প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
‘বাংলায়ন সভা’র যাত্রা শুভ হোক
আমাদের দেশের মানুষ দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন রকমের সংগঠন গড়ে তোলার ব্যাপারে যথেষ্ট পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়ে চলছে। সেজন্যে প্রায়শই নূতন নূতন সংগঠনের নাম শোনা যায়। নেতৃত্বে দেখা যায় নূতন নূতন মুখ। চলে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের পালা। গতানুগতিকতার মধ্যেই হচ্ছে সংগঠনের জন্ম এবং প্রদর্শনেচ্ছাতেই চলে যতো কার্যক্রম। যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে উচ্চারিত হয় গালভরা বুলি। কোনো কোনো নূতন সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতায় রীতিমত সৃষ্টি হয় চমক। কিন্তু এসব সংগঠনের অধিকাংশই টেকসই হয় না। এদের কেউ চলে নিজেদের অর্থে, কেউ চলে নানা অনুদানে, আবার কেউ চলে চাঁদা ও গণচাঁদা তুলে।
|আরো খবর
এমন বাস্তবতাতেই রাজধানীতে শুভ সূচনা হলো ‘বাংলায়ন সভা’ নামে একটি সংগঠনের। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও অমর একুশের চেতনা ধারণ করে ২১ জন কবি-লেখক গড়ে তুলেছে এই সংগঠন। এদের মধ্যে বেশ ক’জন চাঁদপুর জেলার কৃতী সন্তান, যাদের লেখার দেশ-বিদেশে পর্যাপ্ত ভক্ত-পাঠক রয়েছে। এ সংগঠনটির তিনটি শীর্ষ পদের নামেও আছে বৈচিত্র্য, যেমন : মুখপাত্র, সম্পাদক ও সমন্বয়ক। এ তিনটি পদে মনোনীত হয়েছেন শামস সাইদ, ফারুক সুমন ও গাজী মুনছুর আজিজ। শেষোক্ত দুজনের পৈত্রিক নিবাস যথাক্রমে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি ও চাঁদপুর সদর উপজেলায়। সেজন্যে এ ব্যতিক্রম নূতন সংগঠনটির প্রতি চাঁদপুরবাসীর বিশেষ নৈকট্য সৃষ্টি হয়েছে, আর শ্লাঘাতো রয়েছেই।
‘বাংলায়ন সভা’র শ্লোগান হচ্ছে ‘বাংলা বিশ^ময়’। এ শ্লোগানের সমান্তরালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সংগঠনটি কাজ করবে। শুভ সূচনাকালে সংগঠনটির প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে বহুমুখী পরিকল্পনার কথা। এভাবে পরিকল্পনা পেশের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির আভিজাত্য ও দূরদর্শিতা দুটোই প্রকাশ পেয়েছে। গতানুগতিকভাবে গড়ে ওঠা সংগঠনের চেয়ে ‘বাংলায়ন সভা’ প্রাগুক্ত প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে ব্যতিক্রম চিন্তা-চেতনা ও স্বতন্ত্র রূপে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এজন্যে উদ্যোক্তাদের বিশেষ অভিবাদন জানাতেই হয়।
‘বাংলায়ন সভা’র প্রস্তাবনার শেষ দিকে লিখা হয়েছে, ভাষার বিশ্বায়ন বা বশ্বময় প্রভাব সৃষ্টির সঙ্গে আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এটি বিবেচনায় রেখে ভাবলেই দেখা যায়, জনসমষ্টির দিক থেকে অনেক ক্ষুদ্র ভাষাও বিশ্বে বেশ শক্তিশালী এবং সেসব ভাষা ও সাহিত্যের কদর রয়েছে বিশ্বময়। অথচ ঊনত্রিশ কোটির অধিক মানুষ বাংলায় কথা বললেও এই ভাষা ও সাহিত্যের কদর মোটেও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেই। ‘তাহলে সংকটটা কোথায়’ এমনটি খুঁজে বের করতে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে তথা ভাষার বিশ্বায়নের অভিলক্ষ্যে ভাষা শহীদগণের শাণিত চেতনাকে অবলম্বন করে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবে ‘বাংলায়ন সভা’। আমরা সংগঠনটির এই অভিলক্ষ্য জেনে প্রশংসাব্যঞ্জক অভিব্যক্তি প্রকাশ করছি এবং এর টেকসই অস্তিত্ব প্রত্যাশা করছি।