রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

কোরবানি সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক পাটওয়ারী

আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে আজকের দিন পরই ঈদুল আজহা দিবস। যাকে কোরবানির ঈদ বলা হয়ে থাকে। যার বাংলা অর্থ হলো উৎসর্গ করা। যাই হোক, কোন্ ধরনের পশু কোরবানির উপযুক্ত এবং কোন্ ধরনের পশু কোরবানির উপযুক্ত নয় তা জানা খুবই জরুরি।

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় মানুষের কোনো আমল হয় না। কিয়ামতের দিন এর শিং ও পায়ের খুর সবসহ উপস্থিত হবে। এর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহপাকের কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। সুতরাং স্বাচ্ছন্দ্য হৃদয়ে তোমরা তা করবে। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।

কোরবানি প্রসঙ্গে নবী (সাঃ) বলেছেন, যে কোরবানি করে তার জন্যে প্রতিটি লোমের বদলায় ছওয়াব রয়েছে। অন্য বর্ণনায়, এর শিংগুলোর বদলায় বলা হয়েছে। (তিরমিজি)

যায়িদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই কোরবানি কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আঃ)-এর সুন্নাত। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এতে আমাদের জন্যে কী (সাওয়াব) রয়েছে? তিনি বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে। তারা বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! লোমশ পশুদের পরিবর্তে কি হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশপশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে । (ইবনে মাজাহ)।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শিংওয়ালা মোটাতাজা একটি মেষ কোরবানি করেছিলেন। এটি খেত কাল মুখে, চলত কাল পায়ে, দেখতে কাল চোখে। অর্থাৎ উল্লেখিত অঙ্গগুলো কাল বর্ণের ছিলো। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)

যে ধরনের পশু কোরবানির জন্য উপযোগী নয় :

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন চোখণ্ডকান ভাল করে দেখে নেই। আর আমরা যেন মুকাবালা, মুদাবারা, শারকা ও খারকা পশু কোরবানি না দেই।

হাসান ইবনে আলী (রাঃ) আলী (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন যে, মুকাবালা হলো যে পশুর সামনের দিকে কানের এক পাশ কাটা, মুদাবারা হলো যে পশুর পিছনের দিকে কানের এক পাশ কাটা, শারকা হলো যে পশুর লম্বালম্বি ভাবে কান ছেঁড়া, খারকা হলো যে পশুর কানে ছিদ্র আছে। (তিরমিজি, আবু দাউদ)

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন চোখ ও কান ভালোরূপে দেখে নেই। আর আমরা যেনো এমন পশু দ্বারা কোরবানি না করি যা কানা, যার কানের একদিক কাটা, যার কানের গোড়া কাটা এবং যার কান ফাঁড়া এবং যার কানে ছিদ্র আছে। (নাসাঈ)

নাসাঈ শরীফে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আরেকখানা হাদীসে বর্ণিত আছে , লেজ কাটা পশু কোরবানি না করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশ দেন।

নাসাঈ শরীফে আলী (রাঃ) বর্ণিত আরেকখানা হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) কানা পশু কোরবানি না করার জন্যে বলেন।

জুরাই ইবনে কুলায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ)কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শিং ভাঙ্গা পশু কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। এরপর আমি তা সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব (রাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বললেন, শিংয়ের অর্ধেক বা তার বেশি ভাঙ্গা হলে সেই পশু কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। (নাসাঈ)।

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) কানের অগ্রভাগ বা পশ্চাদভাগ কাটা বা ফাটা বা ছিদ্রযুক্ত পশু কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ)

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে (কোরবানির পশুর) চোখ ও কান ভালরূপে পরীক্ষা করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ)

কোরবানির পশুকে হারাম না বলা :

উবাইদ ইবনে ফাইরূয (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি বারাহ ইবনে আযিব (রাঃ)কে বললাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে ধরনের পশু কোরবানি করতে অপছন্দ অথবা নিষেধ করেছেন সে সম্পর্কে আমাদের বলুন। তখন তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর হাতের ইশারায় বলেন, চার প্রকারের পশু দিয়ে কোরবানি করলে যথেষ্ট হবে না। অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন পশু যার রোগ সুস্পষ্ট, পঙ্গু পশু যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট এবং কৃশকায় দুর্বল পশু যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে। উবাইদ (রাঃ) বলেন, আমি ত্রুটিযুক্ত কানবিশিষ্ট পশু কোরবানি করা অপছন্দ করি। বারাহ (রাঃ) বলেন, যে ধরনের পশু তুমি নিজে অপছন্দ কর তা পরিহার কর এবং অন্যদের জন্য তা হারাম কর না। (ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, নাসাঈ)

ইয়াযীদ নু-মিসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি উতবা ইবনে আবদুস সলামীর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করি, হে আবু ওয়ালীদ! আমি কোরবানির পশুর সন্ধানে গিয়েছিলাম কিন্তু আমি পছন্দসই কোনো পশু পাইনি, একটি ছাড়া, যার কিছু দাঁত পড়ে গেছে। আমি সেটিকে ক্রয় ভাল মনে করিনি। এখন এ সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তখন তিনি বলেন, তুমি সেটিকে আমার জন্য আনো নাই কেন? আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! সেটি আপনার জন্য জায়েজ এবং আমার জন্য নাজায়িজ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তুমি তো সন্দেহ করছ, আর আমি তো সন্দেহ করছি না। বস্তুত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুসফারা, মুসতাসিলা, বাখকা, মুশায়ইয়া ও কাসরা পশুকে কোরবানি দিতে নিষেধ করেছেন।

১। মুসফারা ঐ পশুকে বলা হয়, যার কান এমনভাবে কাটা যে, কানের ছিদ্র দেখা যায়।

২। মুসতাসিলা ঐ পশুকে বলা হয়, যার শিং গোড়া থেকে ওপড়ানো।

৩। বাখকা ঐ পশুকে বলা হয়, যার একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

৪। মুশায়'ইয়া ঐ পশুকে বলা হয়, যে অত্যন্ত দুর্বল ও কৃষ্ণকায়, এমনকি সেটি বকরির সাথেও চলতে অক্ষম।

৫। কাসরা ঐ পশুকে বলা হয়, যার পা ভেঙে গেছে। (আবু দাউদ)

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সাঃ) কান কাটা এবং শিং ভাঙ্গা পশু কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ)

কতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা হবে :

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, গাভী ও উট সাত ব্যক্তির পক্ষ হতে কোরবানি করা যাবে। (আবু দাউদ)

মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কোরবানি করা :

হানাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ)-কে দুটি দুম্বা যবেহ করতে দেখে জিজ্ঞাসা করি, ব্যাপার কী? তখন তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাকে এ রূপ ওসীয়ত করে গেছেন যে, আমি যেন (তাঁর ইনতিকালেন পর) তাঁর পক্ষে কোরবানি করি। তাই আমি তাঁর পক্ষ হতে এ কোরবানি করছি। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুদায়বিয়ায় নবী (সাঃ)-এর সাথে একটি উট সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে এবং একটি গরুও সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করেছি। (ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)

কত বয়সের পশু কোরবানি করতে হবে :

হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা দুই বছরের কম বয়সী পশু কোরবানি করো না। কিন্তু যদি তোমাদের পক্ষে কঠিন হয় তখন তোমরা এক বছর বয়সী ভেড়া যবেহ (কোরবানি) করতে পার। (ইবনে মাজাহ)

উপরোক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে মাযহাবের ইমামগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ঠিক আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামণ্ডএ-আযম আবু হানিফা (রাঃ) যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সে সিদ্ধান্তের অনুসরণ করেই কোরবানি দিতে হবে। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, কোরবানির পশুর মধ্যে যতো ত্রুটিই থাকুক না কেন, তাকে অন্য মুসলমানের জন্যে হারাম বলা যাবে না। (পূর্বে বর্ণিত উবাইদ ইবনে ফাইরূয (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস খানায় স্পষ্টভাবে বলা আছে)

আল্লাহ্ পাক আমাদেরক কোরবানির পূর্ণ ফজিলত দান করুক। আমিন।

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক পাটওয়ারী : আইনজীবী, জজকোর্ট, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়