প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:১৮
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ওপর 'খবরদারি' করবেন না : প্রধানমন্ত্রী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নানা সমীকরণে এমপি মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারা দলের মনোনয়নে এমপি হন। এমপি হয়েই দলকে তার ইচ্ছামতো পরিচালনায় মরিয়া হয়ে ওঠেন কেউ কেউ। তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের ওপর ‘খবরদারি’ করবেন না। এটা চলবে না। দল চলবে নিজস্ব গতিতে। নিজস্ব বলয় ভারী করতে দলের ভিতরে উপদল তৈরি করবেন না।
দীর্ঘ এক বছর পর গতকাল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এমপিদের এমন হুঁশিয়ারি দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠক টানা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে অর্ধশত নেতা অংশ নেন।
সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তৃণমূলে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর এমপিদের কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবে ক্ষুব্ধ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের দূরে ঠেলে দেন। আবার সব কর্তৃত্ব নিতে কেউ কেউ উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান। সবকিছু এমপিদের নিতে হবে কেন? দলের ওপর এমপিদের এমন খবরদারি চলবে না। এমপি দলকে সহযোগিতা করবেন। কোনো বাড়াবাড়ি বরদাশত করা হবে না। কে কোথায় কী করছেন, আমার কাছে সব তথ্য আছে। সে বিবেচনায় আগামীতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বৈঠকসূত্র জানান, কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্টে কমপক্ষে ২০-২৫টি জেলায় এমপিদের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দূরত্ব, কোন্দল-উপদল গঠন করার প্রসঙ্গ উঠে আসে। সম্প্রতি তৃণমূল থেকে আসা বেশ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সভানেত্রী বিষয়টি নিয়ে নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এমপিদের আলাদা বলয় তৈরি না করার নির্দেশ দেন। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে। দলীয় সভানেত্রীর কাছে এসব তথ্য আছে বলে তিনি জানান। অনেক এমপির বিরুদ্ধে এলাকার নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
বৈঠকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির দ্বন্দ্ব, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপির একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী কোন্দল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাকে দ্রত সম্মেলনের তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
দলের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্ট পেশ করেন। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক দেশের বাইরে থাকায় এ বিভাগের রিপোর্ট পেশ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
সভার সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক সচরাচর চার মাস বা দুই মাস পর করতাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেগুলো সময়মতো করতে পারিনি। এখন করোনা কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া আমি গতবার জাতিসংঘের অধিবেশনে যেতে পারিনি। এবার যাচ্ছি। তাই মনে করলাম একটা সভা করি। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, ১৫ আগস্টে নিহতসহ আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। রীতি অনুযায়ী এরপর সভায় শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।