প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০
পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় চাঁদপুর আজ দেশ-বিদেশে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে খ্যাত। ব্রিটিশ আমল থেকেই চাঁদপুর বিশ্বখ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর শহরের একমাত্র পর্যটনকেন্দ্র মোলহেড। তিন নদীর মিলনস্থলে নয়নাভিরাম এই স্থানে চাঁদপুর জেলার অধিবাসীসহ অন্যান্য জেলার ভ্রমণপিপাসু মানুষজনও সময় কাটাতে আসেন। স্থানটিকে পর্যটকদের নিকট আরো আকর্ষণীয় করতে জেলা প্রশাসন ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রবেশ মুখে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ নামে সুদৃশ্য গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক ভাস্কর্য ‘রক্তধারা’। এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্যে নদীর পাড়ে বসার বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে একটি শিশু পার্ক। তাছাড়া এ স্থানটিকে আরো পর্যটকবান্ধব ও আকর্ষণীয় করতে নেয়া হয়েছে নানামুখী পরিকল্পনা। এ উদ্যোগটিকে সফল করতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় এমপি শিক্ষামন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক মহলসহ সুশীল সমাজ। ডাকাতিয়া-মেঘনার অনবরত ভাংগনের মুখে বড় স্টেশন মোলহেড ও পুরাণ বাজার ব্যবসা কেন্দ্র আজ হুমকির মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ড শত শত কোটি টাকা খরচ করে শহর রক্ষা বাঁধ মেরামত করে কোনোমতে শহরকে প্রটেকশন দিচ্ছে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রেল কর্তৃপক্ষের গোঁয়ার্তুমির কারণে মনে হয় একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ও নান্দনিক শহর গড়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। রেল কর্তৃপক্ষ বড় স্টেশন মোলহেডের ‘রক্তধারা’ পর্যন্ত তাদের রেলস্টেশন সম্প্রসারণ করার জন্য বিভিন্নভাবে তোড়জোড় শুরু করেছে। এমনিতেই মেঘনার অব্যাহত ভাংগনের মুখে মোলহেড তথা শহর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এমতাবস্থায় রেল কর্তৃপক্ষ রেলস্টেশন সম্প্রসারণ করলে মোলহেড তথা শহর রক্ষা বাঁধ কতোটুকু হুমকির মুখে পড়বে তা সত্যিই ভাবনার বিষয়। মূল কথা হলো, যেহেতু মেঘনা-ডাকাতিয়ার অনবরত ভাংগনের মুখে বড় স্টেশন তথা শহর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে, তাই অবিলম্বে চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন ও বড় স্টেশনকে শহরের পূর্বদিকে ঘোড়ামারা নামক স্থানে স্থানান্তর করা জরুরি। বৃটিশ আমল থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চাঁদপুর মহকুমার কালেক্টরেট ও মুন্সেফ কোর্ট ছিল পালবাজারের পার্শ্ববর্তী স্থানে। তখন এখানে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে কালীবাড়িতে কোর্ট স্টেশন ও ৩ কিলোমিটার দূরে পুরাণবাজারে যাতায়াতের সুবিধার্থে বড় স্টেশন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু কালেক্টরেট (ডিসি অফিস) ও চাঁদপুর জেলা জজ কোর্ট ষোলঘরে চলে গেছে, তাই এখন আর এখানে কালীবাড়ি রেল স্টেশন ও বড় স্টেশন থাকাটা বাঞ্ছনীয় নয়। বৃটিশ আমল থেকে নদী ভাঙ্গনের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে, নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে বড় স্টেশন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। একটি সূত্রে জানা যায়, এক সময়ে রেলওয়ে জংশন করার লক্ষ্যে স্থানীয় ঘোড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিকটে প্রায় ১৬একর জমি রেল কর্তৃপক্ষের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সুতরাং সেই সুবাদে কোর্ট স্টেশন ও বড় স্টেশন না রেখে অর্থাৎ দুটি স্টেশন বাদ দিয়ে চাঁদপুর স্টেশন নামে একটি স্টেশন উক্ত ঘোড়ামারা এলাকায় স্থানান্তর করা যুক্তিযুক্ত হবে বলে সর্বমহলে আলোচিত হচ্ছে। এতে স্থানীয় জনগণের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রটি রক্ষা পাবে ও নান্দনিকভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।
দুঃখের বিষয়, চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন থেকে বড় স্টেশন পর্যন্ত দু'পাশে রেলওয়ের অসংখ্য স্থাপনা ও কোয়ার্টার জরাজীর্ণ অবস্থায় স্থানীয় টাউট বাটপারদের কবলে বেদখল হয়ে আছে। সূত্রে জানা যায়, এখানে রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে ওই টাউট বাটপারদের আর্থিক সম্পর্ক আছে। স্বচ্ছ ইনভেস্টিগেশন করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে নিশ্চিত। কোনো এক অদৃশ্য কারণে এগুলোর ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। একমাত্র জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক মহল, সুশীল সমাজসহ আপামর জনতাই পারে মাননীয় রেলমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়কে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করাতে। মোদ্দা কথা হলো, চাঁদপুর শহরকে বাঁচাতে হলে, নান্দনিক করতে হলে বড় স্টেশন ও কালীবাড়ি রেল স্টেশন বিলুপ্ত করে এর আশেপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বড় স্টেশন থেকে কালিবাড়ি প্লাটফরম হয়ে শহরের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত বিকল্প রাস্তা তৈরি করতে হবে। এর ফলে যানজট দূর হবে ও চাঁদপুর শহরকে একটি নান্দনিক শহর হিসেবেও গড়ে তোলা যাবে।
পরিশেষে চাঁদপুরকে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রেল কর্তৃপক্ষের অসৌজন্যমূলক অসহযোগিতার বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক মহল, সুশীল সমাজ তথা আপামর জনসাধারণ সোচ্চার হবেন এবং বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জোরালো ভূমিকা নিবেন বলে আশা রাখি।
লেখক পরিচিতি : মোঃ খায়রুল আহ্ছান সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, চাঁদপুর ; সদস্য : জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, চাঁদপুর ; কো-অর্ডিনেটর, সারাবাংলা’৮৮, চাঁদপুর।