প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বক্তাগণ
আওয়ামী লীগের পদে থেকে যারা নৌকার বিরুদ্ধে ছিলো দলে তাদের স্থান হতে পারে না
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আয়োজনে গতকাল ১০ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ ইউছুফ গাজী।
চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক অজয় কুমার ভৌমিক, উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডঃ রণজিত রায় চৌধুরী (পিপি), প্রচার সম্পাদক হাসান ইমাম বাদশা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম সালাউদ্দিন, মধুসূদন পোদ্দার, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য অ্যাডঃ জাফর ইকবাল মুন্না, পৌর আওয়ামী লীগ সদস্য অ্যাডঃ সাইফুদ্দিন বাবু, জেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, ঝন্টু দাস, জেলা কৃষক লীগের সদস্য সচিব আঃ হান্নান সবুজ, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র অ্যাডঃ হেলাল হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মোর্শেদ জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডঃ হুমায়ুন কবির সুমন প্রমুখ।
বক্তাগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা তুলে ধরে বলেন, বাঙালি জাতির জীবনে আজকের এদিনটি একটি স্মরণীয় দিন। আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যেদিন স্বাধীনতা লাভ করি, সেদিনও আমাদের প্রিয় নেতা বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি জেলে কারাবরণ করছিলেন। প্রিয় নেতা জেলে থাকার কারণে বাঙালি জাতি সেদিন স্বাধীনতার আনন্দ তেমনভাবে অনুভব করতে পারেনি। বাংলার স্বাধীনতা আমরা সেদিনই অনুভব করেছিলাম যেদিন বাংলার লৌহমানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে বীরের মতো পদার্পণ করেন। সেদিন ঢাকার রাজপথ ছিলো লোকে লোকারণ্য। সেদিন ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লেগেছিলো প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো। সকলেরই লক্ষ্য ছিলো বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাংলার রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখে বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ সেদিন ঘরে ফিরেছিলেন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর আনন্দ নিয়ে। আজ সেই মহান নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। আজকের এইদিনে আমরা তাঁকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা পারেননি। মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন দেশটাকে গড়ে তুলতে। কিন্তু পাকিস্তানী প্রেতাত্মা এই দেশের কুলাঙ্গাররা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা চেয়েছিলো দেশটাকে নেতৃত্বশূন্য করে দিতে। কিন্তু তারা তা পারেনি। তাঁর সুযোগ্য সন্তান জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশটাকে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। পিতার আদর্শ পূরণে সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছেন। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকেই নিরলসভাবে কাজ করতে হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভা একসময়ে সদ্য সম্পন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার্যক্রমের পর্যালোচনা সভায় পরিণত হয়। অনেক নেতাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের পদণ্ডপদবিধারী যারা নির্বাচন নিয়ে নৌকার সাথে ষড়যন্ত্র করেছেন, নৌকার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন, দলে তাদের কোনো স্থান হতে পারে না। তারা যদি কোথাও সভা-সমাবেশ করেন তাহলে আমরা তা প্রতিহত করবো। তারা পদণ্ডপদবিধারী চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবি জানান।
তারা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বড় পদে থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা নিবেন আর নির্বাচন আসলেই স্বমহিমায় নৌকার বিরোধিতা করবেন, নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করবেন, নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন তা হতে দেয়া যাবে না।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতা-কর্মীরা এবার চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভাড়া করা লোক দিয়ে রাজনীতি হয় না। ভাড়া করা লোক দিয়ে করা ষড়যন্ত্র টেকসই হয় না। ডাঃ দীপু মনির বিরুদ্ধে, নৌকার বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করেছেন তারা এখন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।
বক্তারা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ২৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নৌকার প্রার্থীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিত না থাকায় ভীষণ ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পর্দার আড়ালে ও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রকাশ্যে চাঁদপুরে নৌকার প্রার্থী ডাঃ দীপু মনির বিরুদ্ধে হায়ারিং প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন করেছেন। তারা ভেবেছিলো, মানুষ বোকা, কিছুই বুঝে না। মানুষ ঠিকই বুঝেছে দলের পদণ্ডপদবি, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দলের প্রার্থীর হয়ে কাজ না করে, কেনো ভাড়াটিয়া প্রার্থীর হয়ে কাজ করা হলো তা আওয়ামী নেতা-কর্মীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। তারা বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার বিজয় চেয়েছেন, নৌকা প্রতীকের হয়ে কাজ করার জন্যে নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন। সেখানে আপনারা কোন্ স্বার্থে ভাড়াটিয়া প্রার্থীর হয়ে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন তা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছে জবাব দিতে হবে। তারা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদকের কাছে এর জবাব দাবি করেন।
চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভাকে কেন্দ্র করে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সভাস্থলে যোগ দেন।