বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

প্রবীণের মানবাধিকারে প্রজন্মের ভূমিকা
হাসান আলী

জাতিসংঘ ১ অক্টোবরকে ১৯৯১সাল থেকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতি বছরই দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হলো 'সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় প্রবীণদের জন্য প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রজন্মের ভূমিকা।

মানবাধিকার হলো জন্মসূত্রে মানুষ যেসব অধিকার লাভ করে। জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে। মুখবন্ধে লেখা হয়েছে, মানুষ যাতে অত্যাচার ও উৎপীড়নের মুখে সর্বশেষ উপায় হিসেবে বিদ্রোহ করতে বাধ্য না হয় সে জন্যে আইনের শাসন দ্বারা মানবাধিকার সংরক্ষণ করা অতি জরুরি।

ধারা ২৫ (১) বলা হয়েছে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সমাজকল্যাণ কার্যাদির সুযোগ এবং এ সঙ্গে পীড়া, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা জীবন-যাপনে অনিবার্য কারণে সংঘটিত অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং বেকার হলে নিরাপত্তার অধিকারসহ নিজের এবং নিজের পরিবারের স্বাস্থ্য এবং কল্যাণের জন্যে পর্যাপ্ত জীবন মানের অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে।

পৃথিবী জুড়ে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দুই কোটি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো বার্ধক্য মোকাবিলা করার নানান রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০২৩, বয়স্ক ভাতা, প্রবীণ নিবাস, বৃদ্ধাশ্রম, প্রবীণ হাসপাতাল ইত্যাদি করা হয়েছে। প্রবীণদের স্বস্তিদায়ক ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্যে আরো কিছু করবার বাকি রয়েছে। বার্ধক্যের চ্যালেঞ্জগুলো দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এবারের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্যের আলোকে কিছু কথা বলা খুবই জরুরি বলে মনে করছি।

স্পেনের মাদ্রিদে ২০০২ সালে ১৫৯ দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রবীণ বিষয়ক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নাগরিক হিসেবে প্রবীণরা যাতে পূর্ণ অধিকার এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে সমাজের সবক্ষেত্রে কাজ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের জন্যে বিশ্ব সম্মেলনের ঘোষণাগুলো গ্রহণ করেছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই সম্মেলন একবিংশ শতাব্দীতে নি¤েœাল্লিখিত তিনটি অগ্রাধিকারমূলক নির্দেশক অনুসরণ করে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এগুলো হলো : (১) প্রবীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন। (২) প্রবীণ বয়সে স্বাস্থ্য ও সচ্ছলতা বৃদ্ধি। (৩) প্রবীণদের জন্যে সক্ষমতা ও সহায়তামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা। সম্মেলনে রাষ্ট্রগুলো ১৮টি ক্ষেত্র এবং ২৩৯টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়েছে।

প্রবীণ জনগোষ্ঠী ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, জীবনব্যাপী শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে অংশগ্রহণ বা অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখতে প্রবীণদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন সুযোগ, কর্মসূচি বা সহায়তা প্রদান করা ; সবধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য মানবাধিকার সনদগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে সব মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ভোগ নিশ্চিত করা; কর্মক্ষম বয়সী জনগোষ্ঠীর শ্রম বাজারে সক্রিয় থাকার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে শেষ জীবনে নির্ভরশীলতা বা কাজ থেকে ছাঁটাই হয়ে যাবার ঝুঁকি কমে যায়। যেমন : কোনো ধরনের বৈষম্য বিশেষ করে জেন্ডার বৈষম্য ছাড়া ঋণের সুযোগ নিশ্চিত করে ছোট ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে উন্নয়নের মাধ্যমে প্রবীণদের আত্মকর্মসংস্থানের বৃদ্ধি করা; আর্থিক ও অবকাঠামোগত সেবা খাত এবং খামার কৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে প্রবীণ কৃষকদের সক্ষমতা আরো জোরদার করা; অর্থনৈতিক সম্পর্কে অংশীদার ও নিয়ন্ত্রণের সমান অধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রবীণ নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা; অভিবাসিত দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রবীণ অভিবাসীদের অঙ্গীভূত করা এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা।

প্রশ্ন হলো, গত বিশ বছরে উন্নত বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবীণের মানবাধিকার রক্ষায় কী ভূমিকা পালন করা হয়েছে? কার্যত তেমন কোনো ভূমিকা পালন করেনি কিংবা উল্লেখযোগ্য কোনো চেষ্টাও করা হয়নি। প্রবীণ জীবনকে দুর্বিষহ করার হাত থেকে রক্ষা করতে বরং নির্লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। অতিমারী করোনাকালীন সময় প্রবীণরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু প্রবীণদের হয়েছে। চিকিৎসা, সেবা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াসহ নানান বিষয়ে অসম্মান, অমর্যাদার শিকার হতে দেখা গেছে। সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়, নির্মাণ, তৈরি, সরবরাহ ইত্যাদিতে মনোযোগ গভীর থেকে আরো গভীর হচ্ছে। দেশে দেশে দমন-পীড়ন চালাতে কোনো ধরনের রাখঢাক নেই। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক মহলের উদাসীনতা দৃশ্যমান। সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে গুটিকয়েক মানুষের হাতে। ফলে সামাজিক ভারসাম্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলো চায় পুরো পৃথিবীর হর্তাকর্তা, দণ্ড মুণ্ডের মালিক হওয়া। সারা পৃথিবী আজ বৈষম্যের জালে আটকে পড়েছে। বৈষম্য বজায় রেখে মানবাধিকার চর্চা করা প্রায় অসম্ভব একটা বিষয়। পৃথিবীর উপর সকল মানুষের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার আঞ্চলিকতা বা জাতিগত স্বার্থ রক্ষা করার জন্যে বিসর্জন দেয়া যায় না। হাজার তরুণ প্রতিনিয়ত সাগরপাড়ি দিয়ে কিংবা জঙ্গল ডিঙ্গিয়ে জীবনকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ করে বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতার চোখের পানি ঝরায়। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সামরিক বা বেসামরিক লোকজন হতাহত হচ্ছে। তাদের প্রবীণ মা-বাবার ব্যথা-বেদনা, দুঃখ দুর্দশা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্যে করণীয় নির্ধারণে আমাদের নিরবতা ভাঙ্গে না। প্রবীণের মানবাধিকার রক্ষায় প্রজন্মের ভূমিকা হলো সারা পৃথিবীতে বিরাজমান অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, বৈষম্য, শোষণ, নিপীড়নকে চ্যালেঞ্জ জানানো।

লেখক : প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়