প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ঠিকাদার যখন প্রভাবশালী-
'সেই রাবিশ রেখেই চলছে সড়ক নির্মাণ কাজ'--শিরোনামটি সংক্ষিপ্ত, তবে অনেক অর্থবহ। এটি ছিলো গত রোববার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জে ইটের পরিবর্তে রাবিশ দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ করার ঘটনায় স্থানীয় এলজিইডি ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়। পরবর্তীতে সড়কে ফেলা সেই রাবিশ সরিয়ে নিয়মানুযায়ী বালি দিয়ে ফিলিং করার কথা থাকলেও তা করেনি ঠিকাদার। উল্টো সড়কে থাকা রাবিশের ওপর ম্যাকাডমের কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় লোকজন বাধা দিলেও তিনি তা উপেক্ষা করে কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী বাজার থেকে দক্ষিণ শাশিয়ালী এমএ বারী মিয়াজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬৩০ মিটার সড়কের পাকাকরণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম ফাহাদ এন্টারপ্রাইজ। স্থানীয়রা জানান, সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা অনিয়ম করে চলছে। সড়কের কাজে তিনি ইটের পরবর্তীতে রাবিশ ব্যবহার করলে বিভিন্ন পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কে ফেলা রাবিশ উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে নিয়মানুযায়ী বালি ফিলিং করার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ঠিকাদার সুলতান আহমেদ সেই অঙ্গীকার রাখেন নি। তিনি ওই রাবিশের উপর দিয়ে ম্যাকাডম করার কাজ শুরু করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তায় ফেলা রাবিশগুলো দিয়েই কাজ করছে ঠিকাদারের লোকজন। রাস্তার পাশে থাকা ইটের সুড়কি দিয়েই চলছে কাজ। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আমান উল্লা ফারাবী, মোস্তফা মিলন, ইউনুছসহ বেশ ক’জন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে স্কুল-মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। পরবর্তীতে রাস্তাটির কাজ শুরু করার খবরে আমাদের মনে স্বস্তি ফিরলেও যারা রাস্তার কাজ করে তাদের কর্মকাণ্ডে পূর্বের দুর্ভোগের চিন্তা আমাদের মাথায় আবার বাসা বেঁধেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করছেন, যা জনসাধাণের চোখে দুর্নীতি বলে দৃশ্যমান। আমরা চাই সড়কের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা সঠিক তদারকি করে আমাদের সড়কের কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে সহায়ক হবেন।
কাজের বিষয়ে ঠিকাদার সুলতান আহাম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম মেনে কাজ করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ বলেন, কড়ৈতলী বাজার থেকে দক্ষিণ শাশিয়ালী এমএ বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কে অনিয়মের কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পুনরায় নিয়মানুয়ায়ী কাজ শুরু করার কথা বলেছি। আমি বিষয়টি সরেজমিন গিয়ে দেখবো।
যে কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ সরেজমিনে দেখা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের রুটিন কাজ। এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে হয় না বললেই চলে ওপেন সিক্রেট চুক্তির বলে। চুক্তি যেখানে জোরালো, সেখানে রুটিন কাজের বালাই থাকে না বললেই চলে। সে কারণে অনিয়ম হয়, ঠিকাদার প্রভাবশালী হয়। এই প্রভাবশালী হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো সমীকরণের চেয়ে উপরোল্লিখিত চুক্তিটাই বেশি কাজ করে--এটা পর্যবেক্ষকদের অভিমত। ফরিদগঞ্জে মাত্র ৭৬ লাখ টাকার সড়ক উন্নয়ন কাজে এমন চুক্তিই মুখ্য না প্রকল্প অনুযায়ী বরাদ্দ কম--সেটা আমাদের জানা নেই। তবে গণমাধ্যমে যে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সে অনিয়ম বহাল রেখেই সড়ক নির্মাণ কাজ চালানো খুবই দুঃখজনক। আমরা বিশ্বাস রাখি, এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই অনিয়ম প্রতিরোধে ইতোমধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছেন অথবা নেবেন।