প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

আরিফ হোসেন। তিনি একজন দলিল লেখক। তার সনদ নং ১০৫। তার কর্মস্থল ফরিদগঞ্জস্থ সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়। তার বিরুদ্ধে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যেটি অনেক পাঠকেরই নজর কেড়েছে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘দলিল লেখক আরিফের অভিনব প্রতারণার শেষ কোথায়?
সংবাদটির সারাংশ হচ্ছে : ফরিদগঞ্জের ভোটাল গ্রামের মামুন হোসেন ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কেরোয়া মৌজায় দেড় শতাংশ নাল জমি ক্রয় করে তার মূল্য বাবদ ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে সমমূল্যের দলিল করার জন্যে দলিল লেখক আরিফ হোসেনকে দায়িত্ব দেন। তার মাধ্যমে ফরিদগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি হয় ০৫/৯/২০১৬ তারিখে। ১৩ দিন পর ১৮/৯/২০১৬ তারিখে মামুন হোসেন সাব রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত উক্ত দলিলের অবিকল নকল কপি উত্তোলন করেন, যার নং ৫৯২৭/১৬। এই কপিতে মামুন হোসেন দেখেন যে, তার ক্রয়কৃত জমির মূল্য দেড় লাখ টাকা কম তথা ৯ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। তাৎক্ষণিক দলিল লেখক আরিফের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দলিল লিখতে গিয়ে এটা তার মিস্টেক হয়েছে। এজন্যে তিনি ‘সরি’ বলে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান।
মামুন হোসেন দলিল লেখক আরিফ হোসেনের এমন কথায় আশ্বস্ত হয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। মামুন হোসেনের সাথে একই দিনে আরিফের নিকট দলিল করতে দেয়া ববিতা বেগম যখন ৪ বছর পর দেখলেন তার ২২ লাখ টাকা দিয়ে কেনা জমির মূল দলিলে মাত্র ২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে, তখন মামুন হোসেন নড়েচড়ে বসলেন। তিনি দলিল লেখক আরিফ হোসেনের কাছে চাইলেন সাড়ে ১০ লাখ টাকায় কেনা তার জমির মূল দলিল। আরিফ টালবাহানা করতে থাকে। এমতাবস্থায় মামুন হোসেন ২০২১ সালে ফরিদগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে মূল দলিল সংগ্রহ করেন। তার সন্দেহ অমূলক না হয়ে বরং অনেক কঠিন সত্যরূপে ধরা দেয়। তিনি দেখতে পান, দলিল লেখক আরিফ হোসেন তার সাড়ে ১০ লাখ টাকা জমির মূল্য রেজিস্ট্রিকৃত মূল দলিলে মাত্র এক লাখ টাকা লিখেছেন। এতে মামুন হোসেন হতভম্ভ হয়ে পড়েন। তিনি ভাবেন, দলিল রেজিস্ট্রির ১৩ দিন পর তার ওঠানো অবিকল নকলে জমির মূল্য দেড় লাখ টাকা কম অর্থাৎ ৯ লাখ টাকা দেখতে পেলেও ছয় বছর পর মূল দলিলে সাড়ে ৯ লাখ টাকা কম অর্থাৎ মাত্র এক লাখ টাকা দেখতে পাচ্ছি কী কারণে?
প্রতারিত মামুন হোসেন এবং ববিতা বেগম এক হলেন। তারা দুজনে ২৪/১/২০২১ তারিখে ফরিদগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার আশ্রাফুল ইসলাম বরাবরে দলিল লেখক আরিফ হোসেনের প্রতারণার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সাব রেজিস্ট্রার ফরিদগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি হাছান রাজা পাটোয়ারীকে উক্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেন। সেমতে আহূত সালিসি বৈঠকে আরিফের প্রতারণা প্রমাণিত হয় এবং প্রতারিত দুজনকে বাকি টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। আরিফ ২০২১ সালে ববিতার টাকা ফেরত দিলেও মামুনের টাকা অদ্যাবধি ফেরত দেননি। ফরিদগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন গাজী আরিফের নানাশ্বশুর হওয়ায় তিনি সেই বলে মামুনকে টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাজে কথা বলছেন এবং হুমকি-ধমকিও প্রদান করছেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করে মামুন গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেমতে দলিল লেখক আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদপুর কণ্ঠ সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, চুরি তো চুরি আবার সিনাজুরি। দলিল লেখক আরিফ হোসেন প্রতারণা করেও সিনাজুরি করছেন বলে মনে হচ্ছে। প্রতারণার শাস্তি হিসেবে মামুন হোসেনের দলিল লেখক সনদ বাতিল করার জন্যে ফরিদগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাব রেজিস্ট্রারের লিকট যে অনুরোধ জানিয়েছেন সেটি রহস্যজনক কারণে রক্ষা করেন নি। সম্ভবত এর পেছনে আরিফের নানাশ্বশুর আবুল হোসেন গাজীর কোনো প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। এছাড়া আরিফ হোসেনের প্রতারণার সাথে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নকলনবিশ সহ অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা যে রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা দলিল লেখক আরিফ হোসেনের যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।