মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

প্রাথমিক শিক্ষা, অভিভাবকদের চিন্তা-ভাবনা ও আমাদের ভবিষ্যৎ

মোঃ নাছির উদ্দিন খান
প্রাথমিক শিক্ষা, অভিভাবকদের চিন্তা-ভাবনা ও আমাদের ভবিষ্যৎ

শিশু জন্মগ্রহণের পর প্রথম শিক্ষা তার পরিবার থেকে পেয়ে থাকে। যদি স্পষ্ট করে বলতে হয় তবে তার অধিকাংশ পেয়ে থাকে তার মায়ের কাছ থেকে। মা সুশিক্ষিত কিংবা স্বল্প শিক্ষিত যা-ই হোক না কেন, মা হচ্ছেন শিশুর জীবনের সেরা শিক্ষক। অ, আ বুলি শিশু তার মায়ের কাছ থেকেই শেখে। এ শিক্ষা পৃথিবীর কোনো প্রতিষ্ঠান দেয় না, দিতে পারে না। তাই মা-ই শিশুর প্রথম এবং সেরা শিক্ষক।

একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে স্কুলের কর্মদিবসে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে প্রতি কর্মদিবসেই কথা হয়, দেখা হয়। কিন্তু অত্যন্ত বেদনা নিয়ে বলতে হয়, খুব কম অভিভাবকই দেখেছি, যিনি তার সন্তানের পড়াশোনার খবর নিয়েছেন। বিদ্যালয়ে যতজন অভিভাবক ভিড় জমান তার অধিকাংশই শিক্ষার্থীকে বাড়ি নিয়ে যাবেন বলেই আসেন। অনেকে আছেন বিদ্যালয়ে দিতে এসে আর বাড়ি যান না, অপেক্ষা করেন ছুটির, বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় কিংবা বিদ্যালয়ের আশপাশেই থাকেন। এটা খুবই আশার আলো দেখায় আমাদের। ভাবি, ইশ! কত সচেতন অভিভাবক।

আবার অনেক অভিভাবক এসে দিনের পর দিন জ্ঞান দিতেও ভুল করেন না। তখন কবি সুনির্মল বসু’র কবিতার দু চরণের কথাই শুধু ভাবি, ‘বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র।’ এতেও যদি অভিভাবক মহল খুশি থাকেন, সচেতন থাকেন তাহলে এতে দোষের কিছু দেখছি না। কিন্তু যারপরনাই হতাশ হই তখন, যখন দেখি অভিভাবক দিনের পর দিন আসা যাওয়ার মাঝে নিজের সন্তানের লেখাপড়ার ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন না বরং উদাসীন।

অনেক অভিভাবককে কল দিয়েও বিদ্যালয়ে হাজির করা সম্ভব হয় না। এ বিড়ম্বনার কথা না-ই বা বললাম। হোম ভিজিট করতে বাড়িতে গেলে কেউ কেউ সন্তানের শিক্ষক হিসেবে যতটুকু সম্মান আশা করি তার সিকি আনাও করেন না। একবার বলেনও না, স্যার একটু বসেন। তবে এমন অভিভাবকের সংখ্যা খুবই সামান্য। কেউ কেউ তো আপ্যায়ন এমন করেন, যা দেখে আবেগে আপ্লুত হই আর ভাবি ‘শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার’। এটাও ভাবি, উনি নিজের সন্তানের প্রতি নিশ্চয়ই আরো বেশি যত্নশীল।

যাই হোক, এই যে অভিভাবকদের সচেতনতা এটার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে তার শিশু সন্তানের প্রতি। যে অভিভাবক যত সচেতন তার সন্তানের পড়াশোনার মান ততো ভালো। এতে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। তার মানে এই নয় যে, যে অভিভাবক সচেতন না, তার সন্তান লেখাপড়ায় পিছিয়ে, এমনটি নয়। আমি অনেক অসচেতন অভিভাবকদের সন্তানকে শ্রেণিতে প্রথম হতে দেখেছি। কিন্তু আমাদের সন্তানেরা বর্তমান সময়ে যে পড়াশোনা করছে এটা গভীর উদ্বেগের। সে হিসেবে আমি শিক্ষকও অপরাধী। হয়ত আমি শিক্ষক ব্যর্থ হচ্ছি যথাযথ শিক্ষাদানে।

অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে বলতে হয়, আমি এমন অনেক অভিভাবক দেখেছি, যারা শিক্ষা অর্জনকে কয়টা বই, গাইড মুখস্থ করার মহড়া ভাবছেন। কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন কবে এই দেশে কোভিড-১৯-এর ভ্যাক্সিনের মত শিক্ষা অর্জন ভ্যাকসিন বাজারে আসবে। উনারা ভাবছেন, সেই ভ্যাকসিন শিক্ষার্থীর শরীরে পুশ করলেই সে সব পড়া মুখস্থ করে ফেলতে পারবে। এ জন্যে যত টাকা প্রয়োজন সব দিতে পারবেন, দরকার হলে জমিজমা সব বিক্রি করে দিবেন। অথচ কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে তেমন অর্থ অপচয় করতে হবে না বরং শিক্ষার্থী সুশিক্ষা অর্জন করবেন।

আমাদের অভিভাবকগণ শিশু সন্তানকে এখন সময় দিতে চাননা। কোনো রকমে বাসায় হোম টিউটর রেখে দিলেই বেঁচে যান। সব দায়িত্ব বেচারা হোম টিউটরের ওপর এসে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু অভিভাবক এভাবে সফলও হন। আদতে সবার হোম টিউটর রেখে সন্তান পড়ানোর সক্ষমতা আদৌ আছে? নিঃসন্দেহে এমন আর্থিক দৈন্যদশার সময়ে এটা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।

তাহলে আমাদের অভিভাবকদের করণীয় কী হতে পারে?

আমাদের অভিভাবকদের প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি তার সন্তানের কেমন ভবিষ্যৎ চান। ভবিষ্যৎ যা-ই চান না কেনো, মানুষের মত মানুষ করতে হলে অন্তত যথাযথভাবে প্রাথমিক শিক্ষাটা সন্তানকে দেওয়ার আগ্রহ থাকতে হবে। সে জন্যে প্রত্যেক অভিভাবকের সকাল ও সন্ধ্যার সময় শিক্ষার্থীর পাশে থাকা নিশ্চিত করতে হবে। এই সময় অভিভাবককে খুব প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যাবহার করা উচিত হবে না। শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক বাড়ির কাজ ও পড়া নিশ্চিত করতে হবে। হাতের লেখার জন্যে বাংলা লেখার খাতা ও ইংরেজি লেখার খাতা ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। নিয়মিত গণিত ও ইংরেজি চর্চায় উৎসাহিত করতে হবে। শিশুকে নীতি নৈতিকতা শেখাতে হবে। ধর্ম চর্চায় উৎসাহিত করতে হবে। সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে হবে। খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক অভিভাবক যদি এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারেন তবে শিশু সুনাগরিক হবেন বলে আশা করা যেতেই পারে। মনে রাখা দরকার, এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে খুব বেশি আর্থিক সুবিধার প্রয়োজন নেই।

এই তো গেলো অভিভাবকদের করণীয় কথা।

একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়ম নীতি ছাড়াও আমাদের কিছু দায়িত্ব পালন করা দরকার। যাতে করে শিক্ষার্থী নৈতিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে। কর্তৃপক্ষের আদেশ যদি যথাযথ ভাবে আমরা পালন করি, আমাদের শিশুরা সুনাগরিক হয়ে বেড়ে উঠবে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা মনে পড়লো, আমাদের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বর্তমান উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব আফতাবুল ইসলাম মহোদয়ের একটা কথা। তিনি বলেছিলেন, আপনি অবসর গ্রহণের পর কেমন সমাজ আশা করছেন বা সমাজ থেকে কী পাবেন তা তা নির্ভর করছে আপনি এখন কেমন সমাজ নির্মাণ করছেন।

স্যার যথার্থই বলেছেন। আমরা আমদের শিশুদের এখন যেমন শিখাবো ঠিক দুই যুগ বা অবসর গ্রহণের পর এই শিশুরা আমাদের তা-ই ফেরত দিবে। কারণ, আজকের শিশু আগামী দিবের ভবিষ্যৎ।

তাই আসুন আমরা সকলে মিলে সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ি।

মোঃ নাছির উদ্দিন খান : সহকারী শিক্ষক, গৃদকালিন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়