বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় মঙ্গলবার বক্স আইটেমে দৃষ্টি আকর্ষণমূলক সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ‘হাজীগঞ্জের জয়শরা সপ্রাবির ১০ শিক্ষার্থীর জন্যে ক্লাস বন্ধ রেখে মিলাদ ॥ উড়েনি জাতীয় পতাকা ॥ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ॥ কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব’। এ সংবাদে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, পুরো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৬৬ জন, এর মধ্যে ৫ম শ্রেণিতে রয়েছে ১০ জন। এই ১০ জন শিক্ষার্থীর সমাপনী পরীক্ষা উপলক্ষ্যে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয় বিদ্যালয়ে। মিলাদ শেষে দুপুরের পরপর পুরো বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যান প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকগণ। পতাকা স্ট্যান্ড ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, মানে টানানো হয়নি জাতীয় পতাকা। প্রধান শিক্ষক খেয়াল খুশি মতো বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। পুরো বিষয়টিতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তদারকির অভাব বলে দাবি করেছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। গত ১৯ নভেম্বর রোববারের ঘটনাটি হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়শরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

এলাকাবাসী জানায়, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উপলক্ষে সকল শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রেখে রোববার বেলা ১১টার দিকে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন। শিক্ষার্থীদের বিদায় শেষে সহকারী শিক্ষকদের ছুটি দিয়ে তিনি নিজেও বাড়িতে চলে যান। নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ে ক্লাসের সময়সূচি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীর বিদায় অনুষ্ঠানের জন্যে রোববার বিদ্যালয়টির অন্য সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটি দেয়া হয়। এতে করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাঁর ইচ্ছে ও খেয়ালখুশি মতো বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মূলত এই প্রধান শিক্ষকের এমন অব্যবস্থাপনায় অভিভাবকরা সন্তানদের এই স্কুলে ভর্তি করাতে অনীহা থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিম্নগামী হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের দেয়া তথ্য মতে, বিদ্যালয়টিতে ৬৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে কাগজে কলমে ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। ৬৬ জন শিক্ষার্থীর জন্যে বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষকসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। এখানে গড়ে ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্যে একজন শিক্ষক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্যে একজন শিক্ষক থাকার কথা। তারপরেও এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সঙ্কট প্রকট। শিক্ষা অফিসের তদারকির অভাবেই এমন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এদিন বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি, বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ পেয়ে বেলা ২টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে সরজমিনে গেলে খবরের সত্যতা মিলে। এ সময় দেখা যায়, জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডটিতে পতাকা নেই। অথচ বিদ্যালয় খোলা থাকাবস্থায় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উড়ানোর নিয়ম রয়েছে। বিদ্যালয়ে অন্যরা গেছে এমন খবর পেয়ে লুঙ্গি পরিধানরত অবস্থায় বিদ্যালয়ের পাশে বন্ধ থাকা একটি চা দোকানে এসে বসেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মমিন। এ সময় তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছুটি দেয়া হয়েছে। আর জাতীয় পতাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি অ্যাকসিডেন্ট। এ ব্যাপারে উক্ত ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মুঠোফোনে জানান, তিনি তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়টি খোলা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিচ্ছেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছুটির বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হয়নি। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ ইসমাঈল হোসেন জানান, আমি গত আগস্টে সভাপতি হয়েছি। কেন উনি (প্রধান শিক্ষক) পতাকা টানাননি তা তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় কোনো অভিভাবক এ বিষয়ে লিখিত দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, বিষয়টি দেখার জন্যে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

কামরুজ্জামান টুটুল প্রায়শই হাজীগঞ্জ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সপ্রাবি)-এর নানা অনিয়ম ও সমস্যা নিয়ে লিখেন। কিছুদিন আগে লিখেছেন গোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরীর যাবতীয় অপকর্ম নিয়ে। তার সংবাদগুলোতে মাঠ পর্যায়ে সপ্রাবির পরিচালনা কার্যক্রম তদারকির মূল দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (যারা সাবেক এটিইও নামে বহুল পরিচিত)দের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণও তা-ই। আমরা মনে করি, এটিইওরা যদি রুটিন বা নিয়মমাফিক তার ক্লাস্টারের আওতাধীন বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে মিটিং করা ছাড়াও সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন, অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন করার তাগিদ দেন, অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মনখোলা কথা শুনেন, এলাকাবাসীর মতামত নেন, বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি (এসএমসি)-এর সক্রিয়তা/ নিষ্ক্রিয়তা নির্ণয় করেন, তাহলে একটি বিদ্যালয়ে ছোটখাট অনিয়ম হতে পারে, তবে বড়ো অনিয়ম বাসা বাঁধতে পারে না, অন্তত গণমাধ্যমের উপজীব্য হতে পারে না। কিন্তু এটিইওরা তাদের দায়িত্ব কি সঠিকভাবে পালন করতে পারছে বা করছে? তাদের সক্রিয়তা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানার ফুরসত কি উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা অন্য কারো হয়? তাদের জবাবদিহিতা কতটুকু এবং তারা কতোটুকু সমস্যা, সঙ্কট, প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন, সেটা নিয়ে কি সুষ্ঠুভাবে ভাববার অবকাশ কি কারো আছে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়