রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

শেয়ার বাজার নিম্নমুখী হওয়ার কারণসমূহ
অনলাইন ডেস্ক

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতে শেয়ার কিনলেই দাম কমে যায়, আসলে কি তাই? আজকের আলোচনায় এ ব্যাপারে সাধারণ বিনিয়োগকারীগণকে সহযোগিতার জন্যেই এই বিনিয়োগ শিক্ষামূলক লেখনী। মূল ঘটনা হলো, যারা সঠিক দামে শেয়ার কিনতে পারেন না তাদেরই কেনার পর দাম কমে যায়। আসলে কিছু গতানুগতিক কারণে শেয়ার বাজার নিম্নমুখী হয়। আজকে কিছু বিষয় তুলে ধরব যদি সাধারণ বিনিয়োগকারীগণ মনে রাখেন ও মেনে চলেন তাহলে সফলতার সাথে এগিয়ে যাবেন বলে আশা করি।

লভ্যাংশ বিতরণ : যখন কোনো কোম্পানী তার বাৎসরিক লভ্যাংশ প্রদান করে এবং রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করে, উক্ত রেকর্ড ডেটের পরে শেয়ার মূল্য কমতির দিকে থাকে। কারণ লভ্যাংশ গ্রহণের পর ক্রেতার আগ্রহ কমতে থাকে। অথবা শেয়ার ডিবিডেন্ট পাওয়ার পর বাজার মূলধন বেড়ে যায়, ইপিএস কমার সম্ভাবনা থাকে। তাই শেয়ার মার্কেটে শেয়ার দর হারাতে থাকে।

বাজার চাহিদা : কোম্পানীর উৎপাদিত পণ্য বা সেবার বাজার চাহিদা নিম্নমুখী হলে অর্থাৎ চাহিদা কমতে থাকলে শেয়ারের বাজার মূল্য নিম্নমুখী হতে থাকে। কারণ এতে করে কোম্পানীর লভ্যাংশ কমে যেতে থাকে এবং বিনিয়োগকারীগণও স্বল্প পরিমাণে লভ্যাংশের ভাগীদার হবেন।

আন্তর্জাতিক বাজার : ব্যবসা-বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে কোম্পানীর উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমলে উক্ত কোম্পানীর শেয়ারের বাজার মূল্য নিম্নমুখী হতে থাকবে।

কাঁচামালের অনিশ্চয়তা : কোম্পানীর উৎপাদন প্রক্রিয়ার মূল উপাদান কাঁচামালের সহজলভ্যতার উপর কোম্পানীর মূল্যমান অনেকটা নির্ভরশীল। কারণ কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে বিক্রি কমে এতে কোম্পানীর লাভ কমে যায়, ফলে শেয়ারের দামের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে অর্থাৎ শেয়ারের দাম কমতে থাকে।

কোম্পানী সম্পর্কে নেতিবাচক খবর : কোম্পানীর পণ্য এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক খবর শেয়ার দরের ব্যাপক পতন ঘটাতে পারে, তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীগণকে এ ব্যাপারে কোম্পানীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সচেতন থাকতে হবে।

আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা : উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকায়ন না করলে কোম্পানীর ভালো লাভ করা সম্ভব হয় না। বর্তমান বাজারে উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিক মেশিন আবিষ্কার হয়েছে, যা পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন করেছে এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করেছে। পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করে কোম্পানী যদি আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরণ করতে না পারে, তাহলে শেয়ার বাজারে উক্ত কোম্পানীর শেয়ার দর নিম্নমুখী হবে।

কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ : অযোগ্য ও অদক্ষ কোনো ব্যক্তিকে যদি পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে শেয়ার বাজারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে এবং কোম্পানীর প্রতি শেয়ার হোল্ডারগণ তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলবেন, যার ফলস্বরূপ বাজার হবে নিম্নমুখী।

চুক্তি বাতিল : কোনো প্রকার বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল হলে কোম্পানীর মার্কেট ভ্যালুতে এফেক্ট করে। ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ার দর কমে যায়। সুতরাং কোম্পানীর প্রতিটি চুক্তি ও চুক্তির মেয়াদ, কার্য সম্পাদন সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। তা না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

নতুন বাজার ধরতে না পারা : কোম্পানীর বাণিজ্য শাখার লোকজন যদি প্রতিনিয়ত নতুন বাজার সৃষ্টি বা কাস্টমার তৈরি করতে না পারেন তাহলে ব্যবসা খারাপ হবে, দাম কমবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো দৈব দুর্যোগ আমাদের বাজারকে বড় ধরনের প্রভাবিত করে। অর্থাৎ বন্যা, খরা, মহামারীর কারণে বাজারে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ দৈব দুর্যোগে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা বা উৎপাদন সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে শেয়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যুদ্ধবিগ্রহ : দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিগ্রহ বাজার চাহিদাকে প্রভাবিত করে, আবার কাঁচামালের যোগানের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর ফলে কোম্পানীর উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। কোম্পানী ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তাই শেয়ার মূল্যে সরাসরি নেতিবাচক এফেক্ট করে।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা : বাজারে যদি নতুন করে বড় কোনো বিনিয়োগকারী আসে এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে, যা মোকাবেলা করা বর্তমানে কোম্পানীর সক্ষমতা নেই তাহলে তা কোম্পানীর অর্থনৈতিক কাঠামোতে আঘাত হানবেই।

বৈদেশিক বিনিয়োগ হারানো : কোনো কোম্পানীর বৈদেশিক বিনিয়োগকারীগণ যদি তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ প্রত্যাহার করে তাহলে শেয়ার বাজারে নিম্নমুখী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাবে।

উদ্যোক্তাদের শেয়ার হ্রাস : কোম্পানীর উদ্যোক্তাগণ যদি তাদের ধারণকৃত অংশের শেয়ার বাজারে ছেড়ে দিয়ে নগদায়ন করে তাহলে বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাবে।

অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি : দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে কোম্পানীর শেয়ারের বাজার দর পড়ে যায় অর্থাৎ নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

নীতিমালার প্রভাব : আমাদের দেশে সরকারি অথবা ব্যাংকবীমা কোম্পানীর বিভিন্ন ব্যবসায়িক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে কোম্পানীর উৎপাদন পর্যায়ের পরিবর্তন হয়। আবার সরকারের কর কাঠামো বা ব্যাংকের সুদ কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে নিম্নমুখী ধারা পরিলক্ষিত হয়।

সর্বশেষে আমরা বলতে পারি, এই অর্থবাজার একটি অতি সংবেদনশীল বাজার। এখানে উপরোক্ত যে কোনো ধরনের পরিবর্তন মার্কেটকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই আমাদেরকে বিনিয়োগ মুহূর্তে উপরের বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। নিজের পুঁজিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। ওয়ারেন বাফেটের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি, ‘সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, তুমি কী করছো সেটা না জানা’।

মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার : হেড অব অপারেশন ও সহকারী অধ্যাপক, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়