প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর কণ্ঠের শ্রদ্ধাভাজন প্রতিষ্ঠাতার আজ শুভ জন্মদিন
চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারের বয়স ৬৯ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। আজ ৭০ বছরে পা দিয়েছেন তিনি। ৩৯ বছর পূর্বে ১৯৮৫ সাল থেকে আমি তাঁকে চিনি। তখন তিনি সদ্য উকালতি পেশাতে আসা টগবগে এক যুবক। ক্লিন শেভড্ স্লিম বডির এই যুবকের চোখে মুখে দেখেছি সদা-তারুণ্যের উজ্জ্বল আভায় সৃষ্টিশীলতার ছাপ। কৃষ্ণ বর্ণের অবয়ব থেকে সব সময় ঠিকরে পড়তো সম্ভাবনার ঝিলিক।
আইন পেশায় শনৈঃ শনৈঃ অগ্রগতির সাথে সাথে ইকবাল-বিন-বাশারকে দেখলাম রাজনীতির পাশাপাশি ক্রীড়া, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট হতে। ১৯৮৭ সালে আমি যখন সাপ্তাহিক চাঁদপুরের বার্তা সম্পাদক, তখন থেকে চাঁদপুর শহরের রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াভিত্তিক সকল কর্মকাণ্ডের সংবাদে ইকবাল-বিন-বাশারের সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেতাম। মোটেও বাড়িয়ে বলা নয়, আশির দশকের শেষ পর্বে ইকবাল-বিন-বাশার চাঁদপুরে নিজের অবস্থান এমন উচ্চতায় তুলতে সক্ষম হন যে, এ শহরের তরুণ-যুবকসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে কিছু ক্ষেত্রে অবিকল্প আইকন ভাবতে লাগলো।
নব্বইর দশক শুরুর প্রাক্কালে রাজনীতির হিসেব-নিকেশে সাময়িক হোঁচট খেয়েও ইকবাল-বিন-বাশার ২-১ বছরের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিলেন। সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হয়ে নব্বইর দশকের প্রথম পর্বে তিনি সৃষ্টির নেশায় উন্মাদ হয়ে গড়লেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, করলেন ব্যাপক সামাজিক কর্মকাণ্ড। তাঁর জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি স্বরূপ ১৯৯৪ সালে জন্ম হয় চাঁদপুর কণ্ঠের। যেটিকে তিনি সাড়ে ৪ বছর পর ১৯৯৮ সালে দৈনিকে উন্নীত করে গড়লেন এমন এক অনন্য রেকর্ড, যে রেকর্ড কেয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গার কোনো সম্ভাবনা নেই। চাঁদপুর কণ্ঠকে তিনি চাঁদপুর জেলার প্রথম দৈনিক মুখপত্র করে এর নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলেন। চলতি ২০২৪ সারে ১৭ জুন পত্রিকাটির তিন দশক (৩০ বছর) পূর্ণ করতে যাচ্ছে, যেটি হবে একটি মাইলফলক। তাঁর জীবদ্দশায় এই মাইলফলক উদযাপন করার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
সাবেক চাঁদপুর মহকুমা ও বর্তমান চাঁদপুর জেলায় কোনো সংবাদপত্র ৩০ বছর টিকে থাকার রেকর্ড নেই। এই ৩০ বছরে চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইকবাল-বিন-বাশার তাঁর জীবনের গৌরবজনক অধ্যায় অতিক্রম করেছেন। এ সময়েই তিনি চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক (২ বার) ও সভাপতি (৩ বার), চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (৩ মেয়াদ) এবং চাঁদপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া চাঁদপুর শহরের অভিজাত সকল সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি নিজের অপরিসীম সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে চাঁদপুরে জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলনের যে রাজসিক আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে, তেমন আয়োজনের রেকর্ড এখন পর্যন্ত কেউ করতে পেরেছে বলে জানা যায় নি। তিনি চাঁদপুরের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় বিতর্ক উৎসব আয়োজনে সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সর্বাত্মক সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৯ সালে যে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেটি একটানা ১১ বছর চলেছে এবং করোনা-বিরতি দিয়ে চলতি ২০২৪ সালে যুগপূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে।
শ্রদ্ধেয় ইকবাল-বিন-বাশার চাঁদপুর জেলার ইতিহাসে এমন একটি নাম, যাঁর কথা লিখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড থেকে অনেক দূরে। এখন সময় কাটে পেশাগত ব্যস্ততা, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে। টগবগে কালো চেহারার এ মানুষটিতে এখন সাদা পক্ক কেশ (চুল-দাড়ি)-এর প্রাধান্য থাকলেও চলনে-বলনে নেই বার্ধক্যের লেশ। সেটা তাঁর সাহচর্য পাওয়া প্রতিটি মানুষই বিশেষভাবে অনুভব করেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও রসিক এ মানুষটি যে কোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন এবং সুন্দর আলাপচারিতায় যে কোনো ধরনের আড্ডা জমিয়ে ফেলতে পারেন।
অসংখ্য গুণগ্রাহীসহ তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রত্যাশা : স্বাভাবিক নিয়মে ইকবাল-বিন-বাশারের বয়স বাড়ুক, জীবন-বৃক্ষ থেকে পুরানো পাতা ঝরে নূতন পাতা গজাক, তবুও বার্ধক্য তাঁকে স্পর্শ না করুক। সুস্থতার সাথে তিনি বেঁচে থাকুন অনেক অনেক দিন--চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারসহ অন্যান্য সকলের এটাই আল্লাহর দরবারে আকুল প্রার্থনা।