প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
এমন চিকিৎসকের কাছে যেসব কারণে এতো অসহায়ত্ব-
চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘কেনো এত মৃত্যু, কেনো এত লাশ ? অনুসন্ধান-২’-এ হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ক্ষমতাধর মেডিকেল অফিসারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যার জন্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন বিশকাটালী গ্রামের আব্দুস ছালাম মালের অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে তার মেয়ের জামাতা মফিজুর রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট ধারণা করা যাচ্ছে। এই মেডিকেল অফিসারের নাম ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি গত ৭ আগস্ট শনিবার যখন উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত ছিলেন, তখন মফিজুর রহমান তার শ্বাসকষ্টে ভোগা শ^শুরকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তির আকুতি জানিয়েছিলেন। তখন তিনি জানান, হাসপাতালে অক্সিজেন নেই, রোগী ভর্তি করা যাবে না, চাঁদপুর সদরে নিয়ে যান। এমতাবস্থায় মফিজুর রহমান এক শুভাকাক্সক্ষীর পরামর্শে ১০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালের ভেতরে পৃথক একটি রুমে আগাম ভিজিট দিয়ে প্রাইভেটভাবে তার শ^শুরকে দেখাতে নিয়ে যান। গিয়ে দেখেন তিনি সেই জরুরি বিভাগের ডাক্তারই। মফিজুর রহমানকে দেখেই ওই ডাক্তার চেঁচিয়ে বললেন, আপনি এখনো চাঁদপুর যাননি? এ সময় রোগী আঃ ছালাম মাল জোরে জোরে দম টেনে বলেছিলেন ‘স্যারগো আমার দম নিতে কষ্ট হয়। হাসপাতালেত্তেন একটু অক্সিজেন দেন না।’ দয়া হয়নি ওই ডাক্তারের। পরদিন চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে সিরিয়াল ধরে অক্সিজেন পেতে বিলম্বের কারণে এই রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অথচ হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বেলায়েত হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ৭ আগস্ট তাঁর হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত ছিলো। জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাঃ মামুন রোগীটিকে ভর্তি দিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করলে তিনি হয়তে বেঁচে যেতেন, কালক্ষেপণ করে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে মরতে হতো না।
|আরো খবর
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের মতো সরকারি হাসপাতালের রুমে বসে ডিউটি চলাকালীন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার মতো প্রভাবশালী চিকিৎসক শুধু বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই, জেলা সদরস্থ হাসপাতালেও আছে। এদেরকে হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারা কোনোভাবেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন না। কমিশন দেয়ার চুক্তিতে ডিউটি চলাকালীন দালালরা এদের কাছে সুকৌশলে প্রাইভেটলি দেখাতে রোগী নিয়ে আসে এবং হাসপাতালের বাইরের প্যাথলজিতে আউটডোরের টিকেট কাটা রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করানোর স্লিপ লিখিয়ে নিয়ে যায়। এসব চিকিৎসক হাসপাতালের নির্ধারিত ডিউটিতে ইচ্ছেমত আসেন ও যান। এমন চিকিৎসক ও দালাল মিলে এমন একটা চক্র গড়ে তোলে, যাদের কাছে হাসপাতাল প্রধান অর্থপূর্ণ অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। বস্তুত তিনি ম্যানেজ্ড হন কিংবা চিকিৎসকদের সংগঠনের চাপসহ অন্যান্য চাপে চুপসে যান।
প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ২-৪ জন জুনিয়র/সিনিয়র ফাঁকিবাজ চিকিৎসকের স্থানীয় প্রভাব বা রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে দায়িত্বপরায়ণ নিষ্ঠাবান চিকিৎসকগণ এবং হাসপাতাল প্রধান জিম্মি হয়ে যান। এদের দৌরাত্ম্যে একটি সরকারি হাসপাতালের সামগ্রিক সুনাম ব্যাহত হয়। এরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় মালামাল ঠিকাদারের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গছিয়ে দেয়ার কাজে সমর্থন দেয়, সহযোগিতা করে, চিকিৎসক সংগঠনের শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত থাকে এবং এতোসবের বিপরীতে বৈধ/অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রাইভেট প্র্যাকটিসসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে নিজের আখের গুছিয়ে নেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও এমন চিকিৎসকের দাপটে মাঠে মারা পড়ে। এমন দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কবে নাগাদ কঠোর পদক্ষেপ গৃহীত হবে-সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই মনে হয় ভালো জানেন।