প্রকাশ : ১১ মে ২০২২, ০০:০০
পিতার শুক্রাণু আর মাতার ডিম্বাণু মিলে 'জাইগোট' সৃষ্টি হয়ে মাতৃ জঠরে যে ভ্রুণ জন্মে, তাতেই ভবিষ্যৎ মানব সন্তানের উদ্ভব। মঙ্গল মত ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শৈশব, কৈশোর, বাল্যকাল, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব এবং বার্ধক্য ধাপে ধাপে অতিক্রান্ত হয়। তবে কিশোর বয়স থেকেই জীবন গঠনের পথে আগুয়ান হতে হবে। একটি অবশ্য পালনীয় উক্তি হলো, “আমাদের কাজ হবে হাতের কাছে যে কাজটি আছে তা সুষ্ঠুভাবে করে ফেলা, সুদূর ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভালো।”
ওমর খৈয়াম বলেছেন, “অতীত মৃত, ভবিষ্যৎ অনাগত, সুতরাং সুন্দর বর্তমান ফেলে রেখে কোনো কিছুর জন্য অনুশোচনা করো না। বর্তমানে কাজে নিযুক্ত থাকাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং উন্নত জীবনের চাবিকাঠি।'' অর্থাৎ সফল বর্তমান উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে টেনে আনবেই। যার বর্তমান কদর্য তার ভবিষ্যৎও কদর্য হইবে। বাল্যকালে অধ্যয়ন, কৈশোরে জ্ঞান আহরণ, যৌবনে ভোগ বিলাস ও সংসারের দায়িত্ব পালন, বার্ধক্য পর্যন্ত সর্বাবস্থায় ধর্মচর্চা করে যাওয়াই নিয়ম। কারণ জীবনের লক্ষ্যই হলো মৃত্যু।
লালন ফকিরের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে “সময় গেলে সাধন হবে না।” বাল্যকালের নৈতিক শিক্ষা, তারুণ্যের দেশপ্রেম শিক্ষা এবং যৌবন কালের জনহিতকর সামাজিক কাজ-কর্মগুলোর কোনোটাইতো তরুণ সম্প্রদায় আক্ষরিক অর্থে যথার্থ ভাবে শিখেনি। বিদেশী সংস্কৃতি মাথায় নিয়ে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে এদেশের তরুণ সমাজ কি জাতীয় সম্পদ হতে পেরেছে?
আজকালকার অভিভাবকগণ মনে করেন, তাদের জীবনের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, ছেলেমেয়েরা সু-শিক্ষায় (?) শিক্ষিত হয়েছে, ভাল চাকুরি পেয়েছে এবং প্রচুর আলগা অর্থ উপার্জন করছে। এসব আলগা অবৈধ রোজগারের অর্থ দিয়ে ভোগ বিলাসের দাসত্ব করে যদি সমগ্র জাতির রক্ত শোষণ করে পরগাছার মত বড় হয়ে উঠে, তাদের কাছ থেকে দেশ-জাতি কী-ই বা আশা করতে পারে? শ্রমের প্রতি ভালবাসাকে ভুলে গিয়ে অবৈধ রোজগারের পঙ্কিলতাকেই আলিঙ্গন করেছে। আর স্বার্থপরতার স্রোতে গা ভাসিয়ে যৎপর নাস্তি অধঃপতনের শেষ সীমানায় পৌঁছেছে। আর নীচে নামার জায়গা নেই। ছোট ছোট প্রকল্পগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট, কাবিখা বন্টনে মারাত্মক অনিয়ম, বয়স্ক-ভাতা বন্টনে অনিয়ম এবং নিচের অনিয়মগুলোর বর্ণনা দিতে মানসিকতায় বাঁধে।
একজন জনপ্রতিনিধি কি নিতান্তই বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সহকারে চাপিয়ে দেওয়া কাজ করে থাকে? বরং চলমান অবস্থা বিপরীত মেরুর। যাদের মধ্যে আত্ম সচেতনতা নেই, বিশ্বাস নেই, যারা নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে, তারাই অলস ও কর্মবিমুখ হয়। তারা ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলে। কাজের প্রতি ভালবাসা হলো নৈতিক গুণ, যা সমাজ জীবনেই গড়ে উঠে।
আজকের এদেশের তরুণ সম্প্রদায়ের নব জাগরণ অতীব প্রয়োজন। এ দেশের যত সামাজিক রেনেসাঁ, পট পরিবর্তনের রেনেসাঁ, রাজনৈতিক রেনেসাঁ সর্ব রেনেসাঁর অগ্রদূত এদেশের সাহসী তরুণ সম্পদ্রায়। “যদি কোন মানুষকে সিংহ হতে দেওয়া না হয় তবে সে ধূর্ত শিয়ালে পরিণত হবে” প্রবাদ বাক্যটি বর্তমান সময়ের পক্ষে সুপ্রযুক্ত। যে গুণোত্তর ধারায় এদেশের জনহিতকর সর্ব কার্য দুর্নীতির মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তাতে সাহসী তরুণ সম্প্রদায়ের বীর কেশরী মূর্তিতে জাগরণই এ সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।
সরকারের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা অসম্ভব। কারণ সর্ষের ভূত তাড়াতে হলে কিছু জাগতিক তন্ত্রমন্ত্র প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জাগো জাগো এদেশের তরুণ সম্প্রদায়! দুর্নীতি দমনের দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে তোমরা এগিয়ে এলে দুর্নীতিমুক্ত হবেই এ সোনার বাংলা। তরুণ ও যুবক সম্প্রদায়ের যুগান্তকারী তেজোদ্দীপ্ত রেনেসাঁয় বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনকে ঊনসত্তরের সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একাত্তরের স্বাধিকার আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাত্র আট মাসের প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, প্রতিশোধ এবং প্রতিকারের যে বীরত্বগাথা উদাহরণ রয়েছে তা সোহরাব-রুস্তমীয় কিংবা আরব্য উপন্যাসের কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়েছে। এদেশের সেই শের উপনীত তরুণ সম্প্রদায়কে অভিহিত করা হতো 'বিচ্ছু' হিসেবে। সূর্যসেন, বিনয়, বাদল, দীনেশ, লোকনাথ বল, বাঘা যতিন প্রমুখ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ত্রাস সৃষ্টিকারী তরুণ-যুবক সম্প্রদায়ের অবিশ্বাস্য বীরত্বগাথা কাহিনী থেকে প্রেরণার আবেশে আগুয়ান হতে হবে। একমাত্র বাংলার তরুণ এবং যুবক সম্প্রদায় সচেষ্ট হলেই দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশটা বিশ্বে অনন্যতার সত্যায়ন অটুট রাখতে সক্ষম হবে।
বিমল কান্তি দাশ : লেখক ও কবি; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।