প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
ব্যাংক কর্মকর্তার পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রসঙ্গে
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে পানিতে ডুবে কোনো শিশু-কিশোরের মৃত্যু নয়, একজন ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছে। তিনি নদী, পুকুর-ডোবার পানিতে নয়, খালের পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এবারকার বর্ষা-বন্যার মৌসুমে চাঁদপুর জেলায় এমন মৃত্যুর খবর এটাই প্রথম বলা যায়। কারণ, কোনো নৌ দুর্ঘটনা ব্যতীত বয়স্ক কোনো মানুষের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা উক্ত মৌসুমে সংঘটিত হবার কথা ইতিপূর্বে জানা যায়নি।
|আরো খবর
চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘পানিতে ডুবে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু’ শীর্ষক সংবাদে লিখা হয়েছে, মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র ইশতিয়াক আকবর খান (২৬) গত ৫ সেপ্টেম্বর রোববার সকালে বাড়ির নিকটস্থ খালের পানিতে ডুবে মারা গেছেন। মৃত ইশতিয়াক ছিলেন মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরস্থ এনআরসিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে এই ব্যাংকে যাতায়াত করে চাকুরি করতেন। তিনি রোববার ঘুম থেকে ওঠার পর সকাল ৮টায় দাঁত ব্রাশ করতে করতে গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন খালপাড়ে যান। এ সময় হঠাৎ পা পিছলে খালের পানিতে পড়ে যান, কিন্তু সাঁতার না জানায় পানিতে ডুবে মারা যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন ওই খালে তার নিথর ভাসমান দেহ দেখতে পান। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে সকাল ১০টায় মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইশতিয়াক জীবিত থাকলে রোববার সকাল ১০টার পূর্বেই মতলব উত্তরের ফরাজীকান্দি গ্রাম থেকে নিশ্চয়ই মতলব দক্ষিণে তার প্রিয় কর্মস্থল এনআরবিসি ব্যাংকে পৌঁছতেন। কিন্তু সেদিন সকাল ১০টায় মতলব দক্ষিণে তার ব্যাংকের নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছলেন ঠিকই, কিন্তু বেঁচেছিলেন না বলে ব্যাংকে আর যেতে পারেন নি। তার করুণ ও অকাল মৃত্যুর খবর শুনে ব্যাংক ম্যানেজারসহ সকল সহকর্মী তাঁর কাছে ছুটে এসেছেন এবং শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। ব্যাংক ম্যানেজার ফারুক আহমেদ বলেন, ইশতিয়াক আকবর একজন ভালো কর্মকর্তা ছিলেন। তার এ মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।
ইশতিয়াক আকবর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করে ছয় মাস পূর্বে এনআরবিসি ব্যাংকে যোগদান করেন। নিশ্চয়ই তাকে ঘিরে তার বাবা-মা’র অনেক রঙিন স্বপ্ন ছিলো। বাবা-মা তাকে সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন ঠিকই, কিন্তু সাঁতার শেখাতে পারেন নি। যে কারণে সামান্য খালের পানিতে পড়ে তাকে ডুবে গিয়ে প্রাণ হারাতে হলো। অথচ ইশতিয়াককে এই খালের পানিতেই বাবা-মাসহ অন্য যে কেউ সাঁতার শিখাতে পারতো। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, শহুরে বাসায় অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাঁতার শেখার সুযোগ হয় না খাল বা পুকুরের অভাবে। এমতাবস্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে সামর্থ্যবান শিক্ষার্থীদের সাঁতার শিখতে হয় সুইমিং পুলে গিয়ে কিংবা সাঁতার প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে অন্য কোথাও।
সাঁতার জানলে নৌ দুর্ঘটনা তথা যে কোনো ধরনের নৌযান ডুবিতে মানুষ বেঁচে থাকার কম-বেশি প্রয়াস চালাতে পারে, যদি তাকে কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শাহতলী এলাকার এক ব্যবসায়ী প্রায় বছর দুয়েক আগে ঢাকা-চাঁদপুর নৌরূটে যে কোনো কারণে হোক, লঞ্চ থেকে উত্তাল মেঘনায় পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করেননি সে লঞ্চের চালক। তিনি জীবন বাঁচাতে তার পরিধেয় সকল বস্ত্র খুলে দিগম্বর হয়ে সাঁতার কাটেন এবং পানিতে ভাসতে থাকেন। বেশ ক’ ঘন্টা পর তাকে উদ্ধার করে বালি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত নৌযানের কর্মচারীরা। যার ফলে তিনি বেঁচে যান। সেজন্যে বলতে হয়, পানিতে পড়ে গেলে জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে চেষ্টা চালাতে সাঁতার জানা বা শেখার কোনো বিকল্প নেই।