প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে চাঁদপুরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে যে হাকাকার ছিলো, সেটি এখন অন্য পর্যায়ে থাকলেও হাহাকারের পর্যায়ে যে নেই-এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালু হওয়া এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার, কনসেনট্রেটরের কারণে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও নানাভাবে অক্সিজেন সঙ্কট কাটলেও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি রয়ে গেছে, যার পরিণতিতে করোনা ও করোনা উপসর্গের রোগীরা স্বস্তিতে নেই। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে কিছু ঔষধ সঙ্কট। সেটি যেমন সরকারি হাসপাতালে, তেমনি বাজারের ফার্মেসিতেও। ফলস্বরূপ ঔষধের জন্যে এখানে সেখানে ছোটাছুটি এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সঙ্কট চলছে।
গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ সঙ্কট চলছে। এ সংক্রান্ত সংবাদে লিখা হয়েছে, ১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার সময় হাসপাতালটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান যে, বহির্বিভাগের কাউন্টারে স্লিপ নিয়ে রোগীরা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, এই ঔষধটির সাপ্লাই আপাতত নেই। গত ২-৩ দিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশি, ব্যথা উপশমের এই ঔষধটি রোগীদের দেয়া হচ্ছে না। আর গ্যাস্ট্রিকের ক্যাপসুল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে অনেকদিন যাবৎ। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব উল করিম জানান, এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের কাছে আমরা এ দুটি ঔষধের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। আশা করি আগামী ২৯ আগস্টের মধ্যে আমরা পেয়ে যাবো।
সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে আগত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই অসামর্থ্যবান। এরা সামান্য টাকায় টিকেট কিনে বিনা ফিতে ভালো ডাক্তার দেখানো এবং বিনামূল্যে ঔষধ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যেই আসে। এসে যদি তারা অতি প্রয়োজনীয় ঔষধটিই না পায়, তাহলে তারা হতাশ হয় এবং কেউ কেউ সামর্থ্যহীনতা তথা অতি দারিদ্র্যহেতু ঔষধ না খেয়েই রোগে ভোগে। সেজন্যে বেশি চাহিদাসম্পন্ন কিংবা অতি প্রয়োজনীয় ঔষধের মজুত শেষ হবার কমপক্ষে তিন সপ্তাহ বা একমাস আগে থেকে চাহিদাপত্র পাঠানোর বিষয়টি অনিবার্য। এক্ষেত্রে যদি স্টোর কীপার বা হাসপাতালের অন্য কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির ঔদাসীন্য থাকে, তবে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ২৯ আগস্টের মধ্যে অর্থাৎ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর ঔষধ প্রাপ্তির বিষয়টি জানান দেয়ায় তাতে দায়িত্বশীল কারো না কারো ঔদাসীন্য ও অবহেলার বিষয়টি আন্দাজ করা যায়।
করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত অবস্থায় অক্সিজেন সঙ্কট মোকাবেলার পর অতি প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্কটে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল গণমাধ্যমের সংবাদের উপজীব্য বার বার হোক-এটা নিশ্চয়ই সচেতন কেউ প্রত্যাশা করে না। আমরা এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্ট সকলের তীক্ষ্ণ সচেতনতা, সক্রিয়তা প্রত্যাশা করছি এবং চাঁদপুরের কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপরোক্ত ঔষধগুলোর পর্যাপ্ত মজুদ আছে, সেখান থেকে ম্যানেজ করে এনে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্কট মোকাবেলা করা যায় কিনা সেটি ভেবে দেখার জন্যে সিভিল সার্জনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।