প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
বিলুপ্তির পথে চাঁদপুরের সাঁতারের ঐতিহ্য
সাঁতারে চাঁদপুরের ঐতিহ্যকে জাদুঘরে রাখার পরিকল্পনার পথেই হাঁটছে যেনো চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুকে যদি কোনো আগন্তুক বা পর্যটক এসে জিজ্ঞেস করেন, চাঁদপুরের সাঁতারের ঐতিহ্য কী, আমরা এ সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে প্রামাণ্য কিছু জানতে চাই। তিনি তাৎক্ষণিক ‘মালেক ক্রীড়া ভবন’ ও ‘অরুণ নন্দী সুইমিং পুল’ ছাড়া অন্য কিছু দেখাতে পারবেন বলে মনে হয় না। কারণ, এখানে সাঁতার প্রতিযোগিতা, সাঁতার চর্চা ও সাঁতার প্রশিক্ষণের দৃশ্যমান কোনো কিছু বর্তমানে নেই।
|আরো খবর
চাঁদপুর যখন মহকুমা ছিলো, তখন চাঁদপুর স্টেডিয়ামে প্রথম যে প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়, সেটির নামকরণ করা হয় চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, সাঁতারে ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী আঃ মালেকের নামে। তারপর এটি ‘মালেক ক্রীড়া ভবন’ নামে পরিচিত। কিন্তু কে এই মালেক সেটি ভবনের ভেতরে ও বাইরে কোথাও লেখা নেই। কেননা এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিশ্চয়ই তহবিল সঙ্কট আছে।
চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ‘অরুণ নন্দী সুইমিং পুল’। সে সুইমিং পুলের দূরবর্তী প্রবেশ পথে গেট থাকলেও ভেতরে ও বাইরে কোথাও সাইনবোর্ড নেই। আর অরুণ নন্দীর পরিচয় জ্ঞাপক কোনো বিল বোর্ডও নেই। সুইমিং পুলে নেই পানিও।
সুইমিং পুলে যদি পানি থাকতো, তাহলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য যে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নূতন/পুরাতন সাঁতারুদের ডেকে এনে আগত পর্যটক কিংবা কৌতূহলী মানুষের জিজ্ঞাসার জবাব দিতে পারতেন।
সাঁতারু আঃ মালেক ইংলিশ চ্যানেল বিজয় করে বিশ^খ্যাত হয়েছেন, আর মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতায় অরুণ নন্দী ৯০ ঘন্টা ৫ মিনিট অবিরাম সাঁতার কেটে বিশ^ রেকর্ড গড়েছেন। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুটি স্থাপনা এ দুজন বিশ্বখ্যাত সাঁতারুর নামে হলেও তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকী পালনসহ তাঁদের স্মরণে দৃশ্যমান কিছুই করতে পারছে না চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এটা তাদের মানসিক কার্পণ্য না অন্য কিছু সেটা কারো বোধগম্য নয়।
গত ১৯ নভেম্বর ২০২১ ছিলো ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে চাঁদপুরের তিন কৃতী সাঁতারুর সাফল্য অর্জনের ২২ বছর পূর্তি। এঁরা হচ্ছেন একেএম বাদশা মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ খান ও রোকন ভূঁইয়া। ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর এই তিন সাঁতারুর বিরল সাফল্য অর্জনের পর চাঁদপুরে অবিরাম সাঁতার ও দূরপাল্লার সাঁতার আয়োজনে জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কোনো আয়োজনও লক্ষ্য করা যায়নি। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার আয়োজনেও জেলা ক্রীড়া সংস্থার ন্যূনতম সহযোগিতা ছিলো না। তাদের অপারগতাহেতু তৎকালীন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, চাঁদপুর লায়ন্স ক্লাব ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠসহ আরো অনেকে ব্যয়বহুল উক্ত সাঁতার আয়োজন সম্পন্ন করতে অকৃপণভাবে এগিয়ে আসেন।
তিক্ত হলেও সত্য এই যে, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ কিছু কর্মকর্তা অন্তত দু যুগ সময় ধরে সাঁতারবিদ্বেষী মানসিকতা প্রদর্শন করে চলছেন। এ ব্যাপারে তাদের অসংখ্য অজুহাত রয়েছে। বিসশ্বখ্যাত সাঁতারু আঃ মালেক ও অরুণ নন্দীসহ চাঁদপুরে আরো কিছু সাঁতারুর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৃতিত্ব ও সাফল্যে সাঁতারের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থাকলেও সাঁতারকেন্দ্রিক স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনাই নেই এই ক্রীড়া সংস্থার। এমতাবস্থায় সুইমিং পুলে চাঁদপুরের সাঁতারের ঐতিহ্য রক্ষায় ছোট্ট জাদুঘর গড়া যায় কিনা, সে বিষয়টি ভেবে দেখতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসককে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।