প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
বোয়ালজুরি খালকে টুঁটি চেপে হত্যার প্রয়াস?
চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা কর্তৃক সম্পাদিত ইতিহাস গ্রন্থের নাম হচ্ছে ‘চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’। এ গ্রন্থের ১৬৯ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় স্তবকে চাঁদপুর জেলার অন্যতম প্রসিদ্ধ খাল ‘বোয়ালজুরি’ নিয়ে লিখা হয়েছে। স্তবকটির হুবহু বর্ণনা হচ্ছে এমন : বোয়ালজুরি খালটির পশ্চিম অংশকে মাছুয়াখাল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ খালটি একটি ঐতিহাসিক খাল। ধনাগোদা নদী হতে উৎপন্ন হয়ে কচুয়া ও মতলব উপজেলাকে বিভক্ত করে হাজীগঞ্জ হয়ে ডাকাতিয়া নদীতে মিশেছে। এ খালে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত বলে পশ্চিম অংশকে মাছুয়াখাল নামে অভিহিত করা হয়। মাছুয়াখাল নামে একটি পরগণাও আছে। সম্রাট শেরশাহের শাসনামলে ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে খালটি কাটা হয়। এ খালে প্রচুর বোয়াল মাছ পাওয়া যেতো বলে এর নাম বোয়ালজুরি খাল। কারো কারো মতে, বোয়াল মাছের ভয়ে খালের অন্যান্য মাছ শঙ্কিত থাকতো। সেজন্যেই এ খালের নাম হয় বোয়ালজুরি খাল।
|আরো খবর
৪৮২ বছরের পুরানো বোয়ালজুরি খালের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় খালটি নিয়ে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদন পড়লে কোনো পাঠকের এই খালের বিপন্নতা নিয়ে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ কামরুজ্জামান টুটুল সরেজমিন অভিজ্ঞতার আলোকে এ প্রতিবেদনটি লিখেছেন। তার দেয়া শিরোনাম ‘হাজীগঞ্জের ১০ কিলোমিটারে পুরোটাই কচুরিপানায় ঠাসা : ঐতিহ্যবাহী বোয়ালজুরি খাল মরতে বসেছে’ পড়লে এবং এ প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত ছবি দেখলে রীতিমত আঁৎকে উঠতে হয়।
চাঁদপুর জেলার অনেক খালই প্রসিদ্ধ। এর মধ্যে ২-৩টি খালকে যদি সবচে’ প্রসিদ্ধ বলতে হয়, তাহলে বোয়ালজুরি খাল তার অন্তর্ভুক্ত। সেই খালটিকে দু পাড়ের অপরিণামদর্শী মানুষ যেভাবে দখল করছে এবং ভেসাল (বেল) জারোববার সকালে ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী তাপমাত্রা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজিং করে কক্ষে প্রবশ করছে। লের সুবিধার্থে মৎস্য শিকারীরা বাঁশের চালির মাধ্যমে বাঁধ দিয়ে যেভাবে পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে ও কচুরিপানার বংশ বিস্তারে অবাধ সহযোগিতা করছে, তাতে এখানে যাত্রীবাহী ও মালবাহী নৌযান চলাচল চলতি বর্ষা মৌসুমেও মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। আর আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে এই খালে ডাকাতিয়া নদীর পানি সেচের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ, কচুয়া ও মতলবের বিস্তীর্ণ এলাকার ইরি-বোরো চাষাবাদের যে চলমান কার্যক্রম সেটিও ব্যাহত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ খালটিকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো তাৎক্ষণিক উদ্যোগ গ্রহণ না করলে দুদিক থেকে টুঁটি চেপে হত্যার ন্যায় খালটিতে দখলদারিত্ব হবে অবাধ আর মাছের উৎপাদন হবে হ্রাস, খননের অভাবে নাব্যতা সঙ্কটে খালটি যাবে শুকিয়ে এবং নৌযান যোগে সহজ পণ্য পরিবহন হবে পুরোপুরি বন্ধ। যদি শেষ পর্যন্ত এমনটিই হয়, তাহলে পরিবেশ বিপর্যয় যে দেখা দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
হাজীগঞ্জের ইউএনও মোমেনা আক্তার জানিয়েছেন, বোয়ালজুরি খাল থেকে ভেসাল জাল অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। ২-১ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। আর কচুরিপানা অপসারণের কাজও শীঘ্র শুরু হবে। খাল দখলের বিষয়টি তার জানা নেই, তবুও সেটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ইউএনও মহোদয়ের উক্ত উদ্যোগকে স্বাগত জানাই, তবে তরিৎ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি। একই সাথে খালে অবৈধ দখলাদরিত্ব উচ্ছেদ ও রোধ করার কষ্টকর প্রয়াস গ্রহণের জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে ইউএনওকে স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।