প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
এই ইউপি সদস্যের প্রতি অশেষ ধিক্কার

ইউপি সদস্যদের নিয়ে গ্রামে নানান ধরনের নেতিবাচক কথা প্রচলিত আছে। তাদের সবাই এমন কথার উপজীব্য--এটা বলার দুঃসাহস কারোই নেই। স্থানীয় সরকারের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধি এই ইউপি সদস্যদের প্রতি নাগরিকদের যে কী পরিমাণ নির্ভরশীলতা থাকে সেটা ঠেকায় না পড়লে কারো পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন। সে কারণে কিছু ইউপি সদস্য স্বেচ্ছাচারিতা ও চরম অনিয়মের আশ্রয় নেয়। এমনই একজন ফরিদগঞ্জের আব্দুল আহাদ জুয়েল। তাকে নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে শীর্ষ সংবাদ।
‘ইউপি সদস্যের জালিয়াতিতে জীবিত শহিদ উল্যা আজ মৃত’ শিরোনামের সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠে যা লিখা হয়েছে, তা হচ্ছে নিম্নরূপ--ইউপি সদস্যের কূট-কৌশল ও অর্থলোভের কারণে জীবিত শহিদ উল্যা আজ সরকারি খাতায় মৃত বনে গেছেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের অনলাইনে ইতোমধ্যেই তিনি মৃত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে মৃত্যু সনদও তৈরি করা হয়েছে। মূলত শহিদ উল্যার নামে ইস্যুকৃত বয়স্ক ভাতার বইটি অন্য আরেকজনের নামে স্থানান্তর করতেই এই হীন কাজটি করেছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল আহাদ জুয়েল। জেনে বা না জেনেই এই গর্হিত কাজে জড়িত হয়ে পড়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। এদিকে বয়স্ক ভাতার বইতে টাকা না আসার কারণ জানতে গিয়ে শহিদ উল্যা নিজেই এই তথ্য উদ্ঘাটন করেন। এখন তিনি নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
জানা গেছে, গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের জমাদার বাড়ির মৃত আবদুল আজিজের ছেলে শহিদ উল্যা। ২০১৬ সালে তার নামে বয়স্ক ভাতা চালু হয়। গত এক মাস আগে তিনি ভাতা তুলতে গেলে তাকে বলা হয় টাকা জমা হয়নি। স্থানীয় দোকানিও তাকে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। শহিদ উল্যা জানান, ভাতার বইতে টাকা জমা না হওয়ায় এবং স্থানীয় দোকানির পরামর্শে তিনি অফিসে গেলে মাঠকর্মী নূরুন্নবী জানান, তার বইতে সমস্যা আছে, এজন্যে টাকা যায়নি। ঠিক করে দেবে বলে তিনি বই রেখে দেন। এরপর তিনি বারবার ওই অফিসে গেলেও তাকে বই না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত বুধবার সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে আগের মতো টালবাহানা শুরু করেন নূরুন্নবী। এক পর্যায়ে শহিদ উল্যার হাতে বইটি ফিরিয়ে দেন তিনি। এ সময় তিনি জানতে পারেন তিনি মৃত। মারা যাওয়ার কারণে অন্য একজনের নামে তার বইটি স্থানান্তর হয়েছে। শহিদ উল্যা বলেন, আমি জলজ্যান্ত জীবিত। কিন্তু যারা আমার মতো জীবিত মানুষকে মেরে ফেললো তাদের বিচার চাই। আমার বয়স্ক ভাতা পেতে চাই। আমি এই ভাতার টাকায় ওষুধ কিনতাম। আমরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই। কী অপরাধে জীবিত থাকা সত্ত্বেও মেম্বার জুয়েল আমাকে মরা মানুষ বানিয়ে ফেললো?
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শহিদ উল্যার নামে মৃত্যু সনদপত্র জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্ভার থেকে তার নাম কেটে দেয়া হয়েছে। সেখানে নির্মল চন্দ্র দাস, পিতা সন্তোষ চন্দ্র দাস, গ্রাম ধানুয়া, ফরিদগঞ্জ চাঁদপুর--এ নাম বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইউপি কার্যালয়ের তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মিলন রেকর্ড দেখে বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখে শহিদ উল্যার মৃত্যু সনদের আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আহাদ খান জুয়েল এবং ওই তারিখে তিনিই সনদপত্রটি গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আব্দুল আহাদ জুয়েল বলেন, ভুল হয়ে গেছে, ঠিক করে দেবো। গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম শেখ বলেন, ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আহাদ জুয়েল অনলাইনে আবেদন করে আমার কাছ থেকে মৃত্যু সনদে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আমি তাকে বিশ্বাস করেছি। কাজটি ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিসের ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠকর্মী নূরুন্নবী কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, ঘটনাটি আজই জেনেছি। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। ইউপি চেয়ারম্যান মৃত্যু সনদপত্র দিলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী অন্য কারো নামে তা পরিবর্তন করে দিই।
উপরোল্লিখিত সংবাদটি পড়ার পর কোনো পাঠক কি ইউপি সদস্য আব্দুল আহাদ জুয়েলকে ধিক্কার জানানো থেকে বিরত থাকতে পারে? আমরাও জানাতে চাই অশেষ ধিক্কার। আমরা সামান্য অর্থের লোভে এই ইউপি সদস্যের অমানবিক কাজটির জন্যে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ প্রত্যাশা করছি। আইনে যা-ই থাকুক না কেনো, আমরা নৈতিক স্খলনের জন্যে আব্দুল আহাদ জুয়েলকে ইউপি সদস্য পদে থেকে অপসারণের এবং যে কোনোভাবেই হোক বৃদ্ধ শহিদ উল্যার বয়স্ক ভাতার কার্ড তাকে ফেরত প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি। জীবিত শহিদ উল্যার মৃত্যু সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে যদি প্রক্রিয়াগত ত্রুটির জন্যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।