শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাজীগঞ্জে তাল গাছ থেকে পড়ে আহত যুবকের মৃত্যু
  •   অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন চৌধুরী মারা গেছেন
  •   ছেলের মামলা-হামলায় বাড়িছাড়া বৃদ্ধা মা
  •   মতলব উত্তরে ইকবাল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
  •   মতলবে ১০ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

নদীতে মাছের প্রাচুর্য নিশ্চিতে পোনা নিধন বন্ধ করুন

অনলাইন ডেস্ক
নদীতে  মাছের প্রাচুর্য নিশ্চিতে পোনা নিধন বন্ধ করুন

চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল ‘চাঁদপুর নৌ-সীমানায় নির্বিচারে চলছে জাটকার সাথে ৮ প্রকার মাছের পোনা নিধন’ ব্যানার হেডিংয়ে ছাপা হয়েছে যে শীর্ষ সংবাদ, সেটি পড়ে উদ্বিগ্ন না হওয়া ছাড়া উপায় নেই। নাতিদীর্ঘ সংবাদটিতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মির্জা জাকির লিখেছেন, চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে নির্বিচারে চলছে জাটকার সাথে বাইলা, চিংড়ি, পাঙ্গাশ, আইড়, রিটা, পাবদা, পোয়া, টেংরা মাছের রেণু-পোনা নিধন। নদীতে এসব মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোনোভাবেই নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না আসাধু জেলেদের। এক শ্রেণীর জেলে আইন না মেনে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই জাটকাসহ অন্য মাছও তারা ধরছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হাত করে দিন-রাত নিষিদ্ধ জাল দিয়ে এসব পোনা ধরছে অসাধু জেলেরা। আর নিধনকৃত মাছের পোনা বেচতে হাঁক-ডাকে শহরের অলিগলি মুখরিত করে তুলছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে বলেন, শীতের সময়টাতে নদীতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন মাছের পোনা পাওয়া যায়। গুঁড়া মাছ ধরতে নদীতে নামার আগে প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হাত করা লাগে। এরপর জোয়ার-ভাটার সময় বুঝে বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল নিয়ে নদীতে নেমে পড়ে তারা। নদীগুলোতে এ সময় নানা ধরনের মাছের পোনায় ভরপুর থাকে। তাইতো মধ্যরাতে পাতাজাল, বেহুন্দীজাল, মশারী জালসহ নানা ধরনের নিষিদ্ধ জাল নিয়ে নদীতে নামছে অসাধু জেলেরা। পরে নিধনকৃত এসব মাছের পোনা নিয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় হাঁকডাকে মুখর করে তোলে ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রেতারা। ভ্যানগাড়িতে বড় বড় পাত্রে সাজিয়ে বিক্রি করে বাইলা, চিংড়ির সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। কেউ বা আবার মাথায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করে। দাম কম থাকার কারণে ক্রেতারাও লুফে নিচ্ছে তা। শহরের প্রতিটি অলিগলিতেই চোখে পড়ছে এমন দৃশ্য। মূলত নদীতে থাকা অধিকাংশ মাছই শীত মৌসুমের আগে ডিম ছাড়ে। শুধু তা-ই নয়, এসব জালে মাছের রেণুর পাশাপাশি উঠে আসছে কাঁকড়াসহ উপকারী বিভিন্ন জলজ প্রাণীও। দেখা যাচ্ছে নিধনকৃত মাছের রেণু পুরাণবাজারসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে নদীর পাড়েই দাদনদারদের কাছে বিক্রি করছে। নদী তীরবর্তী রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী কতিপয় নেতা কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে জেলেদের দিয়ে নদীতে জাটকা নিধন করার অভিযোগ উঠেছে। রাতভর জাটকা ধরার পর চিহ্নিত কিছু লোক রাত দশটার পর এবং ভোর বেলায় জাটকা ক্রয়-বিক্রয়ে মেতে থাকে। জাটকার পরিমাণ বেশি হলে ট্রলারে নদী পথে ও গাড়ি দিয়ে সড়ক পথে পাচার করছে। এই জাটকা মাছ ক্রয়-বিক্রয় করে কিছু লোক ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

মৎস্য গবেষকরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মাছের পোনা নিধন করার কারণে নদ-নদীতে হ্রাস পাচ্ছে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন। এখনই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ভবিষ্যতে নদীগুলো মাছশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা তাদের। চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, এসব রেণুপোনা ধরতে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা হয় । আর এ নিষিদ্ধ জালের ব্যাপারে আমাদের চলমান অভিযান ও কম্বিং অপারেশন অব্যাহত আছে। জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি রোটারিয়ান আবদুল বারী জমাদার মানিক জানান, নির্বিচারে রেণু পোনা নিধনের ফলে চাঁদপুরে প্রতিনিয়তই কমছে মাছের উৎপাদন। আর এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই চক্রের সাথে জড়িত থেকে গুঁড়া মাছ ধরাচ্ছে। আগে সারা বছরই নদীতে ছোট-বড় মাছ পাওয়া যেত। এখন ভরা মৌসুমেও জেলেরা মাছ পায় না। যে করেই হোক নদীতে গুঁড়া মাছ ধরা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাটকা নিধনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কম্বিং অপারেশন অব্যাহত আছে। তবে ভাটি অঞ্চল থেকে বেশি জাটকা এখানে আসে বলে তিনি দাবি করেন। জাটকাসহ অন্যান্য রেণুু নিধনের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রজাতির জাল ব্যবহারের বিষয়ে এখানে চারটি ধাপে কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।

পদ্মা-মেঘনায় জাটকাসহ ৮ প্রকার মাছের পোনা নিধনরোধে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটি পর্যাপ্ত না অপর্যাপ্ত সেটি বলার আগে এটা কিন্তু বলতেই হবে যে, নদীর মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমাদের দেশে রাজনৈতিক অঙ্গীকার আদায় ও সচেতনতা সৃষ্টির কাজটি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাঝে আগ্রহ বা তৎপরতা অনেক কম। এটা অনেক কষ্টকর কাজ বলেই মনে করছেন তারা। বস্তুত এ কাজটি করতে না পারলে আমাদের মৎস্য সম্পদ রক্ষার প্রয়াস পুরোপুরি সফল হবে বলে আমরা মনে করি না। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বৃহত্তর স্বার্থের চেয়ে সাময়িক অধিক লাভের ধান্ধা থেকে সরে না আসলে জাটকা নিধন, পোনা নিধন থেকে জেলেদের কেবল চাল দিয়ে, প্রতীকীভাবে বিকল্প কর্মসংস্থানের নমুনা দেখিয়ে পুরোপুরি সরানো যে যাবে না, এটা প্রমাণিত। কিন্তু সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করছে মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অন্য সকলে। এমন অবস্থার অবসানে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবেই। পোনা নিধনের কার্যকর সকল ব্যবস্থা নিয়ে নদীতে মাছের প্রাচুর্য নিশ্চিত করতেই হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়