প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর এক মহীয়সী নারীর জন্মদিন। যিনি বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ। এ দেশের মেয়েদের দমন করে রাখা যায় না। তারা যেন এগিয়ে যেতে পারে সেই চেষ্টা তিনি সবসময় করেছেন। সকল বাধা মোকাবেলা করে যিনি ক্ষমতায় এসেছেন, পিতার যোগ্য সন্তান, তিনি আর কেউ নন জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরে অবরুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুক্তি পেয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার তিনি। তাঁর নেতৃত্বে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ আজকে যে সুনাম অর্জন করেছে তার কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার।
শেখ হাসিনার জন্মদিন বাংলাদেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। তিনি শক্ত হাতে বাংলাদেশের হাল না ধরলে আমরা আজকের এই কাঙ্ক্ষিত স্বদেশ পেতাম না। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী ও ৭৬তম জন্মদিন। আল্লাহর অশেষ রহমতে বঙ্গবন্ধু কন্যা এখনো সুস্থ আছেন এবং দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন সুদক্ষ হাতে।
বহুবার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। থামিয়ে দিতে চেয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে বহুবার হামলা করা হলেও আল্লাহ রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। মৃত্যুভয় তোয়াক্কা না করে জীবনবাজি রেখে জনগণের জন্য তিনি কাজ করেছেন সবসময়। তাঁর ৭৫ বছরের জীবনে অনেক চরাই-উতরাই প্রতিবন্ধকতা-দুঃখ-কষ্ট-নির্যাতন-নিপীড়ন-ষড়যন্ত্র-মামলা-হামলা-মিথ্যাচার মোকাবেলা করে তিনি রাজনীতি করেছেন এতে বিন্দুবৎ সন্দেহ নাই।
আজ জননেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করতে চাই। তাঁর অবদান সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এবং তরুণ প্রজন্মের জানা অতীব জরুরি।
শেখ হাসিনা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি, তাঁর সংগ্রামী জীবন বঙ্গবন্ধুর মতই। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বাবা-মা, ভাই, ভাবি, মামা হারানোর পর বাংলাদেশে তাঁর ফিরে আসাটাই ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। এরপর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করা হয়। শেখ হাসিনা সেই সময় জার্মানি ও ভারতে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে দিন কাটান।
১৯৮১ সালে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী করা হয় তাঁর অনুপস্থিতিতে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশে ফিরতে পারলেও শাসকগোষ্ঠী নিজের ঘরে (ধানমন্ডি ৩২) পর্যন্ত তাঁকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাঁকে বরণ করে নেয় দেশের লাখ লাখ নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনতা। এরপরে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাজপথে থেকে বহু ঝড়-ঝাপটা বাধা-বিঘ্নতা মোকাবিলা করে সরকার গঠন করছেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঐতিহ্যবাহী এই দলটি ১৯৯৬ সালে পূর্ব পর্যন্ত আর রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারেনি। অর্থাৎ ’৭৫-এর পরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে আওয়ামী লীগের ২১ বছর সময় লেগেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারত না। স্বাধীনতাবিরোধী ক্ষমতালোভীরা এই সত্যটা বুঝতে পারায় তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২২ বার হামলা করে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে আছে। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান এই হামলায়।
শেখ হাসিনার দক্ষ এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের যেসব বিষয়ে ব্যাপক সাফল্য এসেছে তার উল্লেখযোগ্য হল :
১) আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন। ফলে দেশে খাদ্য স্বনির্ভরতা এসেছে।
২) নারীর ক্ষমতায়ন।
৩) অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের অভূতপূর্ব বিকাশ। যেমন : করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সফলতা ছিল উল্লেখযোগ্য।
৪) গ্রামীণ অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুষম উন্নয়ন। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল উল্লেখযোগ্য।
৫) বিদ্যুৎ সরবরাহের রেকর্ড সাফল্য।
৬) সারাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব করা। এখন গ্রামও ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়ায় উন্নত হয়েছে।
৭) ক্রীড়াচর্চায় বিশ্বব্যাপী সাফল্য। সর্বশেষ সাফ গেমসে নারী ফুটবলার চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন এর উদাহরণ।
৮) বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে সৌহার্দ্য স্থাপন।
৯) যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনার বিকাশ।
১০) জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনপূর্বক দেশে স্থিতিশীলতা আনা।
এছাড়া পার্বত্য চুক্তি, আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্র বিজয়, জিডিপি বৃদ্ধি, গঙ্গার পানি চুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদান, জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা, ডেল্টা প্ল্যান, আওয়ামী লীগকে সুসংহত করা, রাষ্ট্রীয়ভাবে সামাজিক সুরক্ষা প্রদান ইত্যাদি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবদানের ফসল।
বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের সেই ছোট্ট হাসু এখন চতুর্থ দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত টানা তিনবার নিষ্ঠার সাথে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন জাতির এই বীর কন্যা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে (চার মেয়াদে) প্রধানমন্ত্রিত্ব করছেন শেখ হাসিনা, যা রেকর্ড। এছাড়া বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চার দশক ধরে, এটিও একটি রেকর্ড।
শেখ হাসিনা পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী নারী প্রধানমন্ত্রী, যা বিভিন্ন সময়ে হওয়া বিশ্ব জরিপে প্রমাণিত। ২০১১ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় তিনি সপ্তম এবং নিউইয়র্ক টাইমসের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ১২ জন নারী রাজনীতিবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের জরিপে ছিলেন বিশ্বের ষষ্ঠ ক্ষমতাধর নারী নেত্রী। বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ২০১৪ সালে তিনি ৪৭তম স্থানে ছিলেন এবং ২০২১ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ (পঞ্চাশ) নারীর তালিকায় ছিলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ)টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে হুপে-বোয়ানি শান্তি পুরস্কার, পার্ল এস বাক ৯৯ পুরস্কার, সেরেস মেডেল, মাদার তেরেসা পদক, পল হ্যারিস ফেলোশিপ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতিপদক, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ ২০১৫, এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার, প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার, আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার, প্যান ওম্যান ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য। প্রধানমন্ত্রীর এই অর্জন বাংলাদেশেরও।
বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িত হয়ে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ছয়দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁর সমস্ত জীবনের আদর্শ এবং পথচলার পাথেয়। পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ১৯৬৭ সালে। সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ তাঁর সন্তান। তারা দুজনই আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে কর্মের দ্বারা পরিচিত।
আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আমি তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করি তিনি যেনো বাংলাদেশকে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারেন।
‘এমন কন্যা ঘরে ঘরে যেন জন্মায়
বাংলার প্রতি গ্রামে-গঞ্জে
সবশেষে বলি বুবু
আমারও কিছু হন যে ॥’
শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অধ্যক্ষ ড. মোঃ হাসান খান : কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চাঁদপুর জেলা।