প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
একই স্থানে বারবার কি এমন অভিযান চালানো যায় না?
সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুরে কর্মরত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নূর হোসেনের তৎপরতা পূর্বের ন্যায় চোখে পড়ছিলো না। তিনি ছুটিতে থাকায় কিংবা অন্যত্র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারণে চাঁদপুরে তাঁর তৎপরতা হয়তো বা বন্ধ ছিলো। এর মধ্যে কিছু লোকের ধারণা জন্মে যে, তিনি ম্যানেজ্ড হয়ে আগের মতো তৎপরতা চালাচ্ছেন না। কিন্তু না, তিনি গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাঁর সম্পর্কিত খারাপ ধারণা পাল্টে দিলেন। এতে চাঁদপুরের ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
|আরো খবর
শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি ॥ ৫ কারখানার মালিককে জরিমানা’ শীর্ষক সংবাদে মিজানুর রহমান লিখেছেন, চাঁদপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির অভিযোগে ৫ সেমাই কারখানার মালিককে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার ও নতুনবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব জরিমানা করেন চাঁদপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নূর হোসেন। তিনি বলেন, রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদপুর সদর উপজেলা এলাকায় ৫টি সেমাই কারখানায় বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
বুধবার পরিচালিত অভিযানে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই উৎপাদন, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য না থাকার দায়ে পুরাণবাজারের ৪টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে মেরকাটিজ রোডের সাইফুল ফুডকে ২০ হাজার, রয়েজ রোডস্থ পুরাণবাজার গার্লস্ হাই স্কুলের বিপরীতে মুনসুরের পাঁচতারা সেমাইকে ১০ হাজার, নিতাইগঞ্জের আলম ফুডকে ৫ হাজার ও আজমেরি সেমাইকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া পোশাক ও কসমেটিকস দোকান পরিদর্শন করে ন্যায্য ও যৌক্তিক মুনাফায় পণ্য বিক্রি করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। পোশাকের ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য যাচাই ও গুণগত মানসম্পন্ন পোশাক বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়। উক্ত অভিযানে পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যবৃন্দ সহযোগিতা প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার পরিচালিত অভিযানে চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডস্থ স্বর্ণখোলা রোডে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন এবং উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখে অসামঞ্জস্য থাকায় মধু ফুড লাচ্ছা সেমাইকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওয়্যারলেস বাজারের মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্সকে মূল্য তালিকা না থাকায় ২ হাজার টাকা এবং ব্রয়লার মুরগীর দাম বেশি রাখায় মা মনি ব্রয়লারকে ১ হাজার টাকা জরিমানাসহ মোট ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও নষ্ট দুধ বিক্রির দায়ে একজন ভোক্তার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফ্যামিলি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং আরোপিত জরিমানার ২৫% অর্থ ১২৫০ টাকা অভিযোগকারীকে প্রদান করা হয়েছে।
প্রতি বছর পবিত্র রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু প্রতিষ্ঠান লাচ্ছা সেমাই তৈরি করতে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও ভেজাল উপকরণ ব্যবহারের প্রবণতাসহ নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয় এবং তাদেরকে কেউ যাতে ডিস্টার্ব না করে সেজন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রভাবশালী অনেককে ম্যানেজ করার অপপ্রয়াস চালায়। এর মধ্যে কেউ অভিযান চালিয়ে জরিমানা-টরিমানা করলে তারপর ওরা আরো জোরেশোরে পূর্বের ন্যায় কার্যক্রম চালায়, যাতে জরিমানার ক্ষতিটা পোষানো যায়। এবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের পর লাচ্ছা সেমাই উৎপাদনকারীরা একই কাজ করে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণে এই অধিদপ্তরের অভিযান বিরতি দিয়ে একই স্থানে বারবার পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন সচেতন ভোক্তারা। বিষয়টি বিশেষভাবে ভেবে দেখবার জন্যে আমরা সহকারী পরিচালক নূর হোসেনের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।