শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

শীতে প্রবীণের রোগ ও সেবা-যত্ন
অনলাইন ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের শীতকাল ছোট হয়ে আসছে। গ্রামগঞ্জে এখনো পৌষ-মাঘ শীতকাল হিসেবে জনজীবন বিপর্যস্ত করে রাখে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে আবার কোথাও কম থাকে। তবে ঢাকা শহরে শীতকাল ছোট।

শীতকালে আমাদের দেশের প্রবীণরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। সেবা-যত্নের অভাবে রোগ ভোগের সময় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। শীতকালে সাধারণত নিচের কয়েকটি রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়:-

১. তীব্র শীতে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। হাইপোথার্মিয়া হলো শরীর যতটুকু তাপমাত্রা তৈরি করে তার চাইতে দ্রুত তাপ হারানো অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে কমে যাওয়া।

২. রেনোড ফেনোমেনন-তীব্র শীতে হাত-পা নীল হয়ে যাওয়া। হাত-পায়ের আঙ্গুলে রক্ত চলাচল কমে গেলে এমন হতে পারে।

৩. চর্মরোগ-শীতকালে চামড়ার শুষ্কতা, চুলকানি, হাত-পা ফেটে যাওয়া, মুখে ঘা ইত্যাদি হতে পারে।

৪. মানসিক সমস্যা-শীতের তীব্রতায় অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।

৫. হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক-শীতে প্রবীণদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ে। ঠাণ্ডায় ধমনী সংকুচিত হয়ে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্তনালীতে জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়।

৬. শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যা-শীতে ছড়িয়ে পড়া ফ্লু থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া বা অ্যাজমা।

৭ . গিরায় ব্যথা বা জয়েন্ট পেইন শীতের তীব্রতায় বৃদ্ধি পেতে পারে।

নানা কারণে প্রবীণদের চিকিৎসা সেবা-যত্ন বিষয়ে আমাদের মনোযোগের ঘাটতি রয়েছে।

অসুস্থ প্রবীণকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে একটা গা-ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যায়। কে নিয়ে যাবে, কখন নিয়ে যাবে, কার নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল-এসব বিতর্ক তৈরি হলে প্রবীণ অনেক সময় রোগের কথা বলতে আগ্রহী হন না। কষ্ট চেপে রাখতে চেষ্টা করেন। যে কোনো ধরনের অবহেলা প্রবীণকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে।

শীতে প্রবীণের সেবা-যত্নে আমাদের করণীয়

শীতে প্রবীণকে উষ্ণ রাখুন। থাকার ঘর পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস চলাচলের উপযোগী কিনা দেখুন। শীত নিবারণে কয়েকটি পাতলা আরামদায়ক কাপড় পরতে দিন। শীত নিবারণে ভারী কাপড়-চোপড় সহায়ক নয়। হাতে পায়ে গরম মোজা, গলায় মাফলার, কান টুপি, চাদর বা শালে গা জড়িয়ে দিন।

তীব্র শীতে রুম হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিছানাপত্র কাপড় চোপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। সপ্তাহে দু-তিন বার কুসুম গরম পানিতে গোসল করিয়ে দিন। গা ভেজা থাকতেই সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, ভ্যাসলিন, ক্রিম যে কোনো একটা মাখিয়ে দিতে হবে।

হাত-পায়ের নখ ছোট করে কেটে দিন। ওজু বা হাত-পা ধোয়ার সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে সহায়তা করবে। বেশি অসুস্থ প্রবীণ তায়াম্মুম করতে পারেন।

টয়লেট ভিজা বা স্যাঁতস্যাঁতে রাখলে পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। হাই কমোড ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। টয়লেটে উঠাণ্ডবসার জন্য হ্যান্ডেল রাখা দরকার। শীতে প্রবীণদের খাবারের প্রতি খেয়াল রাখুন। প্রচুর শাকসবজি খেতে দিন। শাকসবজি এমনভাবে রান্না করতে হবে যাতে করে খাবারের মান অক্ষুণ্ন থাকে। ফলমূল, ফলের রস, স্যুপ, গরম পানি খেতে দিন। শীতে প্রবীণদের পানি পান করার প্রবণতা তেমন একটা থাকে না, তাই খেয়াল করে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। প্রয়োজন মনে করলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

মদ, চা, কফি পান করতে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ডুবো তেলে ভাজা যে কোনো খাবার প্রবীণের শরীরের জন্যে ক্ষতিকর। এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সামাজিক অনুষ্ঠানে তেল, ঝাল, মসলার মুখরোচক খাবার গ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে হবে। মিষ্টি ও লবণাক্ত খাবার যতোটা সম্ভব কম খেতে হবে।

শীতে প্রবীণরা ঠিক মতো ওষুধ সেবন করে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। শীতের দিন ছোট, রাত বড়। ফলে কোন্ ওষুধ কোন্ সময়ে খেয়েছেন বা খাবেন অনেক সময় তা খেয়াল থাকে না। কেউ কেউ ওষুধ সেবন না করে ঘুমিয়ে পড়েন। কখন কোন ওষুধ খাবেন তা আলাদা আলাদা রংয়ের কৌটায় আগে থেকে ভরে রাখুন। সঠিক সময়ে ওষুধ সেবনের কথা মনে করিয়ে দিন। ইনসুলিন, ইনহেলার বাসায় মজুত রাখতে হবে।

শীতে প্রবীণদের হালকা ব্যায়াম করানো যায়। যতটা সম্ভব খোলামেলা জায়গায় বেড়াতে, হাঁটাতে নিতে পারলে ভালো হয়। হাতে, পায়ে, গায়ে ম্যাসেজ করে দিলে আরাম পায়। কতটা সময় কী ধরনের ব্যায়াম করতে হবে তাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শীতের রোদে সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে পনের-বিশ মিনিট থাকলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি ও অন্যান্য ভিটামিন খাওয়া যায়।

শীতে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। তীব্র শীতে অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে বিষণ্নতায় ভোগেন। তাদের সাথে বেশি করে সময় দিতে হবে। হাসি-খুশি উৎফুল্ল রাখতে হবে। মনে কষ্ট পায় এমন কথা বা আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। পুরানো দিনের ভুলভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলুন।

মানসিক চাপ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্ত থাকতে পারলে ভালো ঘুম হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম প্রবীণের মন ও শরীর ভালো রাখতে সহায়তা করে।

প্রবীণের সুস্বাস্থ্য ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য শীতের আগেই আমাদের সাধ্যমত প্রস্তুতি নিতে হবে।

হাসান আলী : প্রবীণ বিষয়ক লেখক ও গবেষক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়