প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
লাইলাতুল ক্বদর আরবি শব্দ। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। ফার্সি ভাষায় শাব ও আরবি ভাষায় লাইলাতুল অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী। অন্যদিকে ‘ক্বদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এছাড়া এর অন্য অর্থ হলো ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মতদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এ রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর মাহে রমজানে এ মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল ক্বদর মুসলিমদের জন্যে সৌভাগ্য বয়ে আনে।
ক্বদরের এক অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। কেউ কেউ এ-স্থলে এ অর্থই নিয়েছেন। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে একে ‘লাইলাতুল-ক্বদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। ক্বদরের আরেক অর্থ তাকদীর এবং আদেশও হয়ে থাকে। এ রাত্রিতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয়। (সা’দী)।
পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, ফিহা ইউফরকু কুল্লু আমরিন হাকিম। (সূরা আদ দোখান : ৪)। এ আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, পবিত্র রাত্রে তাকদীর সংক্রান্ত সব ফয়সালা লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রাত্রিতে তাকদীর সংক্রান্ত বিষয়াদি নিষ্পন্ন হওয়ার অর্থ এ বছর যেসব বিষয় প্রয়োগ করা হবে, সেগুলো লওহে মাহফুজ থেকে নকল করে ফেরেশতাগণের কাছে সোপর্দ করা। নতুবা আসল বিধিলিপি আদিকালেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। (ইমাম নববী : শারহু সহীহ মুসলিম, ৮/৫৭)।
৬১০ সালে শবে ক্বদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরাগুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট সর্বপ্রথম কুরআন নাজিল হয়। সর্বপ্রথম তাঁর নিকট প্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। এ রাতে ফেরেশতা জীবরাইল (আঃ)-এর নিকট সম্পূর্ণ কোরআন অবতীর্ণ হয়, যা পরবর্তীতে ২৩ বছর ধরে নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়।
মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারণে বহু বছর আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। কোরআন ও হাদীসের বর্ণনায় জানা যায়, ইসলামের চারজন নবী যথা আইয়ুব, জাকরিয়া, হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই আশি বছর আল্লাহর ইবাদত করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোনো প্রকার পাপ কাজ করেননি। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে আল্লাহর ইবাদত করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভবপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এ আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দূর করার জন্যে সুরা ক্বদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ণনায় জানা যায়।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা ক্বদর নামে একটি সূরা নাজিল করা হয়েছে। সূরাটির শানে নূযুল হলো : ইবনে আবী হাতেমণ্ডএর রেওয়ায়েতে আছে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার বনী ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনও অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানগণ এ কথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা ক্বদর অবতীর্ণ হয়। এতে এ উম্মতের জন্যে শুধু এক রাত্রির ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ইবনে জরীর অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি ইবাদতের মশগুল থাকতো ও সকাল হতেই জিহাদের জন্যে বের হয়ে যেতো এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকতো। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা’য়ালা সূরা ক্বদর নাজিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ থেকে আরও প্রতীয়মান হয় যে, শবে ক্বদর উম্মতে মুহাম্মদীরই বৈশিষ্ট্য।
সূরা ক্বদরে মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন-
১. আমি কুরআনকে ক্বদরের রাতে নাজিল করেছি।
২. তুমি কি জানো ক্বদরের রাত কী?
৩. ক্বাদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম।
৪. এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ তাদের রব-এর অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়।
৫. (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।
নিম্নে উক্ত সূরার আয়াতের আলোকে কিছু আলোকপাত করা হলো-
১. এখানে বলা হয়েছে, আমি ক্বদরের রাতে কুরআন নাজিল করেছি। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘রমজান মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে’। (সূরা আল বাকারাহ : ১৮৫)।
এ থেকে জানা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হেরাগুহায় যে রাতে আল্লাহর ফেরেশতা অহী নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিলো রামাদান মাসের একটি রাত। এ রাতকে এখানে ক্বদরের রাত বলা হয়েছে। সূরা দেখানে এটাকে মুবারক রাত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘অবশ্যি আমরা একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাজিল করেছি।’ (সূরা আদ দোখান : ৩)। এ আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, কুরআন পাক লাইলাতুল-ক্বদরে অবতীর্ণ হয়েছে। এর এক অর্থ এই যে, সমগ্র কুরআন লওহে মাহফুজ থেকে লাইলাতুল-ক্বদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতঃপর জিবরাঈল একে ধীরে ধীরে তেইশ বছর ধরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছাতে থাকেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, এ রাতে কয়েকটি আয়াত অবতরণের মাধ্যমে কুরআন অবতরণের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়ে যায়। এরপর অবশিষ্ট কুরআন পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে পূর্ণ তেইশ বছরে নাজিল করা হয়। (আদ্ওয়াউল বায়ান)।
২. কুরআন পাকের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, লাইলাতুল-ক্বদর রামাদান মাসে। কিন্তু সঠিক তারিখ সম্পর্কে আলেমগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে, যা সংখ্যায় চল্লিশ পর্যন্ত পৌঁছে। এ-সব উক্তির নির্ভুল তথ্য এই যে, লাইলাতুল-ক্বদর রামাদান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে; কিন্তু এরও কোনো তারিখ নির্দিষ্ট নেই; বরং যে কোনো রাত্রিতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রামাদানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। সহীহ হাদীসদৃষ্টে এ দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল-ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল-ক্বদর অন্বেষণ কর।’ (বুখারী : ২০২১)।
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা তা শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে তালাশ করো’। (বুখারী : ২০২০, মুসলিম : ১১৬৯, তিরমিয়ী : ৭৯২)।
সুতরাং যদি লাইলাতুল-ক্বদরকে রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রামাদানে পরিবর্তনশীল মেনে নেয়া যায়, তবে লাইলাতুল-ক্বদরের দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদীসসমূহের মধ্যে কোনো বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। এটিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। (ইবন হাজার : ফাতহুল বারী, ৪/২৬২-২৬৬)।
৩. মুফাসসিরগণ এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ ক্বদরের রাত নেই এমন হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো। (মুয়াসসার)। এ শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। হাদীসে এসেছে, রামাদান আগমনকালে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের নিকট রামাদান আসন্ন। মুবারক মাস। আল্লাহ্ এর সাওম ফরজ করেছেন। এতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে বেঁধে রাখা হয়। এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাত্রির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে তো যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।’ (নাসায়ী : ৪/১২৯, মুসনাদে আহমাদ : ২/২৩০, ৪২৫)।
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল ক্বদর রাত্রিতে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারী : ১০৯১, মুসলিম : ৭৬০, আবু দাউদ : ১৩৭২, নাসায়ী : ৮/১১২, তিরমিয়ী : ৮০৮, মুসনাদে আহমাদ : ২/৫২৯)।
৪. (ক) ‘আর রুহ’ বলে কি বুঝানো হয়েছে মতপার্থক্য থাকলেও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো এর দ্বারা জিবরাঈলকে বোঝানো হয়েছে। জিবরাঈল আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরাঈলের সাথে ফেরেশতারাও সে রাত্রিতে অবতরণ করে। (ফাতহুল কাদীর)।
হাদীসে আছে, “লাইলাতুল-ক্বদরের রাত্রিতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এতো বেশি অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি।” (মুসনাদে আহমাদ : ২/৫ : ১৯, মুসনাদে তা’য়ালাসী : ২৫৪৫)।
(খ) সকল সিদ্ধান্ত বা প্রত্যেক হুকুম বলতে অন্যত্র বর্ণিত ‘আমরে হাকীম’ (বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ) [সূরা আদণ্ডদোখান : ৪], বলতে যা বুঝানো হয়েছে তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফেরেশতাগণ শবে-ক্বদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলি নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে। কোনো কোনো তাফসীরবিদ একে ‘ছালাম’-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এ অর্থ করেছেন যে, এ রাত্রিটি যাবতীয় অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে শান্তিস্বরূপ। (ইবন কাসীর)।
৫. অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। সে রাত্র সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত। (তাবারী)। অর্থাৎ লাইলাতুল-ক্বদরের এই বরকত রাত্রির শুরু অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর হতে ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত। (সা’দী)।
উল্লেখ্য, কুরআন নাযিলের এ মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিয়মিত জিবরাঈল (আঃ)-এর কাছে কুরআন পড়ে শোনাতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, জিবরাঈল (আঃ) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কাছে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। এ সময় নাবী (সাঃ) দানের হাত বায়ু প্রবাহের মতো প্রসারিত করতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৩২২০, সহীহ মুসলিম হা. ২৩০৮)।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর কুরআন প্রতি বছর একবার করে পেশ করা হতো। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর বছরে দুবার পেশ করা হয়। তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৯৮)।
সুতরাং রমজান মাস ইবাদতের অন্যতম একটি মওসুম। বিশেষ করে শেষ দশকের রাতগুলো প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তিকে জেগে ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত।
নিম্নে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে কতিপয় হাদিস তুলে ধরা হলো :
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী : ১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ১৮৮৪)। হাদিসটি সহীহ।
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডএর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমজানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব, যে ব্যক্তি এর সন্ধানপ্রত্যাশী, সে যেনো শেষ সাত রাতে সন্ধান করে। (১১৫৮, মুসলিম ১৩/৪০, হাঃ ১১৬৫, আহমাদ ৪৫৪৭) (আধুনিক প্রকাশনী : ১৮৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ১৮৮৫)। হাদিসের মান : সহিহ।
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডএর সঙ্গে রমজানের মধ্যম দশকে ই’তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমাকে লাইলাতুল ক্বদর (এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিলো পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান করো। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডএর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছে সে যেনো ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হালকা মেঘখণ্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিলো ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই। (৬৬৯) (আধুনিক প্রকাশনী : ১৮৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ১৮৮৬) হাদিসের মান : সহিহ।
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধান করো। (২০১৯, ২০২০, মুসলিম ১৩/৪০, হাঃ ১১৬৯, আহমাদ ২৪৩৪৬) (আধুনিক প্রকাশনী : ১৮৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ১৮৮৭) হাদিসের মান : সহিহ।
পরিশেষে, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে বিশেষ করে ২৭ রমজানে ইবাদত করে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করতে হবে।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর, মনোহরখাদী মদিনাবাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।