প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
সড়কের দুরবস্থা নিরসন ছাড়াই-
গত ৯ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’ নামক ফেরিটি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। নদীতে বিদ্যমান প্রচণ্ড স্রোতেই এ দুর্ঘটনার কারণ বলে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের ধারণা। এতে ফেরিতে থাকা দুটি প্রাইভেট কার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে তদন্তের আগেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’-এর ভারপ্রাপ্ত মাস্টার ও ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার মোঃ দেলোয়ারুল ইসলাম এবং হুইল সুকানী মোঃ আবুল কালাম আজাদ।
|আরো খবর
এটি ছিলো পদ্মা সেতুর পিলারে কোনো ফেরির দ্বিতীয় দফার ধাক্কা। এর ১৫ দিন আগে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা খায় ‘শাহজালাল’ নামক ফেরিটি। এতে ফেরিতে অবস্থানকারী বিভিন্ন যানবাহনের অন্তত ২০ জন যাত্রী আহত হয়। ঘটনার পরপরই ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমানকে বরখাস্ত করে বিআইডব্লিউটিসি এবং ঘটনার দিনই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিলারের সঙ্গে ধাক্কার পেছনে রো রো ফেরিটির ইনচার্জ ও সুকানির দায়িত্বহীনতা রয়েছে। ফেরি বা অন্য কোনো নৌযানের ধাক্কা বা সংঘর্ষ থেকে নিরাপদে রাখতে পদ্মার সেতুর পিলারগুলোকে রাবার দিয়ে মোড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে উক্ত তদন্ত কমিটি।
পনের দিনের ব্যবধানে পদ্মার সেতুর পিলারে দুটি ফেরির ধাক্কার ঘটনায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসেছে। মঙ্গলবার উক্ত মন্ত্রণালয়ে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ফেরিতে ভারী সড়ক যান (যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক) পারাপার বন্ধের নির্দেশ দেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। পদ্মা নদীতে স্রোতের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ নির্দেশ বহাল থাকবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরূটের ফেরিতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু ছোট হালকা যানবাহন (প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ইত্যাদি) চলাচল করবে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভারী যানবাহন (যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী) মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-রাজবাড়ির দৌলতদিয়া এবং চাঁদপুরের হরিণা ও শরীয়তপুরের আলুবাজার নৌরূটে ফেরিতে চলাচল করবে। মঙ্গলবার থেকেই এ নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে।
অথচ এ নির্দেশনার পরদিন বুধবারই চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট অভিমুখী ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা-চান্দ্রা চৌরাস্তা সড়কে ভারী যানবাহন খাদে পড়েছে। একটি দুটি নয়, ৫টি পণ্যবাহী ট্রাক। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাকগুলোর চালকরা জানিয়েছেন, সড়কটি ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চালক ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
ভারী সড়ক যান পারাপারে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরূটের ফেরির বিকল্প হিসেবে হরিণা-আলুবাজার ফেরিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করাটা যে যথাযথ হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক করার সুযোগ নেই। তবে এ ফেরির সাথে চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলাধীন সংযোগ সড়কের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে চাঁদপুরের ভাটিয়ালপুর-চান্দ্রা অংশের অবস্থা বর্ষা মৌসুমে চরম দুরবস্থায় পতিত হয়। খানা খন্দকে ভরে যায় সড়কের এ অংশটি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এ দুরবস্থা নিরসনে সাময়িক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বার বার ব্যর্থ হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারী যানবাহন সমূহ ব্যাপকভাবে দুর্ঘটনা কবলিত হয়। আমরা ভারী যানবাহন পারাপারে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরির সাময়িক বিকল্প হিসেবে হরিণা-আলুবাজার ফেরির ব্যবহার কার্যকর করতে ভাটিয়ালপুর-চান্দ্রা সড়কে যাতে জরুরি মেরামত সম্পন্ন করতে সওজ উদ্যোগ নেয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা জারিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।