প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
মোহাচ্ছন্নতা আর লোভাতুরতা এই চির শান্ত-সবুজ বাংলায় ছিলো না এমনটি কিন্তু নয়। বাংলার প্রকৃতি-সংস্কৃতির আবেশে এগুলো নিতান্তই সহনশীলতার মধ্যে পরিব্যাপ্ত ছিল। যে যুগে মানুষের লজ্জা নিবারণের মাধ্যম ছিল গাছের ছাল, খাদ্য ছিল কাঁচা মাছ-মাংস, সে যুগের মানুষও লজ্জায় ম্রিয়মান হবে বর্তমানের চলমান ডিজিটাল যুগের মা-বাবার প্রতি সন্তানের নারকীয় কুৎসিত আচরণে।
এ চরাচরে সন্তান প্রসবিনী যত জীব আছে সবাই মমতাময়ী মা, প্রতিপালনকারী মা এবং সন্তানের প্রতি সংবেদনশীল মা। ধরিত্রী যেমন সর্বংসহা মা, তেমনি জননীও গর্ভধারিণী মা। পিতা জন্মদাতা ও লালনকারী জেনেও যারা অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে ভুল পথে হেঁটে পিতা-মাতাকে বিব্রত করছে, বিশ্বপিতা তাদের মার্জনা করুক।
এ মহাবিশ্বকে অপরাধ প্রবণতায় আসক্ত করার প্রধান ভূমিকাটি হলো বিভিন্ন ধরনের 'মাদক'। মাদকসেবীরা সর্ব অপরাধে পারঙ্গম। এরা পিতৃ-মাতৃহন্তা হতে পারে, সিরিজ ধর্ষক হতে পারে, ধর্ষণের পর হত্যাকারী হতে পারে। তারা বহুগামী হতে পারে। সম্পদের মোহে ‘বাবায়’ (ইয়াবায়) আসক্ত হয়ে পিতাকে হত্যা করতেও দ্বিধা বোধ করে না এবং বিরাজমান শান্ত সমাজকে মুহূর্তের মধ্যে অশান্ত করে দেয়। এই অসভ্য নেশাগ্রস্ত সম্প্রদায় দেশে মানবতার নিরেট বিপর্যয় ঘটিয়েছে। এরা দেশের শত্রু, সভ্যতার শত্রু এবং নৈতিকতার শক্র। প্রচলিত আইনের সংশোধনে এদেরকে নিধন করা জাতির জন্যে অবশ্যই মঙ্গলকর হবে। বিশ্ববিপদণ্ডহন্তার পরশে তিমির বিদারী সুপ্রভাতকে জানাই সুস্বাগতম। আমরা যেন এ বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।
বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আশীর্বাদ হলো ৫এ মোবাইল। যাহা বাস্তবে ‘অষষ রহ ড়হব’ নামে খ্যাত। এই সমাজে শিশুদেরকে এমন ভাবে আসক্ত করা হয় যেন মোবাইল ফোন ছাড়া কান্না থামে না, খাওয়া দাওয়া করে না এবং এমনিক মোবাইল ফোন ছাড়া ঘুমপাড়ানিও অসম্ভব। এভাবে মোবাইল থেকে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মিতে শিশুর দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।
অনুরূপে যুবক খোঁজে মোবাইলের মাধ্যমে যুবতী বন্ধু, যুবতীরা চায় যুবক বন্ধু কে। এক সময় তারা পরস্পরের সান্নিধ্যে এসেই আইনগতভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। অভিভাবকের গোচরে আসার পর কোনোটি গৃহীত হয়, আবার কোনোটি বা গৃহীত হয় না। অভিভাবকের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তে দেওয়া মোবাইলের অসংলগ্ন ব্যবহার প্রত্যেক পরিবারের জন্যে চরম বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে এবং চলমান সামাজিক স্বাভাবিকত্ব মলিনত্বে ঢেকে যায়।
বিজ্ঞানের এই কাঙ্ক্ষিত আশীর্বাদ অনাকাঙ্ক্ষিত অভিশাপে রূপান্তর করলে ক্রমোন্নতির পথে জগদ্দল পাথর কণ্টক হয়ে দাঁড়াবে। এর সুস্পষ্ট ইংগিত বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্যখাতসহ অনেক খাতেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। যতদিন প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাস্তরে শিক্ষাক্রমের সাথে নৈতিক শিক্ষাকে ওতপ্রোতভাবে সমন্বিত করা না হবে, ততদিন এই সামাজিক ব্যাধি চলমান থাকবে মোবাইল আসক্তিতে। ক্যালকুলেটার যেমন ছাত্রদেরকে অংক না শিখিয়ে মুহূর্তেই দিয়ে দেয় যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের ফলাফল, তেমনি মোবাইলও মুহূর্তের মধ্যে সরবরাহ করে তার পছন্দের চাহিদা। বিশ্ববিপদণ্ডত্রাণকর্তা আমাদের সহায় হোন।
.
মুশকিল আসান
বনের পশু সহাস্যে মানুষকে বলে,
এবার এসো ভাই আমরা চলি এক মিলে ॥
আমাদের সকল হিংস্রতা তোমরা করেছ হরণ,
আমরাও লজ্জা পাই দেখে মানব আচরণ।
পিতৃত্ব-মাতৃত্ব ছিলো সমভিব্যাহারে সকলের মাঝে,
সম্পদ-মোহাচ্ছন্ন মানুষ আজি হিংস্রতায় আছে সেজে ॥
সংস্কারাবদ্ধ মানব জাতি হয় বিভিন্ন ধর্মী,
লোভাতুর যারা তারাই পাশব বৃত্তিতে মর্মস্পর্শী ॥
ধড়ের সাথে লম্বালম্বি মাথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ক্যারিশমা,
অপরাপর জীব-জন্তু-পশুর মাথা-ধড় সৃষ্টি এক না ॥
জীব শ্রেষ্ঠ মানুষ অহংকার যোশে হয়ে যায় বেসামাল,
মনুষ্যত্ব বিবর্জিত পশুগুলো সভ্য সমাজের কুৎসিত জঞ্জাল ॥
নিদারুণ অমানুষিক অপরাধীরা যেনো না পায় অন্য সুযোগ,
প্রচলিত আইনের সংস্কারে তাদের সরাসরি করতে হবে চিরতরে বিয়োগ ॥
তাৎক্ষণিক বিচারে অপরাধের শাস্তি হয় দৃষ্টান্তমূলক,
প্রলম্বিত বিচার, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সার্থক ॥
তারুণ্য-সুলভ অপরাধে অপরাধী উচ্চহারে ক্রমবর্ধিষ্ণু,
মোবাইলের অপব্যবহারে যুবা-যূনী সমহারে অসহিষ্ণু ॥
বিজ্ঞানের আশীর্বাদ অজি ছুটিছে অভিশাপের গভীরতম তিমিরে,
যাঞ্ছা মোদের বিশ্ববিপদহন্তায়, জাগো মুক্তির শুভ রাঙ্গা প্রভাতে ॥
.
নিষ্কৃতি
বাঁচিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ডিজিটাল যুগে,
বিজ্ঞানের আশীর্বাদ আজি নিক্ষিপ্ত কুৎসিত অভিশাপে ॥
মানুষের মধ্যে জেগেছে পশুত্ব, রহিত আছে আবেগ,
অন্যায়ভাবে কিছু কেড়ে নিতে হারিয়েছে আপন বিবেক ॥
বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানব কল্যাণে বিস্ময়কর অতিশয়,
ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে তাণ্ডও মিথ্যা নয় ॥
উন্মুক্ত করি যেমন সাজানো কদলী বাগানের অরি,
নতুন আবিষ্কৃত ‘আইচ’ মাদকও মানব সভ্যতার বৈরি ॥
তিলে তিলে মানব সভ্যতা গড়ে উঠে আজি হয়েছে তিলোত্তমা,
নিমিষেই ধ্বংস করতে পারে বিজ্ঞানের আণবিক বোমা ॥
ঐশ্বর্যের বিলাপ সর্বত্র অতৃপ্ত জীবমানব সমাজে,
হিতাহিত জ্ঞানের বিলুপ্তি ঘটে তৃপ্ত হবার তরে ॥
দেশটাকে পথভ্রষ্ট করে ফেলেছে বিদেশী অপসংস্কৃতি,
আপন সংস্কৃতি হারিয়ে আজ আমরা খুঁজি নিষ্কৃতি ॥
বাংলার আবহমান কালের সংস্কৃতিতে বিদেশীরা সর্বদাই মোহিত,
বিশ্ববিপদহন্তা যেনো আমাদেরকে করে দেন শংকামুক্ত ॥
বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার ; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ (জে.এন.) উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।