শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২১, ১০:৩০

২১ আগস্টের বর্বরোচিত হামলা কৃষ্ণ পাটিকরকে আজও তাড়া করে

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন
২১ আগস্টের বর্বরোচিত হামলা কৃষ্ণ পাটিকরকে আজও তাড়া করে

২০০৪ সালের ২১ আগস্টে হামলায় আহত চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কৃষ্ণ পাটিকরের শরীরে বিদ্ধ হওয়ার স্পিন্টারের দাগ আজও মুছেনি। প্রতি বছর ২১ আগস্ট আসলেই মনে পড়ে তাঁর ওই দিনের সেই নৃশংসতার ভয়াবহ দৃশ্য।

গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ প্রতিনিধির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে কচুয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পাটিকর বাড়ির বাসিন্দা কৃষ্ণ পাটিকর বলেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সমাবেশের ডাক দিয়ে ছিলেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সেইদিন কচুয়া থেকে আমি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবীব প্রানজল, দেবীপুর গ্রামের মিজান এবং আমাদের গ্রামের আব্দুল গফুর সহ চারজন ওই সমাবেশে যোগ দেই। সমাবেশে ট্রাকের উপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চের খুব কাছেই ছিলাম আমরা। আমাদের নেতা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে মঞ্চের কাছ থেকে সরে আসি। এর ফাঁকে প্রানজল বলে ‘আমি একটু পানি খেয়ে আসি’ তারপর আর তাকে খুঁজে পাইনি।

নেত্রীর বক্তব্য শুরু হওয়ার পর মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনলাম। শব্দের সাথে সাথে দেখলাম আমাদের নেতা-কর্মীরা মাটিতে পড়ে আছে। আমি মনে করলাম, তারা ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার শরীরে উষ্ণ উষ্ণ গরম লাগছে। শরীরে হাত দিয়ে দেখি তাজা রক্ত ঝড়ছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তখন আমিও সবার মত ছুটাছুটি করা শুরু করলাম। আমার নেতা ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে দেখি তিনি ঘুরপাক খাচ্ছেন। মনে হয়েছে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছেন। তখনও আমার শরীর থেকে অঝোরে রক্ত ঝড়ছে। নিজের চিন্তা না করে তাকে বাঁচানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠি। মুহুর্তরে মধ্যেই দেখলাম পাশ দিয়ে একটি ভ্যান গাড়ি যাচ্ছে। গাড়িটি থামিয়ে আমার নেতাকে বাঁচাও বলে নেতাকে ভ্যান গাড়িতে উঠিয়ে পান্থপথের দিকে পাঠিয়ে দেই।

আহত অবস্থায় আমি কাতরাতে কাতরাতে সামনে এগিয়ে দেখি নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িটি পিরামিনিয়া মাকের্টের কাছাকাছি। নেত্রী গাড়িতে উঠার সাথে সাথে অপরদিক থেকে কেবা কাহারা নেত্রীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাকে বেষ্টনী দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়। নিজের জীবন বাঁচাতে ঘটনাস্থলে আমার পাশ্ববর্তী গ্রামের মক্কা ট্র্যার্ভেলসের মালিক জামালের স্মরনাপন্ন হই। ট্রার্ভেলসের দরজার সামনে পৌছে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি জামালের পার্টনার আমার রক্তাক্ত কাপড় পরিবর্তন করে দেয়। তারা আমাকে মনোয়ারা হসপিটালে নিয়ে যায়। ওইখানে গিয়ে দেখি প্রানজল ওই হসপিটালে। প্রানজল আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। ওই সময় হসপিটালে অনেক রোগী। করো হাত নেই, কারো পা নেই। পরে প্রানজল ডাক্তারদের ডেকে এনে আমার পায়ের এবং কোমর থেকে স্পিন্টার বের করে।

যদিও সেই সময়ে আমি সাময়িকভাবে সুস্থ হই, কিন্তু বিগত ১৭ বছর ধরে এ যন্ত্রণা সঙ্গে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন কাটছে আমার। শরীরে বিদ্ধ হওয়া সেই স্পিন্টারের দাগ আজও মুছে যায়নি। ২১ আগস্টের বর্বরোচিত হামলার বিভৎসতা আজও তাড়া করে ফিরছে কৃষ্ণা পাটিকরকে। কিন্তু ইহা বড়ই মর্মান্তিক যে, ২১শে আগস্টের পর এক এক করে কৃষ্ণা পাটিকরের জীবন থেকে ১৭ টি বছর কেটে যাচ্ছে অথচ আজও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার খোঁজ-খবর নেওয়া বা কোন প্রকার সহায়তা প্রদান করা হয়নি। কর্ম করতে না পেরে বর্তমানে কৃষ্ণা স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাঁর পাশে দাড়াবার যেন কেউ নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়