রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
  •   এক বছরের মধ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা
  •   হাজীগঞ্জের সকল মৃত্যুর খবরই গুজব!
  •   দিনমজুরকে জবাই করে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
  •   অবশেষে চাঁসক সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাছানকে বদলি

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কার এখন সময়ের দাবি

মোঃ কায়ছার আলী
রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কার এখন সময়ের দাবি

সরকার পরিবর্তনশীল, কিন্তু রাষ্ট্র অপরিবর্তনশীল। সরকার একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে। তবে সরকারের এমন কোনো কাজ বা কর্ম করা উচিত নয়, যার কারণে রাষ্ট্র হুমকির মধ্যে পড়ে। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সুবিবেচনা করে আমাদের রাষ্ট্রীয় পলিসি গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেশীসহ সকল দেশকে আমাদের আস্থায় রাখতে হবে। দলীয় রাজনীতি আর দেশের স্বার্থে রাজনীতি এক নয়। আমাদের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল প্রতিবেশী দেশকে আস্থায় রাখতে চান না। ফলে দেখা যায় ঐ প্রতিবেশী দেশটি কোনো কোনো দলের সাথে তখন শতভাগ সখ্যতা গড়ে তোলেন। কেন আমরা কিছু দলকে প্রতিবেশী দেশের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দেবো--এটা গভীরভাবে ভাবতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে। পলিটিশিয়ান আর স্টেটসম্যান এক নয়। পলিটিসিয়ানরা ভাবেন এক নির্বাচন থেকে আরেক নির্বাচন পর্যন্ত, অন্যদিকে স্টেটসম্যানরা ভাবেন শত বছর পর কী হবে বা কী হতে পারে? দেশ চালাবেন রাজনীতিবিদরা সন্দেহ নেই। তবে বুদ্ধিদীপ্ত, রাষ্ট্রচিন্তক বা দার্শনিকদের কিছু কিছু পরামর্শ বা আইডিয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হলো রাষ্ট্র সংস্কার বা মেরামত। ২০০৭ সালে সংস্কার শব্দটি নিয়ে বড়ো বড়ো কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা কিঞ্চিৎ ভূমিকা রাখতে চাইলে তারা তখন দলীয় প্রধানের চক্ষুশূল হয়ে উঠেন এবং একপর্যায়ে সংস্কারবাদীরা মাইনাস হয়ে পড়েন। ৩৬ দিনের একটানা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রক্তস্নাত বিপ্লবে গঠিত হয়েছে বিপ্লবী বা অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। এই সরকার দেশে-বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত। রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে তারা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে দেশ সংস্কারের জন্যে ৬ জন বিশিষ্টজনকে প্রধান করে ৬ টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার। ধাপে ধাপে হয়তো আরও সংস্কার কমিশন গঠিত হতে পারে।

বিশ্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এক এক দেশে এক এক রকম। কোথাও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, কোথাও প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন, কোথাও কিছু আসন সামরিক বাহিনীর জন্যে নির্ধারিত, কোথাও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। আমাদের দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চলমান। সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যনীতি বজায় রাখা উচিত। স্বাধীন বিচার বিভাগের বিচারপতিগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগের পূর্বে তাদেরকে সম্ভব হলে সংসদ বা মিডিয়ার মাধ্যমে উন্মুক্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা বা সার্চ কমিটির মাধ্যমে অতীতের কোনো অনৈতিক বা অসদাচরণ কর্মকাণ্ড হয়েছে কি না তা যাচাই বাছাই করে তাদের শপথ পাঠ করাতে হবে। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভের পরে বিচারপতিগণ কোনো দল বা নেতার পক্ষে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রশংসা বা নিন্দাসূচক কোনো লিখা লিখতে পারবেন না। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে আরো ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। আইন বিভাগের সদস্যগণ আইনজ্ঞ বা আইন পাস হলে অগ্রাধিকার পাবেন। তারা শুধুমাত্র আইন প্রণয়নে নিয়োজিত থাকবেন। কোনো প্রকার আর্থিক উন্নয়নে নিজেদের জড়াতে পারবেন না।স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন, স্থানীয় সরকারের বাজেটে পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সরকারের চাহিদা যাচাই-বাছাই করে শাসন বিভাগের মাধ্যমে তা বরাদ্দ করবেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো দলীয় মার্কা বা প্রতীক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। সকলেই একটি মাত্র আসনে নির্বাচন করবেন। যদি কোনো প্রার্থী নিজ আসনে জয়ী হতে না পারেন তাহলে তিনি সরকার প্রধান হতে পারবেন না। কেননা তিনি ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয় নন। তাহলে কেন তিনি সরকার প্রধান হবেন? দলের স্বার্থে অন্যকে তাকেই সরকার প্রধানের সুযোগ দিতে হবে। সরকার প্রধান হওয়ার পর তাকে নিজ দলের দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। দল, সরকার এবং সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারবেন না। দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি (যে কোনো একটি পদে) হতে পারবেন না। কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে বা আসন শূন্য হলে ঐ আসনে দলীয় ভাবে সংসদ সদস্য পূরণ করবেন। যদি নির্দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর আসন শূন্য হয়, তবে রাষ্ট্রপতি যে কাউকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। তবে উপজাতি বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হলে সেটা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার বিষয়। আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে উপ-নির্বাচনের ইতিহাস খুব একটা ভালো নয়, আবার অর্থেরও ব্যয় আছে। টেকনোক্রেট কোটায় কেবিনেটে ৫ : ১ করা যায় কি?

সরকারিভাবে কোনো নেতার জন্মদিন বা মৃত্যুদিবস পালন না করে দলীয়ভাবে পালনের জন্যে অনুরোধ করছি। সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আইন শৃঙ্খলার কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কেননা পুলিশের মতো যদি বিজিবির হাতে ছাত্র-জনতা খুন হতেন এবং তারা পুলিশের মতো কর্মবিরতি পালন করতেন, তাহলে সীমান্তে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতো। ৭০ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করে দলের বিপক্ষে ভোট বা কথা বলার সুযোগ এমপিদের দিতে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতার প্রতিফলনে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার স্থায়ী রূপ দিতে হবে। স্পিকারকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেই। দেশের প্রতিটি নাগরিককে প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। কোনো নাগরিক যদি আয়-ব্যয়ের অসত্য তথ্য প্রদান করে, তবে তার সম্পদ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অর্থ পাচার রোধে টাস্কফোর্স গঠন, স্বাধীন দুদক, জনবান্ধব পুলিশ কমিশন, ইসি সহ সকল সাংবিধানিক পদ সমূহে নির্দলীয় নিরপেক্ষ যোগ্য ও সৎ মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি অপ্রয়োজনীয়। তারা নিজস্ব ব্যানারে থাকতে পারবে, কোনো দলীয় ব্যানারে নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিটি আসনে দলীয় মনোনয়নের পূর্বে তাদের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা কর্তব্য। এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা অবশ্য তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিগত ১৫/১৬ বছরের ইতিহাস এমন দুর্ভাগ্যজনকভাবে চলে গিয়েছিল যে, দুঃখের সাথে লিখছি 'সাবেক তিনজন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেও অবমাননার অভিযোগ রয়েছে। অবমাননা বলতে আইনগত কর্তৃত্ব বহিভূর্তভাবে রায় দেওয়ার অভিযোগ। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছরের চিরতরুণ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের ভাষণের সবটুকুই চমৎকার। তিনি বলেন " আমরা সংস্কার চাই। আমাদের একান্ত অনুরোধ, আমাদের ওপর যে সংস্কারের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসংগে সংস্কার করবো। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন।" আমি অতি সাধারণ এক নাগরিক। আমার মনের ভাবনাগুলো লিখে শেয়ার করতেই পারি, তাই লিখেছি। আমাদের সবাইকে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ এখনই করতে হবে। পরিবার, প্রিয়জন বা সন্তান হারানোর ঐ আহত নিহতদের নিজেদের আপনজন ভেবে ছোটখাট মতভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশপ্রেম চিরতরে অম্লান আর অটুট থাকুক, যেন আজীবন দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা বিপ্লবের চেতনা হারিয়ে না যায়। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ হোক সবার জীবন ও মরণের বাংলাদেশ। কার্যকর সংস্কারের সাথে সাথেই এগিয়ে আসুক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা।

লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, ০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, ০১৮১৮-২৩০৯৭০।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়