্তার জন্য উঁচু দেয়াল ও সশস্ত্র প্রহরী

ঘটনা:

বাড়িটি ৫ আগস্টের পর পরিত্যক্ত হয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, এটি প্রায়শই শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের অবকাশযাপনের জন্য ব্যবহৃত হতো।

দুদকের অনুসন্ধান ও দুর্নীতির অভিযোগ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসনকে সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

➡️ দুদকের তদন্তে ৯টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে।

➡️ শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

➡️ ঢাকার পূর্বাচলে ৬০ বিঘা জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

➡️ তিনটি বিমানবন্দরের চার প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

টিআইবি’র প্রতিক্রিয়া

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শেখ হাসিনা হলফনামায় কিছু জমির তথ্য দিয়েছেন, কিন্তু শেখ রেহানা ও তাঁদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্পদ কীভাবে এসেছে, সেটি এখনো অজানা। এ বিষয়ে আরও গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন।”

গাজীপুরের চারটি বিলাসবহুল বাগানবাড়ি এখন সরকারের তদন্তের আওতায় রয়েছে। একসময় এই সম্পত্তিগুলো প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের ব্যক্তিগত অবকাশ যাপনের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন সেগুলো পরিত্যক্ত ও তদন্তাধীন।

শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি তদন্তের ফলাফল কী হবে? এটি দেশের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। দুদক এবং প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে—এই বিলাসবহুল সম্পত্তিগুলো অবৈধ বলে প্রমাণিত হবে কিনা, এবং যারা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছে, তারা আদৌ বিচারের আওতায় আসবে কিনা।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়