সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

বিনিয়োগে ভালো কোম্পানি বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া

মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার

বিনিয়োগে ভালো কোম্পানি বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া
অনলাইন ডেস্ক

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পূর্বে একটি ভালো কোম্পানি কীভাবে বিশ্লেষণ করে বের করতে হয় তা আমাদের জানতে হবে। যারা ভালো কোম্পানি বাছাই করতে জানেন তাদের জন্যে বাজার ভালো বা খারাপে কিছু যায় আসে না, মন্দা বাজারেও তারা ঠিকই মুনাফা বের করে নিতে পারেন। তাই প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর জন্যে ভালো কোম্পানি বের করার সূত্র জানতে হবে।

অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই পুঁজি বাজার বিশ্লেষণ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না থাকায় তারা গুজবে কান দেন, বড় ভাইদের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল হন, আইটেমবাজদের পাল্লায় পড়েন, আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে আইটেম কিনেন। সর্বশেষ তারা নিঃস্ব হয়ে পুঁজি বাজার ত্যাগ করেন এবং বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।

“সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, তুমি কী করছো সেটা না জানা”-ওয়ারেন বাফেট।

Background of Company : একটি প্রতিষ্ঠান যখন গড়ে উঠে তখনই তার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণপূর্বক পরিচালনা করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে প্রতিষ্ঠানটি তার নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্যে পরিচালিত হতে থাকে। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের সম্পদ (দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান) অর্জন করে থাকে এবং সুনাম অর্জন করতে থাকে। কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্যে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ধারাবাহিকতা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও লক্ষ্য, কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য বা সেবা গ্রহীতার আকার, ভবিষ্যতে মার্কেট বড় হওয়ার সম্ভাবনা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা দেখা। সর্বোপরি কোম্পানির পরিচালকবৃন্দের অবস্থা, তাদের ব্যবসায়িক দূরদর্শিতা, পরিচালকবৃন্দের মধ্যে কোনো মতানৈক্য আছে কি না এবং তাদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ যথাযথ আছে কি না তা দেখতে হবে।

Product (উৎপাদিত পণ্য) : কোম্পানি কী ধরনের পণ্য উৎপাদন করে, উক্ত উৎপাদিত পণ্যের বাজার চাহিদা কী রকম ও ভবিষ্যতে চাহিদা কী রকম হতে পারে তা চন্তিা করতে হবে। বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের মার্কেট শেয়ার কত শতাংশ, ভবিষ্যতে মার্কেট শেয়ার বাড়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে তা বিবেচনায় আনতে হবে। সেজন্যেই কোম্পানির Product Line বিবেচনা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

Earning Growth & Return on Equity : আমাদের বিনিয়োগের জন্যে নির্ধারিত কোম্পানি তার পূর্ববর্তী বছরগুলোতে কী পরিমাণ লাভ করেছে এবং তার শেয়ার হোল্ডারদেরকে নিয়মিত নগদ লভ্যাংশ প্রদান করছে কি না তা দেখতে হবে। বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই কোম্পানির প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহপূর্বক লভ্যাংশের পরিমাণ, শেয়ার লভ্যাংশ প্রদানের পরিমাণ, বিনিয়োগ যোগ্য শেয়ারে সম্ভাব্য শেয়ার প্রতি আয় অনুপাত অর্থাৎ কোম্পানির ইপিএস দেখতে হবে।

Earning Growth & Return on Equity : আমাদের দেখতে হবে বিনিয়োগের জন্যে নির্ধারিত কোম্পানির বিগত বছরগুলোতে আয় বৃদ্ধির প্রবণতা। অর্থাৎ প্রতি বছর কী পরিমাণ আয় বৃদ্ধি হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে বর্তমান বছরে সম্ভাব্য আয়ের বৃদ্ধি নির্ণয় করে দেখতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে দেখতে হবে কোম্পানি বিগত বছরগুলোর ROE এবং আমরা যখন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিবো তখনকার সম্ভাব্য রিটার্ন অন ইকুইটি কত হতে পারে। কারণ একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যমান বাড়বে না কমবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে Earning Growth Ges Return on Equity-এর উপর। সুতরাং ভালো লাভ প্রদান করা কোম্পানি সিলেক্ট করতে হবে বিনিয়োগের জন্যে।

Divident Yield & Pay Out Ration : বিনিয়োগের জন্যে নির্ধারিত কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগকৃত প্রতি শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্যের বিপরীতে কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেয় তা বিবেচনা করতে হবে এর মাধ্যমে। আমাদেরকে আরও দেখতে হবে পে-আউট রেশিও অর্থাৎ কোম্পানিটি তার শেয়ার হোল্ডারদের জন্যে বাৎসরিক যে ডিভিডেন্ট দেয় সেটা মোট আয়ের কত শতাংশ। অর্থাৎ মোট আয়ের কত অংশ ডিভিডেন্ট হিসেবে শেয়ার হোল্ডারদেরকে দিচ্ছে।

P/E Ratio : বিনিয়োগের জন্যে নির্ধারিত কোম্পানির পি/ই রেশিও অবশ্যই দেখতে হবে। কারণ উক্ত শেয়ারটির আয় অনুপাতে অতি মূল্যায়িত না অবমূল্যায়িত আছে তা বিনিয়গকারীকে অবশ্যই জানতে হবে। শেয়ারে মূল্য আয় অনুপাতে পি/ই রেশিও যতো কম হয় বিনিয়োগের ঝুঁকি ততো কম। মূল্য আয় অনুপাত হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপক। এই আনুপাত ১০ থেকে ১৫-এর মধ্যে থাকলে ভালো।

% of Share Holding : বিনিয়োগকারীগণকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে শেয়ার হোল্ডিং ইস্যুটি। বর্তমানে কোম্পানিটির কত শতাংশ শেয়ার পরিচালকবৃন্দ হোল্ড করে আছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীগণ কত, অন্যান্য বিনিয়োগকারীগণ কত তা দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিচালকবৃন্দের হোল্ডিং যতো বেশি হবে ততো ভালো আর সাধারণ বিনিয়োগকারীগণের হোল্ডিং যতো কম হবে ততো ভালো।

News : বিনিয়োগের জন্যে নির্ধারিত কোম্পানির প্রতিদিনকার নিউজ আপডেট জানতে হবে। এতে কোম্পানির গতিপ্রকৃতি, পরিকল্পনা, নতুন প্রোডাক্ট, আয়, বড় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি, বিভিন্ন চুক্তি, ইপিএস ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে জানতে হবে। উচ্চাভিলাষী কোম্পানিকে অবশ্যই বিনিয়োগের জন্যে নির্ধারণ করতে হবে।

সুতরাং পুঁজি বাজারে ভালো কোম্পানি খুঁজে বের করে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এজন্যে আমাদেরকে জানতে হবে ভালো শেয়ার কোন্গুলো। ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুনাফা করতে না পারলেও পুঁজি হারানোর ভয় থাকে না। এজন্যে ভালো কোম্পানির শেয়ার বাছাই করার আগে বিনিয়োগকারীগণকে নিশ্চিত করতে হবে কোম্পানির অতীত ইতিহাস, পরিচালকবৃন্দের সততা, দক্ষতা, উৎপাদিত পণ্যের বাজার চাহিদা, কোম্পানি আর্থিক ভিত্তি, ঋণ থাকলে তা মূলধনের কত অংশ, আয়-ব্যয়, শেয়ার প্রতি আয়, শেয়ার প্রতি সম্পদ, লভ্যাংশের পরিমাণ এবং অতীত রেকর্ড। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করলে সহজেই একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগের জন্যে নির্বাচন করা যায়।

আমাদের মেধা বিকাশের জন্যে বিল গেটস বলেন, ‘আপনি যদি গরিব হয়ে জন্ম নেন তবে তা আপনার দোষ নয়, কিন্তু আপনি যদি গরিব থেকেই মারা যান তবে তা আপনার দোষ’।

সুতরাং আমরা নিজের মেধা ও বুদ্ধি খাটিয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলটা আনয়ন করতে পারি। এভাবে আমরা পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় আর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।

মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার : লেখক ও কলামিস্ট। ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়