শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যেমন কন্যা, তেমন তার গর্ভধারিণী---

অনলাইন ডেস্ক
যেমন কন্যা, তেমন তার গর্ভধারিণী---

‘কলেজে না এসেও বেতন তুলছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির স্ত্রী!’--এটুকু শিরোনামেই বোঝা যায় সংবাদটি আসলে কী। গতকাল এ সংবাদটি ছাপা হয় চাঁদপুর কণ্ঠে। প্রথম পৃষ্ঠায় বক্স আইটেমে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত সংবাদটিতে শামীম হাসান লিখেছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কলেজে পা পড়েনি তার। অথচ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর হয়েছে যথারীতি। পেয়েছেন আগস্ট ২০২৪ মাসের বেতনও। ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নেপাল চন্দ্র দেবনাথের অশীর্বাদপুষ্ট এ রাজকীয় কর্মচারীর নাম মিস তানিয়া খাতুন। তিনি কলেজটির পাঠাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগে কর্মরত আছেন। ইনডেক্স নং- সি ৩০০০১১৫। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর স্ত্রী হিসেবে গত ৭/৮ বছর ধরে তিনি এ সুবিধা পেয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক- কর্মচারী জানিয়েছেন, তানিয়া খাতুনের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারী, ১৯৬৫ । সে হিসেবে তার বয়স ৬০ বছর চলমান। এমপিও নীতিমালা অনুসারে তিনি ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর স্ত্রী হওয়ায় বিগত ৭/৮ বছর ধরে তিনি কলেজে না এসেই চাকরি করে গেছেন। কলেজের অধ্যক্ষরা (সাবেক ও বর্তমান) হাজিরা খাতা তার বাসায় পাঠিয়ে একসাথে 'কাজা' স্বাক্ষর আদায় করে আনতেন। ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের ইতিহাসে এমন রাজকীয় চাকরির সুযোগ আর কেউ পাননি।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নেপাল চন্দ্র দেবনাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি এখন পিআরএলে আছেন। পিআরএলে থাকাবস্থায় কলেজে আসা লাগে না। স্বাক্ষরও করা লাগে না। তাহলে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে কেন? 'পিআরএল আবেদন না করেও তিনি কীভাবে পিআরএল সুবিধা পেতে পারেন' এমন প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, আমি যা বলছি সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। 'সরকারিকরণ প্রক্রিয়ার অধীনস্থ অবসরপ্রাপ্ত যে সকল শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতি অনুসারে ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গেছেন তাদের পিআরএল কীভাবে হিসেব হবে' এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের কিছুই করার নেই। 'একই প্রক্রিয়ার অধীন তানিয়া খাতুনকে পিআরএলের কথা বলে অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা বৈধ কিনা, গ্রন্থাগারিক তানিয়া খাতুন কেন ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অথবা সরকারিকরণ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন না' এসব প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। এ বিষয়ে জানতে চির্কা চাঁদপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমপিও বেতন গ্রহণ করা ব্যক্তির পিআরএলের বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করবো না।

আসলে একসময় মন্তব্য তো কারোরই করার সাহস ছিলো না। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন অনেকেরই সহজ-সাহস হয়েছে। কেননা যাকে ও যাদেরকে নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে, তারা তো এখন শাসক দলের কেউ নয়। যখন ছিলেন, তখন এক সাংবাদিক সাহসী হয়ে সংবাদ প্রকাশ করার কারণে তাকে হেনস্তা করতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করা হয়েছিল। প্রকৃতির কী নির্মম বিচার!--এখন সেই ঝাড়ু মিছিলের উদ্যোক্তা ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, তার কন্যা ও স্ত্রীর অপকর্মের কথা ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যম চলে আসছে, তাতে তাদের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত ঝাড়ু মিছিল বের হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবুল খায়ের পাটওয়ারীর কন্যা নাজমুন্নাহার অনি কর্তৃক পৌরসভার চেক বই ছিনিয়ে নিয়ে ইচ্ছেমত টাকা উত্তোলনের কাহিনি এই তো সেদিন আমরা চাঁদপুর কণ্ঠেই পড়েছি। আরো আগে পড়েছি মেয়র আবুল খায়েরের কুকীর্তি। গতকাল পড়লাম তার স্ত্রীর কুকীর্তি। এখন বাকি রইলো তার পুলিশ কর্মকর্তা পুত্র সম্পর্কে জানা। আমাদের জানা মতে, তার এই পুত্র অন্তত তার স্ত্রী ও কন্যার মতো হবেন না। আমরা অনি ও তার গর্ভধারিণী মায়ের কাণ্ডে বিস্মিত। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, ইংরেজি প্রবাদ বাক্য 'লাইক ফাদার লাইক সনে'র প্যারোডি হিসেবে 'লাইক মাদার লাইক ডটার' রচনার উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়