প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশার দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। কারো না কারো সাথে এই অটোরিকশার চালক-মালিক ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ‘রাম-রহিম’ জাতীয় সন্ধি থাকায় এ দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এমন দৌরাত্ম্যে বাস-ট্রাকসহ ব্যক্তিগত গাড়ি সমূহে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ গতিতে চলাচল করতে পারছে না। উপর্যুপরি বেপরোয়া গতিতে সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা তো আছেই। গত এক দশকে বাস-ট্রাক দুর্ঘটনা বিরল হয়ে গেছে এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু অনেক কমে এসেছে। কিন্তু অটোরিকশার দুর্ঘটনা ও মৃত্যু অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, যা কিনা মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার চেয়েও বেশি।
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে এমন বাস্তবতায় নূতন করে উপদ্রব হিসেবে যুক্ত হয়েছে বোগদাদ ও রিলাক্স নামে দুটি পরিবহনের দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতা। এ দুটি পরবহনের বাস চাঁদপুর-কুমিল্লা রূটে চলাচল করে। বোগদাদ চলছে আশির দশক থেকে। যতোটা আসন ততোজন যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট বিরতিতে থেমে চলাচল করার কারণে বোগদাদ যাত্রীদের মাঝে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। বোগদাদের বাস পরিচালনায় নির্দিষ্ট পরিবহন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি ও তদারকিতে এ পরিবহনের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এতে সড়কে বোগদাদের বাসের দাপট হয়ে যায় অত্যধিক। পাকিস্তান আমল থেকে যুগের পর যুগ ধরে চলাচলকারী চাঁদপুর-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রূটের লোকাল বাসগুলো বোগদাদের দাপট ও সিএনজি অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে ক্রমশ হারিয়ে যায়। বোগদাদের একচ্ছত্র আধিপত্যে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে অন্যান্য পরিবহনের বাসগুলো অনেকটা অসহায়ের মতো চলাচল করে।
গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে এমন-বাঘের ওপরও কিন্তু টাঘ আছে। অনেকটা টাঘের মতোই চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে ৭-৮ মাস আগে এলো রিলাক্স পরিবহনের বাস। এ পরিবহন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিআরটিএ, বাস মালিক সমিতি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সকলকে নির্বিঘ্নে ম্যানেজ করে বোগদাদের পাশাপাশি চালাচ্ছে তাদের বাস। চাঁদপুর বাস টার্মিনালের প্রবেশ পথের দু দিকে বোগদাদ ও রিলাক্সের দুটি বাস সব সময়ই চোখে পড়ে, যেগুলো কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একটার পেছনে আরেকটি ছাড়ে। তারপর কুমিল্লা পর্যন্ত চলতে গিয়ে ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ মানসিকতা প্রদর্শন করে কার্যত সড়কে দখলদারিত্ব ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কখনো কখনো চালকরা বাসগুলোকে নিজেদের স্বার্থে লোকাল বাসের মতো করে চালায়।
গত মঙ্গলবার সড়কে দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে চাঁদপুর শহরতলীর ওয়্যারলেস মোড়ে বোগদাদ ও রিল্যাক্সের দু ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপাররা তুমুল ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এতে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা হেতু যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। চাঁদপুর মডেল থানার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং দু’পরিবহনের দু ড্রাইভারকে আটক করা হয়।
বোগদাদের পাশাপাশি চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে রিলাক্সের বাস নামার পরই যাত্রীসহ সর্বস্তরের লোকজন দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করে অপ্রীতিকর ঘটনাসহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করে আসছিলো। ইতিমধ্যে দুর্ঘটনা না ঘটলেও অপ্রীতিকর ঘটনা যে ঘটেছে সেটা মঙ্গলবার ওয়্যারলেস্ মোড়ের ঘটনা ও দু ড্রাইভার আটকের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। এখন অপেক্ষা হচ্ছে দুটি বাসের মধ্যে সড়কে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠাহেতু বড় দুর্ঘটনা ঘটে কিনা সেটি দেখা। তার আগে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বাস মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।