প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে হাইমচর স্টাইল

হাইমচরে স্কুল ব্যাগে চাইনিজ কুড়ালসহ কিশোর গ্যাং সদস্য আটক' এমন সংবাদ শিরোনাম দেখে প্রায় সকলেই ভাবতে পারেন, এটা বুঝি পুলিশের সাফল্য। কিন্তু না, এটা আশাব্যঞ্জকভাবে জনতার সাফল্য। এই সাফল্য নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি লিখেছেন, কিশোর গ্যাং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে একটি আতঙ্কের নাম। উঠতি বয়সী এ কিশোর গ্যাং সদস্যদের কাছে সম্মানী ব্যক্তি থেকে শুরু করে ছোট-বড় সকল স্তরের মানুষজনক হতে হয় লাঞ্ছিত, অপমানিত ও হামলার শিকার। এমনি এক কিশোর গ্যাং সদস্যকে স্কুল ব্যাগে চাইনিজ কুড়ালসহ স্থানীয় লোকজন আটক করে হাইমচর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ১০টায় উপজেলার কালা চকিদার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। আটককৃত ওই কিশোর নীলকমল ওচমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। সে স্থানীয় মনু মিজির নাতি বিকে রনি (১৫)।
স্থানীয় রাসেল গাজি জানান, আটককৃত এ ছেলেটি তার নানা মনু মিজি ও মামা সাদ্দাম মিজির কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে এলাকায় আরো কিছু বখাটে ছেলেকে সাথে নিয়ে প্রায় সময় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় কিছুদিন পূর্বে এই কিশোর গ্যাংকে সাথে নিয়ে তার মামা সাদ্দাম মিজি স্থানীয় নসু গাজীর উপর হামলা করে। ওই ঘটনায় নসু গাজীর ছেলে থানায় মামলা করায় এই কিশোর গ্যাং সদস্য রনি তাকে হত্যা করার হুমকি দেয়। আজ তারই আলোকে এ ছেলে স্কুল ব্যাগের ভেতরে করে চাইনিজ কুড়াল নিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে। তার সন্দেহজনক আচরণের কারণে আমরা ক’জন মিলে তার ব্যাগ তল্লাশি করে চাইনিজ কুড়াল পাই। আমরা হাইমচর থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে তারা এসে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আমরা এ কিশোরের শাস্তি কামনা করছি। এ কিশোর গ্যাংয়ের শাস্তি দেখে আর কেউ যেন কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত না হয়। স্থানীয় খোকন গাজী জানান, ছোট ছোট উশৃঙ্খল ছেলেগুলোর কারণে আমরা রাস্তাঘাটে ঠিকমত চলাচল করতে পারি না। এরা একটা দল তৈরি করে কিছু হলেই দলবল নিয়ে অস্ত্রসহ হামলা করে। দরবার-সালিসি থেকে শুরু করে সকল জায়গায় এরা প্রভাব খাটিয়ে থাকে। এদের কিছু বলাও যায় না। আবার তাদের কর্মকাণ্ড সহ্য করা যায় না। আজ যে রনি নামের ছেলেটিকে আটক করা হয়েছে সে খুবই বখাটে ধরনের ছেলে। সমাজ রক্ষায় এ ধরনের বখাটেদের সাজা হওয়া উচিত। হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, কিশোরের বয়স কম হওয়ার কারণে মুচলেকা রেখে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাওয়া কতোজন কিশোর পরিবর্তন হয়েছে বা হচ্ছে এ ব্যাপারে পরিচালিত কোনো জরিপ সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ নেতিবাচক। এ ব্যাপারে আমাদের অভিমত হচ্ছে, কিশোর অপরাধীদের পুলিশ যাতে সরাসরি অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রে পাঠাতে পারে, সেজন্যে আইনি সুযোগ রাখা দরকার। আর কিশোর গ্যাং সহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত কিশোরদের প্রতিরোধ বা পাকড়াওয়ে কেবল পুলিশের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে হাইমচরের সাহসী জনতার মতো সময়োচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। সাথে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা কিশোর গ্যাংয়ে সংশ্লিষ্ট তাদেরকে চিহ্নিত করে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ফল পাওয়া না গেলে কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে ছাত্রত্ব বাতিল তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে কিংবা কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের উদ্যোগে কিশোর গ্যাংবিরোধী কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। যে সকল পরিবারের সদস্য কিশোর গ্যাংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, সে সকল পরিবারের প্রধানকে তাদের দায়দায়িত্বের বিষয়টি জবাবদিহিতার আওতায় আনতে থানা পুলিশ কিংবা ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার/ পৌর মেয়র-কাউন্সিলরকে ভাবতে হবে। সর্বোপরি জনতাকে সোচ্চার ও সচেতন হতে উদ্দীপ্ত করতে হবে। কেননা যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে জনতার প্রতিরোধের চেয়ে বড়ো প্রতিরোধ আর কিছু হতে পারে না।