প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আউটার স্টেডিয়ামের দেয়ালের গেট সমাচার
চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়া প্রতিবেদক চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম গতকাল প্রকাশিত একটি সংবাদে লিখেছেন, চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের সরকারি দেয়াল ভেঙ্গে ব্যক্তিগত গেট নির্মাণ করলেন সাবেক ফুটবলার আলমগীর পাটোয়ারী। শহরের ব্যাংক কলোনী রোডে মুদি দোকান ও মাদ্রাসা রোডস্থ মুন্সি বাড়িতে নিজ বাড়ি থাকা অবস্থায়ও জোর করে এবং তার আত্মীয়-স্বজনের ক্ষমতার দাপটসহ নিজ ক্ষমতাবলেই তিনি আউটার স্টেডিয়ামের খেলার স্থানে সরকারি বাউন্ডারির দেয়াল ভেঙ্গে গেট নির্মাণ করেন। আর এ গেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়াম ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে সাধারণ মানুষ ও খেলোয়াড়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৪ ও ৫ আগস্ট দেশে যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটে, ঠিক তখনই আলমগীর পাটোয়ারী তার ক্ষমতা বলে খেলোয়াড় ও খেলার মাঠকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি বাউন্ডারির দেয়াল ভেঙ্গে এ কাজটি করেছেন। সরজমিনে আউটার স্টেডিয়াম এলাকার সুইমিংপুল লাগোয়া এবং নতুন নির্মাণাধীন ভবনের পিছনের অংশে গিয়ে দেখা যায়, আউটার স্টেডিয়ামের দেয়ালের মাঝ অংশ ভেঙ্গে তিনি গেট নির্মাণ করেছেন। আউটার স্টেডিয়ামে অনুশীলনকারী ফুটবলার ও ক্রিকেটাররা জানান, শুধু তিনিই নয়, আরও ২ জন এ বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙ্গে গেট নির্মাণ করেন। ওই দুজন ব্যক্তিও নাকি এদেশের অনেক প্রভাবশালী লোকদের আত্মীয়-স্বজন। তবে সম্প্রতি সাবেক ফুটবলার মুন্সিবাড়ি নিবাসী আলমগীর পাটোয়ারী জবরদখল করে গেট নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান উঠতি বয়সী বিভিন্ন ইভেন্টের খেলোয়াড়রা। চাঁদপুর স্টেডিয়াম ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকার অনেকের সাথে কথা বলতে গেলে তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বে আগে যারা ছিলেন, বিশেষ করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার দোকান লিজের টাকা ওঠানোর দায়িত্বে নিয়োজিত কেরানি দিলীপ সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে কীভাবে আলমগীর পাটোয়ারী গেট নির্মাণ করলেন সে বিষয়ে জানা যাবে। স্থানীয়রা আরো জানান, যে স্থানে গেট নির্মাণ করেছেন সেই স্থানে ৪ শতাংশ জায়গা রয়েছে আলমগীর পাটোয়ারীর মেয়ের জামাই প্রবাসী সবুজ ও তার মেয়ে চৈতীর নামে। আর সেই জায়গাটিতে ভবিষ্যতে বিল্ডিং করবে এবং আউটার স্টেডিয়াম রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করবে বলেই গেট নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনেক প্রভাবশালী কেরানি দিলীপ সরকারের সাথে এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, অনেকদিন আগে কাগজ দিয়েছিলেন আলমগীর পাটোয়ারী আমাদের কাছে গেট নির্মাণ করবেন বলে। তবে আলমগীর পাটোয়ারী কয়েকদিন আগে যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পরিচালনাধীন আউটার স্টেডিয়ামের দেয়াল ভেঙ্গে গেট করেছেন, সেটা আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরত প্রশাসনের কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। গেট নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে আলমগীর পাটোয়ারীর দোকানে যাওয়া হলে সেখান থেকে তার কর্মচারী এ প্রতিবেদককে তার বাসায় পাঠান। বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে তার মুঠোফোন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজমিস্ত্রি ঠিকাদার জাহাঙ্গীরের সাথে আলাপ করে আমি এই গেট নির্মাণ করেছি। অনেকের সাথে আলাপ করেই এ গেট নির্মাণ করেছি। রাজমিস্ত্রি ও ঠিকাদারের সাথে এই প্রতিবেদক মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি বলেন, গেট নির্মাণসহ বিভিন্ন স্থাপনার কাজ করে থাকি। যখন গেটের কাজ করতে যাই, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এটার কি অনুমোদন এনেছেন? আলমগীর ভাই আমাকে বলেছেন, এটা অনুমোদন এনেছেন। তাই আমি গেটের কাজ করে দিয়েছি।
চাঁদপুর স্টেডিয়াম ও আউটার স্টেডিয়াম লাগোয়া ১২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মিন্টু দেওয়ানের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে লোকমুখে শুনেছি যে আউটার স্টেডিয়ামের দেয়াল ভেঙ্গে গেট নির্মাণ করা হয়েছে । স্থানীয় এলাকাবাসী মনে করেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ বিষয়টি নজরে এনে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। স্থানীয় এলাকাবাসী প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের জায়গাটি একসময় বিশাল দিঘি ছিলো। এটি ভরাটের পর সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করে আউটার স্টেডিয়াম করা হয়। পরবর্তীতে এই আউটার স্টেডিয়ামের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে অরুন নন্দী সুইমিংপুল সহ আরো কিছু ছোট স্থাপনা। আউটার স্টেডিয়াম নির্মাণের পূর্বে দিঘির পাড়ে বসবাসকারী লোকজন স্টেডিয়াম রোড থেকে সড়ক ভবনের পশ্চিম পাশে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে যুক্ত মাদ্রাসা রোড দিয়ে নিজেদের বাসাবাড়িতে যাতায়াত করতেন। এটাই ছিলো একমাত্র পথ। কিন্তু সাবেক এক পৌর চেয়ারম্যান মাদ্রাসা রোড বাসিন্দাদের সংক্ষিপ্ত যাতায়াতের সহজ সুবিধা দিতে এবং সস্তা জনপ্রিয়তা হাসিল করতে পূর্বদিকের দেয়ালে প্রভাব খাটিয়ে পকেট গেট করে দেন। তারপর এই দেয়ালে গেট বানানোর বায়না ধরেন অনেকেই। নগণ্য সংখ্যকজন যথাযথ অনুমোদন নিয়ে গেট বানান, আর বাকিরা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে কিংবা অন্য কোনো দাপট বা ক্ষমতার প্রভাবে গেট বানানোর কাজটি করেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আউটার স্টেডিয়ামের কর্তৃপক্ষ হিসেবে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা অবৈধ গেটের বিরুদ্ধে কখনো কঠোর হবার নজির সৃষ্টি করতে পারেনি নানা প্রভাব বলয় ও সমীকরণের কারণে। আর এখন আলমগীর পাটোয়ারীসহ আরো দুটি অর্থাৎ তিনটি নূতন অবৈধ গেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকাতো স্বাভাবিক। কারণ, এখন অনেক আনুকূল্য আগের মতো নেই। আমাদের মতে, চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের দেয়াল বানানোর পর এই দেয়ালে এ পর্যন্ত যতো অনুমোদনহীন অবৈধ গেট হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে সময়-সুযোগ মতো জেলা ক্রীড়া সংস্থা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এতে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রশ্ন তোলার সুযোগ কেউ পাবে না।