প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
॥ তিন ॥
সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজসেবামূলক সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় কোনো সংগঠনের পক্ষে প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ, প্রতি পক্ষ ও প্রতিমাসে সাধারণত অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। তারপরও ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর কমপক্ষে মাসে একটি বা একাধিক অনুষ্ঠান করে আসছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকে ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হবার পূর্ববর্তী মাস ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। করোনার কারণে সাহিত্য একাডেমীর গতিশীলতা অন্যান্য সংগঠনের মতোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও করোনাকালীন থেমে থেমে সাহিত্য একাডেমী উল্লেখযোগ্য এমন কিছু কাজ করেছে, যেগুলো ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবার মতো।
১৯৮৬ সালের ৬ জুলাই সাহিত্য একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর ২০১২ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ২৫ বছরে এর কার্যক্রমে স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো না। ২০১০ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চাঁদপুরের ষোড়শ জেলা প্রশাসকের দায়িত্বপালনকালে প্রিয়তোষ সাহা সাহিত্য একাডেমীর স্থায়ী আয় সৃষ্টির লক্ষ্যে এই একাডেমীর বেহাত হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করে একটি গ্যারেজ নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তখন মহাপরিচালক ছিলেন চাঁদপুর সদরের ইউএনও শাহীনুর শাহীন খান। একাডেমীর আর্থিক অনটন সত্ত্বেও সভাপতি হিসেবে প্রিয়তোষ সাহা সাহিত্য আসর, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও পিঠা উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেন। চাঁদপুরে তাঁর কর্মকালের শেষ দিকে ও তিনি বদলি হয়ে চলে যাবার পর সাহিত্য একাডেমীর গতিশীলতা ব্যাহত হলে স্থানীয় লেখকসহ সুধী সমাজ নানাভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। যে কারণে ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর প্রিয়তোষ সাহার স্থলাভিষিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন বিব্রত বোধ করেন। তিনি তাঁর দায়িত্বগ্রহণের পর সভাপতি হিসেবে সাহিত্য একাডেমীকে চাঙ্গা করতে তৎকালীন মহাপরিচালক শাহীনুর শাহীন খানকে নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি (মহাপরিচালক) একাডেমীর গঠনতন্ত্রকে যথাযথ অনুসরণ না করে সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রয়াস চালিয়ে পুরাতন ও নূতন সদস্য মিলিয়ে ১৪১ জন সাধারণ সদস্যের তালিকা প্রস্তুত করেন এবং সভাপতির অনুমতিক্রমে ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে সাধারণ সভা আহ্বান করেন। যে সভায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বঙ্গাব্দ ১৪২০-১৪২১ অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল ২০১৩ থেকে ১৪ এপ্রিল ২০১৫ মেয়াদের জন্যে সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি, সহ-সভাপতি, মহাপরিচালক, ৩ জন পরিচালক ও দশজন নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর প্রতিষ্ঠার পর এটাই ছিলো প্রথম কোনো নির্বাচন। এর পূর্বে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি দিয়েই চলছিলো কার্যক্রম। মনোনীত কমিটিতে লেখকদের চেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রাধান্য ছিলো। বস্তুত এ কারণেই কার্যক্রমে ছিলো না গতিশীলতা। ২০১৩ সালে নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব নিয়ে একাডেমীকে চাঙ্গা করতে এমন কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সেটা নিয়ে ভাবতে থাকে। বিশেষ করে সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনায় একাডেমীকে ঋদ্ধ করার প্রয়াস চালান। তিনি জেলা শিক্ষা অফিসার শফিউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে অর্থ সংস্থান করে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার প্রবর্তন করেন। তিনি ২০১৪ সালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা চাঁদপুর জেলা থেকে সাহিত্যমনা ছেলে-মেয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। গত দু’বছর যাবৎ আমরা সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার দিয়ে আসছি। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে সাহিত্য-চেতনা ছড়িয়ে দেয়া। আমরা সবসময়ই চেষ্টা করছি সাহিত্য একাডেমীর কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে। আমাদের এই প্রচেষ্টা আগামী দিনেও আমরা অব্যাহত রাখবো। আমরা খুবই আনন্দিত যে, আজ আমরা পাঁচটি বিভাগে মোট ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে সাহিত্য পুরস্কার দিতে পেরেছি, যেটি তাদের জন্যে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
সত্যিই এ পুরস্কার অনেকের জন্যে অফুরন্ত অনুপ্রেরণা হিসেবেই কাজ করে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, রফিকুজ্জামান রণি ও আশিক বিন রহিম আজ চাঁদপুরে সুপ্রতিষ্ঠিত লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা কেবল অব্যাহত সাহিত্য চর্চা ও পুস্তক প্রকাশনাতেই সাফল্য দেখায়নি, সংগঠক হিসেবেও অবদান রেখে চলছে।
২০১৫ সালের ২ জুলাই জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেনের পদোন্নতিজনিত বদলিতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল। তিনি দায়িত্বগ্রহণ করার পর সভার পর সভা করে চাঁদপুরের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্রীড়া মাস ও সাংস্কৃতিক পক্ষ আয়োজনে বেশি জোর দেন। তিনি চাঁদপুর জেলাকে সরকারি নির্দেশের আলোকে প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলায় পরিণত করার কাজটিতে সবিশেষ মনোযোগী হন। তিনি সরকারি অনুমোদনক্রমে এ জেলার ব্র্যান্ডিংকৃত নাম দেন ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’। এজন্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডিং বুক, ইলিশ বিষয়ক নানা প্রকাশনা, জাতীয় পর্যায়ে ব্র্যান্ডিং ফেস্টিভ্যাল এবং জেলা পর্যায়ে সাহিত্য একাডেমী ও শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে জাতীয় মানের সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করেন। এভাবে চাঁদপুরে তাঁর ব্যস্ততম কর্মকাল (২ বছর ৮ মাস) নিমিষেই যেনো কেটে যায়। যুগ্ম সচিব হিসেবে তাঁর পদোন্নতিজনিত বদলির প্রাক্কালে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ তাঁকে সাহিত্য একাডেমীর পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুরের কার্যক্রম দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে জেলা প্রশাসনকে চাঁদপুরের লেখকরা তাঁদের মেধা দিয়ে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছেন। সেজন্যে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঈনুল হাসান বলেন, চাঁদপুরে আসার আগেই আমি চাঁদপুরের শিল্প-সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। চাঁদপুরের সাহিত্যকর্মীদের জাতীয় অঙ্গনে সরব পদচারণা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মণ্ডলের চাঁদপুরের কর্মকালের শেষ সময় সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আসরে পঞ্চাশ সংখ্যাপূর্তি হয়। তাঁর বদলির বছর (২০১৮)-এর শেষ দিকে সাহিত্য আসরের পাঁচ বছর পূর্তি হয়। এ উপলক্ষে পত্রিকায় প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের বাণী ছাপা হয়। তাতে তিনি লিখেন, শিল্প-সাহিত্যের উর্বর ভূমি চাঁদপুর। দীর্ঘকাল ধরে এ জেলা অনেক গুণী সাহিত্যিককে বুকে ধারণ করে আছে। পূর্বসূরিদের ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরে বর্তমানেও ভালোভাবে সাহিত্যের চর্চা হচ্ছে। এ জেলার তরুণরা সাহিত্য চর্চায় জাতীয় পর্যায়েও অবস্থান করে নিয়েছে-এটি আমাদের জন্যে অনেক আনন্দের সংবাদ। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সবসময়ই লেখকদের পাশে ছিলো, আছে এবং থাকবে। ২০১৪ সাল থেকে জেলার সাহিত্য অনুরাগীদের নিয়ে প্রতি মাসের শেষ বুধবার সাহিত্য আসরের আয়োজন করে আসছে সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ এ আসরের পাঁচ বছরপূর্তি। এটি আমাদের জন্যে আশা-সঞ্চারী সংবাদ। কেননা শিল্প-সাহিত্যেরর চর্চা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাহিত্যের আলোয় দেশ ও জাতি আলোকিত হয়। তাই সাহিত্য আসরের পাঁচ বছর পূর্তির এমন মাহেন্দ্রক্ষণে আমি একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতসহ সকল কবি ও লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। মানসম্মত সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে লেখকরা চাঁদপুরের সুনাম জাতীয় পর্যায়ে আরো বৃদ্ধি করবে-এই প্রত্যাশা ও শুভ কামনা রইলো।
উক্ত ক্রোড়পত্রে আমি (মহাপরিচালক) ‘অপ্রাপ্তি নেই, প্রাপ্তিতেই ঋদ্ধ যে আসর’ শিরোনামে লিখি, চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদনায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ব্যস্ত সময় পার করি। একদিন সন্ধ্যায় অফিস সহায়ক এসে বললো, স্যার! একজন কবি আপনার সাক্ষাৎ প্রার্থী। আমি সম্পাদনার কাজে ছেদ ঘটিয়ে সে কবিকে আমার মুখোমুখি এনে বসালাম। তিনি বললেন, সাহিত্য একাডেমীর আসন্ন সাহিত্য আসরে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করতে চাই। আমি এক কথায় রাজি হলাম। তিনি আসরে আসলেন সদলবলে এবং স্থানীয় সাহিত্য বোদ্ধাদের নজর কাড়লেন। পরবর্তী সাহিত্য আসরগুলোতে তার নিয়মিত উপস্থিতিতে গতিশীল হলো তার সাহিত্য চর্চা এবং গঠনমূলক সমালোচনায় তার লেখা হতে থাকলো মানসম্পন্ন। একদিন দেশের প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের সাহিত্য পাতায় দেখলাম তার বিরাট লেখা এবং তারপর আরো ক’দিন শেষে বাংলা একাডেমির একুশের গ্রন্থ মেলায় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখলাম তার একটি বড় বই। (উল্লেখ্য, বর্তমানে মাইনুল ইসলাম মানিক নামের এই লেখক চাঁদপুরের সক্রিয় সাহিত্য সংগঠন সাহিত্য মঞ্চের সভাপতি ও দুটি সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তা)
পাঁচ বছরে সাহিত্য আসরের প্রায় প্রতিটিতে কেউ না কেউ নূতন এসে যোগদান করছে। একদিন দেখলাম, মধ্য বয়স্ক এক ভদ্রলোক সাদামাটা শব্দ চয়নে ধারালো বক্তব্যের কবিতা নিয়ে হাজির হলেন। ভালো-মন্দ সমালোচনায় তিনি কবিতার খুঁটি কেবল শক্ত করে চললেন। আমি বিস্মিত হলাম। অন্যরাও হলো। সুখের কথা, যোগ্যতার বিচারে পুরস্কৃত হয়ে তার কাব্যগ্রন্থ সহসাই পাঠকদের হাতে আসছে (এ লেখক ইকবাল পারভেজ, যিনি জেলা প্রশাসকের পাণ্ডুলিপি পুরস্কার বিজয়ী)।
স্থানীয় লেখকদের লেখাকে এভাবে মানে পৌঁছানোর জন্যে সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আসরের প্রাগুক্ত অবদানের সব ক'টি গল্প যদি এভাবে বয়ান করতে যাই, তাহলে এই লেখাটির শিরোনাম ‘সাহিত্য আসরের ফজিলত’ বলতে কারো মুখেই ঠেকবে না। সর্বশেষ বলতে চাই, সাহিত্য আসরের বহুবিধ প্রাপ্তি ছাড়া কোনো অপ্রাপ্তি নেই।
‘আমাদের সাহিত্য আড্ডা’ শিরোনামে বিদগ্ধ লেখক ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া লেখেন, সৃজনশীলতার ¯্রােত অনিরুদ্ধ। কালের ঊষরতাকে কাটিয়ে সাহিত্যিক সৃজন-স্রোত ধেয়ে চলে আপন গন্তব্যপথে। চাঁদপুরের সাহিত্যস্রোত আপন গন্তব্যে ধাবনে পেয়ে গেছে কালের ‘পানসি’কে। চাঁদপুরের ঋদ্ধিমান সাহিত্যের এই ‘পানসি’ মানে হলো নবপর্যায়ের ‘সাহিত্য আড্ডা’। সৃজনশীলতার নির্বিরতি যাত্রায় প্রাণের সাহিত্য আড্ডা আজ ছুঁয়ে গেছে ষাটতম আসরের পরিপক্বতাকে। এই সাহিত্য আড্ডার সূতিকাগৃহ হতেই সাহিত্যিক কর্মপ্রবাহ কৈশোর কাল অতিক্রম করে উপনীত হয়েছে জাতীয় সাহিত্যমানের উচ্চতায়। তাই চাঁদপুরের সাহিত্যের জাগরণে সাহিত্য আড্ডার গর্ভধারিণীর ভূমিকার কোনো তুলনা নেই।
প্রতি মাসের শেষ বুধবারের অপরাহ্নিক সৃজনশীলতার আড্ডাচক্র লিখিয়েদের নতুন ফসলের নবান্নে যেমন মৌ-মৌ করে তেমনি আলোচকবৃন্দের নির্মোহ ব্যবচ্ছেদে অপরিপক্ব সৃজনশস্যও অর্জন করে পরিপক্বতার তীর্থ। নবপর্যায়ের সাহিত্য আড্ডা কেবল নতুন সাহিত্যিকের সূতিকাগারই নয়, বরং তৈরি করেছে সাহিত্য সমালোচকের মতো ক্ষুরধার বিশ্লেষণী সাহিত্য ভাষ্যকারকেও। এর কারণেই জন্ম হয়েছে বেশ কয়েকটি ছোটকাগজ। যেগুলো জাতীয়মান পেরিয়ে আদৃত হয়েছে বোদ্ধামহলে। নতুন কেউ আসে আর পুরোনো কেউ চলে যায়থ এরকম সাংখ্যিক সমীকরণ তৈরি করে সাহিত্য আড্ডা আজ অবিরত ও অনিবার হয়ে আছে সাহিত্য সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয়তা ও আন্তরিকতায়।
নিয়মিত ও ধারাবাহিকতাকে বিজিত করে সাহিত্য আড্ডা আজ নবতারুণ্যে উদ্বেল হয়ে উঠেছে। সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালকের দৃঢ়তায় এবং কবি সৌম্য সালেকের সঞ্চালনায় নবপর্যায়ের সাহিত্য আড্ডা হয়ে উঠেছে আমাদের প্রাণের সুহৃদ। এরই টানে, এরই মোহে আমরা ছুটে যাই মুগ্ধ প্রণয়ীর মতো সাহিত্যের সৃজনশস্যের আবাদের অভিপ্রায়ে। আমাদের সাহিত্য আড্ডা চিরজীবী হোক, চিরকালীন হোক। শতবর্ষের মাইলফলক স্পর্শ করা শুধু নয়, আমাদের সাহিত্য আড্ডা হতেই তৈরি হোক নিরন্তর নবীন লিখিয়ে, নবীন স্বপ্নের সামর্থবান সারথি।
নদীমাতৃক ভূগোলের এই জনপদে পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার তিন সমাহারকে বিজ্ঞাপিত করে গড়ে উঠা চাঁদ সওদাগরের চাঁদপুর আজ সাহিত্য আড্ডার বদৌলতেই পেয়ে গেছে প্রথম চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলন। যা নিঃসন্দেহে এ জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। সাহিত্য আড্ডার শক্তিময়তার কারণেই পাণ্ডুলিপি পুরস্কারের প্রবর্তন হয়েছে। সাহিত্য আড্ডার সৃজনশীল চর্চার বলেই চাঁদপুরে আজ ঘটে গেছে লিটলম্যাগ বিপ্লব। প্রতিমাসের এই আয়োজনেই মূর্ত হয়ে উঠে বিভিন্ন দিবস ও খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্মদিন-প্রয়াণের স্মরণ-সন্ধ্যা। সাহিত্য আড্ডাই আমাদের মাঝে ফলাহারের মধ্য দিয়ে জীবন্ত করে তোলে মধুমাসকে, রোমাঞ্চ নিয়ে আসে পিঠে-পুলিভরা নবান্নকে। আমাদের সাহিত্য আড্ডা তাই কেবল সৃজনের নয় পালনের, কেবল আবাদের নয় আহ্বানের। (চলবে)