শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০

শিক্ষার একাল-সেকাল
অনলাইন ডেস্ক

প্রাচীন বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যারম্ভ হতো ‘মা’-এর উদ্দীপনায় মায়েরই হাতে। এখন একেই মার্জিত ভাবে বলে Oral Learning । এরপর শিক্ষাগ্রহণ করা হতো গুরু গৃহে। এ শিক্ষাগুলো ছিল প্রধানত নৈতিকতা ভিত্তিক। এরপর এলো শিক্ষালয় ভিত্তিক স্তরান্তরিত শিক্ষা, যা প্রাথমিক শিক্ষা নামে খ্যাত।

আজকাল সেই প্রারম্ভিক নৈতিক শিক্ষাটাকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে; একটা হলো ‘প্রাক্-প্রাথমিক’, যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। দ্বিতীয়টি হলো প্রাথমিক আরবী শিক্ষালয়, যা এই বাংলায় প্রতি গ্রামে গ্রামে কয়েকটি করে আছে। আরবী শিক্ষালয়ের মধ্যে কেজি জাতীয় শিক্ষাও সংযোজিত আছে। তৃতীয়টি হলো প্রাথমিক বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার কেজি শিক্ষালয়। প্রতিটিতে তিন বছরের জন্য তিনটি ধাপ যথা প্লে-নার্সারী-কেজি। তারপর পর্যায়ক্রমিক শিক্ষার প্রথম ধাপ প্রথম শ্রেণী। এ থেকে বুঝা যায় যে, প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রমে সময় লাগে আট বছর। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সময় লাগে মাত্র ছয় বছর। পার্থক্যটা বিশেষ করে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। প্রতি শ্রেণীতে বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র নামক দুই খানা অতিরিক্ত বই পাঠ্য করেই মূল পার্থক্য দেখানো হচ্ছে এবং দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বেসরকারি শিক্ষালয়গুলোর শিক্ষা প্রদানের মান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাইতে উন্নত।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা অবৈতনিক, কিন্তু ব্যাপক হারে গড়ে ওঠা বে- সরকারি প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষালয়গুলোতে স্ববেতনে পড়তে হয়।

একই অনতিক্রান্ত বৃত্তে এত ধরনের শিক্ষাক্রম চালু থাকলে মৌলিক প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি কতটা দৃঢ়-মজবুত হবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচ্য। অন্তত প্রাথমিক শিক্ষার একটা যুক্তিসঙ্গত সমন্বয় সাধন অতীব জরুরি এবং জাতীয় প্রয়োজন। নতুবা মৌলিক প্রাথমিক শিক্ষাটা অবহেলিত থেকে যাবে। যার মন্দ প্রতিফলন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়বে।

১৯৪৭ সাল পরবর্তী কালেও এদেশে তিন ধরনের শিক্ষার প্রচলন ছিল : ১। মক্তব এবং মাদ্রাসায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, ২। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও ৩। টোলে শিক্ষা যা ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। তখন মক্তবে আরবী প্রাথমিক শিক্ষা শেখানো হতো এবং মাদ্রাসায় এফ.এম. পর্যন্ত পড়ানো হতো। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল এবং ধর্ম পড়ানো হতো। চতুর্থ শ্রেণী থেকে ইংরেজি পড়ানো হতো। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী তথা মেট্রিকুলেশান পর্যন্ত সকল শ্রেণীতেই বাংলা-অংক-ইংরেজি-ইতিহাস-ভূগোল এবং ধর্ম সহ মোট আটশত নম্বরের পরীক্ষা হতো। এ রীতি প্রচলিত ছিল ১৯৬৪ সালে এস.এস.সি. প্রচলন হওয়া পর্যন্ত।

মাদ্রাসায় এফ.এম. পাস করে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে এসে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অধিকাংশ ভাল ফলাফল করে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে জীবনে উত্তম রূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উদাহরণ অনেক আছে। কারণ তাঁরা ধর্মীয় এবং জেনারেল উভয় শিক্ষায় পারদর্শী ছিল।

মেট্রিকুলেশান পদ্ধতিতে ইতিহাস, ভূগোল, ধর্ম, অংক, বাংলা এবং ইংরেজি সবক’টি আবশ্যিক ছিল। ইংরেজি ১ম পত্রে ৬০ নম্বর টেক্সট বুকের আর ৪০ নম্বর ছিল সম্পূর্ণ গ্রামার। এখানে উল্লেখ্য যে, গ্রামারের মধ্যে সিলেবাস বলতে কিছুই ছিল না। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে পুরোটাই ছিল Unseen । যেমন Passage Translation -এ ছিল পঞ্চাশ, Essay তে ছিল পঁচিশ, Letter -এ ছিল পনের এবং Precises -এ ছিল দশ নম্বর মিলে শত নম্বর। এস.এস.সি. প্রবর্তিত হওয়ায় Matriculation -এর বিলুপ্তি ঘটে।

বর্তমানে প্রচলিত সর্বস্তরে Comprehensive Type of Education এবং সৃজনশীলতার সাথে উপরোক্ত শিক্ষা পদ্ধতি, আর আমাদের সংস্কৃতির প্রায় অনুরূপ সংস্কৃতি সম্পন্ন দেশের শিক্ষা নীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়া উচিত। পত্র পত্রিকায় যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে, ততটুকুতে ড. মোঃ কুদরত-ই-খোদার প্রণীত শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট আমাদের জন্য প্রযোজ্য বলে মনে হয়। আমাদের দেশে গঠিত যে কোনো কমিশনের রিপোর্ট আলোর মুখ দেখতে দেখতে অস্তগামী সূর্য কিরণের ন্যায় তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। কারণ আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনের প্রাধান্যে এটাই বৈশিষ্ট্য।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও লেখক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়