শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

তারপরও কি হাইমচরে শেষ হবে নূর হোসেন অধ্যায়?

অনলাইন ডেস্ক
তারপরও কি হাইমচরে শেষ হবে নূর হোসেন অধ্যায়?

হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হত্যার অভিযোগে সেক্রেটারী সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা'--এমন সংবাদ শিরোনামে যে কোনো পাঠককে থমকে দাঁড়াতে হয়। এই সংবাদটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হিসেবে ছাপা হয়।

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতালেব জমাদারকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে হাইমচর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নং-সিআর-১২৫/২৪। ঘটনার দীর্ঘ ৪ বছর পর গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে বিচারক বেগম ফারজানা তাবাসসুম মেরীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন মোতালেব জমাদারের ছেলে আবু তালেব জমাদার। মামলায় আসামি করা হয় হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৭৪ নেতা-কর্মীকে। এর মধ্যে ২৪জন এজাহার নামীয় এবং ৫০জন অজ্ঞাতনামা।

বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, মামলার আসামি নূর হোসেন পাটওয়ারী ও তার পিতা মোতালেব জমাদার সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি নূর হোসেনকে মনোনয়ন দেন। আর মোতালেব জমাদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। নূর হোসেন তার লোকজনসহ নির্বাচন প্রচারণাকালীন মোতালেব জমাদারকে মারধর করেন। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় চিকিৎসা শেষে নিজ বাড়িতে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তবে নূর হোসেন প্রভাবশালী হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন মামলা করা যায় নি।

বাদী আবু তালেব গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমার বাবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার- প্রচারণা করার সময় নূর হোসেন পাটওয়ারী আমার বাবাকে মারধর ও হাতুড়িপেটা করে। হামলার আঘাতে আমার বাবা দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মারা যান। ওই সময় থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নেয়নি। আমি আমার বাবার হত্যা মামলায় সুষ্ঠু বিচার চাই। মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ শাহজাহান খান বলেন, আসামীপক্ষ হাসিনা সরকারের প্রভাশালী লোক ছিলেন। পরিবারের নিরাপত্তাহীনতায় এমন মর্মান্তিক হত্যার ঘটনায় তাৎক্ষণিক মামলা করা যায়নি। মামলা দায়েরে চার বছর দেরি করতে হয়েছে। মামলাটি দায়েরের পর আদালত পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ প্রদান করেন। আশা করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বাদী সঠিক বিচার পাবেন।

নিজ পিতার হত্যার ঘটনায় সন্তান মামলা করতে না পারার উপরোল্লিখিত যে অভিযোগ, সেটা সঠিক। কারণ, হাইমচরে নূর হোসেন পাটওয়ারী ছিলেন দোর্দ- প্রতাপশালী। তার প্রতাপে থানা ও পুলিশ চলতো তাকে পুরোপুরি সমীহ করে। জানা গেছে, একজন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকটাত্মীয়কে নূর হোসেন অন্যায়ভাবে থাপ্পড় মেরেছিলেন। এজন্যে তিনি হাইমচর থানার ওসিকে জিডি নিতে বলেছিলেন। তিনি নেননি। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি পুলিশ সুপারের মাধ্যমে নির্দেশ দিলেও ওসি সে নির্দেশ মানেন নি। কথিত আছে, হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির কথায় চলতো না, চলতো কেবল সেক্রেটারী নূর হোসেনের কথায়। ইউএনও উপজেলা প্রশাসন ঠিকমত চালাতে পারতো না উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেনের দাপটে। উপজেলা সদর সহ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জায়গা-স্থাপনা নিজেদের ইচ্ছা ও পছন্দে কেউ বেচাকেনা করতে পারতো না নূর হোসেন ও তার লোকজনকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া কিংবা কোনো ধরনের আপস ছাড়া। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রেও ছিলো তা-ই। এছাড়া ভূমিদস্যুতার ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার কাছে নিজ দলের সভাপতি সহ ভিন্ন মতের ও প্রতিবাদী যে কেনো পদধারী নেতা-কর্মী তো নিরাপদ ছিলো না, আর বিরোধী দলের নেতাসহ যে কোনো লোকজনের অবস্থা তো ছিলো 'দায়ের তলের মাছে'র মতো। কতো ধরনের ঘটনায় যে নূর হোসেন সাধারণ্যে ও গণমাধ্যমে আলোচিত ছিলো তার বিবরণ তুলে ধরা কঠিন। শেখ হাসিনার সরকার পতনের প্রায় দেড় মাস পর তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামাতের কেউ নয়, তার দলের সভাপতির সন্তান হত্যা মামলা করায় বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে অন্য কিছু মামলায় তাকে আসামি করার বিষয়টি যতো না আলোচনায় এসেছে, তারচে' বেশি আলোচনায় এসেছে এই হত্যা মামলাটি। এই মামলা সহ অন্যান্য মামলার অগ্রগতি সাধিত হোক এবং তিনি সহ তার সহযোগীরা যথাযথ বিচারের সম্মুখীন ও শাস্তি পাক এটা হাইমচরবাসী কেনো, জেলা ও জেলার বাইরের প্রতিটি সচেতন মানুষ প্রত্যাশা করে। আওয়ামী লীগ সহসা রাজনীতিতে সক্রিয় হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগের লোকজনেরও কথা, নূর হোসেনের মতো বিতর্কিত লোক যেনো আর আওয়ামী রাজনীতিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায় এবং ভালো জায়গায় ঠাঁই না পায়। হাইমচরে নূর হোসেন অধ্যায়ের সমাপ্তি চিরদিনের জন্যে ঘটুক--এটাই ভুক্তভোগী ও সচেতন প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়