বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

বিচিত্র বাংলার বৈচিত্র্য
অনলাইন ডেস্ক

প্রাচীন গ্রীসের মেসিডোনের রাজা ফিলীপ তাঁর গুণধর পুত্র আলেকজান্ডারকে ৩৩৬ খ্রিঃ পূর্বাব্দে নিজ স্থলাভিষিক্ত করেন। সহসাই তিনি জ্ঞান, গুণ এবং রাজ্য পরিচালনার দক্ষতার শীর্ষে আরোহন করেন। ফলে তাঁর মনে স্পৃহা জন্মালো বিশ্বব্যাপী রাজত্ব কায়েম করার। যাহা চিন্তা তাহাই বাস্তবায়ন। একের পর এক রাজ্য জয় করতে করতে পৌঁছে গেলেন পারস্য উপসাগরে। তখনই হয়ে গেলেন ‘বিশ্ব বিজয়ী আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট’। পারস্য উপসাগরের পরিধি তখন পাক-ভারত উপমহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের কিয়দংশে অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সেই অঞ্চল অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিষাক্ত অনৈক্য বিরাজমান ছিল। ফলস্বরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো অনায়াসেই দখল করে নিলেন।

আলেকজান্ডারের বাকি রইলো রাজা ‘পুরু’, ‘অম্ভি’ এবং ‘অভিসারে’র রাজ্যগুলো। এর মধ্যে পুরুর সাম্রাজ্য ছিল ঝিলাম নদী এবং চেনাব নদীর মধ্যবর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে। রাজা 'পুরু' সামরিক শক্তিতে ছিলেন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার ছিল ৫০ হাজার পদাতিক সৈন্য, ৩ হাজার অশ্বারোহী, ১০০ যুদ্ধ রথ, ১৩০টি হাতি। বিশ্ব বিজয়ী আলেকজান্ডার 'পুরু'র রাজ্য আক্রমণ করলেন। কেহ কাহারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। প্রমাদ ঘটলো সে দিনের রাজাদের মধ্যকার মারাত্মক অনৈক্য । শেষ পর্যন্ত পুরু যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বন্দী হয়ে গেলেন। আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলুকাস পুরুকে নিয়ে গেলেন মহাবীর সকাশে। আলেকজান্ডার পুরুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “বন্দী অবস্থায় আপনি আমার কাছে কেমন ব্যবহার প্রত্যাশা করেন?” প্রত্যুত্তরে পুরু বলেছিলেন, “একজন রাজা অপর একজন রাজার কাছে যে ব্যবহার প্রাপ্য অনুরূপটাই আমার প্রত্যাশা।” এর প্রত্যুত্তরে আলেকজান্ডার বিস্ময়াভিভূত হয়ে বলেছিলেন “বিচিত্র এই ভারতবর্ষ, সেলুকাস!” আজও এই প্রবাদবাক্য সুলভ বচনটি মানুষের মুখে মুখে আছে। এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুপমতা, পারিবারিক সৌন্দর্যের সহমর্মিতা, সামাজিক সৌন্দর্যের সহিষ্ণুতা আর আতিথেয়তার অপূর্ব হৃদ্যতার প্রহেলিকাময়তা আজও ধরণীতে প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়ে আছে। সে সময়ের মেসোপটেমীয় সভ্যতার একটি অত্যাশ্চার্য নিদর্শন ব্যাবিলনের শূন্য উদ্‌যানের কাছে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট শায়িত আছেন। তিনি ৩২৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ব্যাবিলনে মৃত্যুবরণ করেন।

এতো কিছুর অবতারণা করা হলো এইটুকু স্মরণ করার জন্য যে, “বিচিত্র এই বাংলাদেশটা!”

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রহাম লিংকনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞানুযায়ী একই আদলে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাংলাদেশেও নিখুঁত গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করতে চেয়েছিলেন। কতিপয় বিপথগামী সৈনিক এবং কতিপয় উশৃঙ্খল রাজনৈতিক নেতার উস্কানিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডে দেশে এক রাজনৈতিক মহাশূন্যতা সৃষ্টি হয়। এ সময় ঘটে গেছে কতগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধা নিধন যজ্ঞ, জেলখানায় জাতীয় চার নেতার মর্মাত্মিক হত্যাকাণ্ড। নতুন উদ্ভাবিত সামরিক গণতন্ত্রের আদলে গঠিত হয় স্বৈর-শাসনতন্ত্র। এই শূন্যতায় গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়ে একটা নতুন তন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল। যা ইতিহাসে ‘ওয়ান ইলেভেন’ তন্ত্র নামে চিহ্নিত থাকবে। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী শেখ হাসিনা নবীন প্রধানমন্ত্রীর প্রবীণ সদৃশ ক্যারিশমায় দেশে এক অভূতপূর্ব প্রাণবন্ত সংসদ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই সংসদে দেশের জননন্দিত এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন সাংসদ ছিলেন, যাঁরা বাস্তবেই প্রকৃষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন।

অতঃপর ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনোত্তর বিজয়ীদের বিজিতদের উপর যে কদর্য নির্যাতন এবং যে পাশব নিপীড়ন চলছিল তাতে মানব সভ্যতা লজ্জিত।

এখানে উল্লেখ্য যে, সে সময় থেকেই রাজনীতিতে ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা এবং ধনকুবেরদের অনুপ্রবেশ ঘটে। ২০১৪ সালে শক্তিশালী বিরোধী দলের সংসদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ছিলো অরাজনৈতিক আবেগ। তাতে ছিল আগুন সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করার মতো অপপ্রয়াস। অনুপ্রবেশকারীরা সজ্জিত রাজনীতিবিদ, এদের কাছে সামাজিক বা অফিস ডেকোরাম মূল্যহীন। তৃণমূল থেকেই সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারীদের ঔদ্ধত্য ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ দেশ ও জাতির জন্যে এক সর্বনাশা ভয়ংকর অশনিসংকেত। জনগণ আশা করে, প্রকৃত রাজনীতিবিদরাই এর লাগাম টেনে ধরে রাখতে সক্ষম হবে। কারণ মনে রাখতে হবে “বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে”।

বিচিত্র এই বাংলার রাজনীতির চরিত্র!

নমিনেশন দেওয়া না দেওয়ার মধ্যে জড়িয়ে আছে বিচিত্র কাহিনী! দলীয় নমিনেশন বোর্ডের আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলেও অনেক সময় যোগ্য প্রার্থীকে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয়। এদেশে মূল দলের উপদলগুলোর প্রত্যক্ষ কোনো কার্যকারিতা লক্ষ করা যায় না। বরং সরকারি অনুমোদন ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে ওদের অস্তিত্ব দেখা যায়। কাজেই দলের সঙ্গে সংযুক্ত উপদল না থাকাই শ্রেয়।

বলা বাহুল্য, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার এই দুর্বলতার কারণেই সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকে না। এ ব্যবস্থায় গণতন্ত্র পরিপূর্ণতা পায় না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এটা অনিবার্য যে, সঠিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্থান সরকারি আমলাদের উপরে। মনে রাখা উচিত, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বন্ধুত্ববাদ, কিন্তু অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রভুত্ববাদ কায়েম হয়। রুগ্ন গণতন্ত্র আর শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের সংমিশ্রণে যে ভৌতিক তন্ত্র সৃষ্টি হয় তাতে কিন্তু তৃণমূলের মানুষের মুক্তি সুদূর পরাহত এবং দেশে নীরব অরাজকতা বিরাজমান থাকবে। যার প্রতিবাদে নির্ঘাত লাঞ্ছনা।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও লেখক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়