সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

রাস্তা নির্মাণে বাধাদানকারীরা কি আসলে গাধা?

রাস্তা নির্মাণে বাধাদানকারীরা কি আসলে গাধা?
অনলাইন ডেস্ক

একটি গ্রামের প্রসিদ্ধ একটি বাড়ির অবস্থান পশ্চিম-উত্তর কোণে। এ বাড়ির বাসিন্দারা মসজিদ ও বাজারসহ অন্যান্য স্থানে যেতে অন্যান্য বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া শত বছরের পুরানো রাস্তা ব্যবহার করে আসছিলো। নানা কারণে বিরোধহেতু কিংবা ঈর্ষাবশত এ রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হলো। এই রাস্তা বন্ধ করার পেছনে প্রধান কারণ ছিলো, প্রসিদ্ধ ওই বাড়িতে বাখরাবাদ গ্যাসের লাইন যাবে, যে লাইনে কোনো না কোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারে। অগত্যা বিকল্প রাস্তার জন্যে পৌরসভার কাছে ধর্ণা দিলো ওই বাড়ির ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি খাল পাড়ে বিদ্যমান গোপথ (গ্রাম্য ভাষায় গোপাট)কে জনপথে পরিণত করলে ওই বাড়ির বিকল্প রাস্তা হবে বলে অভিমত দিলেন। মাটি ফেলার কাজ শুরু করলো পৌরসভা। প্রথমে বাধ সাধলো সরকারি খালে ধান চাষে লাভবান হওয়া লোকজন। তাদের দাবি ছিলো, এখানে তাদের মালিকানা আছে। বন্ধ হয়ে গেলো কাজ। কালক্রমে প্রমাণিত হলো, এ খালটি নিতান্তই সরকারি খাল, যাতে অন্য কারো মালিকানা নেই। শুরু হলো আবার কাজ। সরকারি খাল থেকে মাটি কেটে রাস্তাটি বানাতে গেলে দ্বিতীয় দফা বাধা দিলো পাশর্^বর্তী জমির মালিকরা। পৌরসভা মাপ দিয়ে দেখলো, খালপাড়ে বিদ্যমান গোপথ বা গোপাটটি সরকারি জায়গাতেই অবস্থিত। অতএব, এখানে মাটি ফেলে রাস্তা বানানোর কাজে বাধা দেয়াটা সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপর বিনা বাধায় কাঁচা রাস্তা বানানোর কাজ সম্পন্ন হলো। এই রাস্তা দিয়ে প্রসিদ্ধ বাড়ির লোকজনই কেবল হাঁটাচলা করছে না, পাশর্^বর্তী গ্রামের লোকজনও রাস্তাটি নানা কাজে ব্যবহার করছে। পৌর কর্তৃপক্ষ রাস্তাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্রিজ নির্মাণসহ পর্যায়ক্রমে পুরো রাস্তাটি পাকা করে দিলো। পাশর্^বর্তী জমির মূল্য বেড়ে হয়ে গেলো অন্তত পাঁচগুণ। গড়ে উঠলো একের পর এক পাকা আবাসিক ভবন। অবশেষে বাধাদানকারীরা হয়ে গেলো রাস্তাটির প্রধান উপকারভোগী।

রাস্তা নির্মাণে সত্য ঘটনা অবলম্বনে এমন সফলতার অনেক গল্পই আছে। এ গল্পগুলো অনেকে জেনেও না জানার ভান করে। যেমনটি করছে এখন মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঘোড়াধারী গ্রামের বাসিন্দারা। তারা সীমান্তবর্তী কচুয়া উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামে যাতায়াতে গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণের প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করছে। রাস্তার পাশর্^বর্তী জমির মালিকদের একাংশ বলছেন, প্রয়োজন হলে অন্যদিক দিয়ে ঘুরিয়ে কাঁঠালিয়া গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা করা হোক। না হয় বিগত বছরগুলোতে যেভাবে বর্ষায় নৌকাযোগে এবং বর্ষাব্যতীত বছরের অন্য সময়গুলোতে জমির আইল দিয়ে কাঁঠালিয়া গ্রামবাসী বাড়িতে গেছে, সেভাবেই যাক। আমরা আমাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে দেবো না। জমির মালিকদের অপরাংশের দাবি, তাদের জমির পাশে রাস্তা নির্মাণ হলে জমির মূল্যবৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি যাতায়াত ও জমির ফসল ঘর-বাড়িতে নেয়া সহজ হবে। রাস্তা না থাকায় অনেক জমি অনাবাদী থাকায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। রাস্তাটি নির্মিত হলে কাঁঠালিয়া গ্রামবাসী যেমন উপকৃত হবে, ঘোড়াধারী গ্রামবাসীর আমরাও উপকার ভোগ করবো।

কচুয়ার কাঁঠালিয়া গ্রামে যাতায়াতের জন্যে রাস্তা নির্মাণে গ্রামবাসীর স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এক্ষেত্রে মতলবের ঘোড়াধাবী গ্রামের কিছু জমির মালিকরা বাধা না দিয়ে নিজেরা যে গাধা নয় শেষ পর্যন্ত সেটি প্রমাণের প্রয়াস চালাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ইতঃমধ্যে কাঁঠালিয়া গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন কচুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান শিশির ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল আহসানসহ অন্য সকলে। আমরা মনে করি, এঁদের মতো আরো অনেকেই উক্ত গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বপ্নের রাস্তাকে সত্যে পরিণত করবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়