সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক

তিনি অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর শখ হলো, তিনি নিজে কোরবানির পশু হাটে গিয়ে দর কষাকষি করে পছন্দমত গরু কিনবেন। তিনি তা-ই করলেন। ঈদের একদিন আগে তিনি তার গ্রামের নিকটস্থ বাজারে গেলেন। ঈদের দিন বিকেলে জ্বরাক্রান্ত হলেন এবং ক্রমশ করোনার উপসর্গ লক্ষ্য করা গেলো তার শরীরে। দুদিন পর হাসপাতালে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করে জানতে পারলেন যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি হতে কিছুটা গড়িমসি করলেন। গ্রামের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করলেন। অক্সিজেন সঙ্কটে শ্বাসকষ্ট বাড়লে তিনি অগত্যা হাসপাতালে গেলেন। হাসপাতালে অক্সিজেন দেয়ার পরও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাকে দ্রুত স্থানান্তর করা হলো রাজধানীর একটি হাসপাতালে, যেখানে ঠাঁই মিললো তার আইসিইউ বেডে। দুদিনের মধ্যে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। এভাবে পশুর হাট, ঈদ বাজার, মেহমানদারি করা ও মেহমান হওয়া, বিয়েসহ ভিড়াক্রান্ত পরিবেশে যাওয়ার কারণে উপরোক্ত ব্যক্তির মতো কতো ব্যক্তি যে করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং হাসপাতাল ও বাসা-বাড়িতে ধুঁকছেন তার পরিসংখ্যান দিতে গেলে যে কারোরই চোখ ছাড়াবড়া হওয়ার উপক্রম হবে।

এমন কঠিন বাস্তবতায় হাজীগঞ্জের ধড্ডায় অপরিণামদশী এক পরিবার তাদের মেয়েকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে পাত্রস্থ করার উদ্যোগ নিলো। ঘটনাটি গত বুধবার রাতের। দেশে যে লকডাউন চলছে, উদ্যোক্তারা সে বিষয়টিতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। হাজীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরবর্তী ধড্ডা গ্রামে রাতের বেলা এ বিয়ের আয়োজন করে উদ্যোক্তারা ভেবেছিলো, প্রশাসন ও আইনের লোকজন শহরে বা উপজেলা সদরে কিংবা জেলা-উপজেলার প্রধান সড়কে থেকেই লকডাউন কার্যকর করে; এরা গ্রামে বড় জোর দিনে আসতে পারে, তবে রাতে তো মোটেই নয়। এমন ভাবনায় ওরা গ্রামের বাজার থেকে ডেকোরেটর নিয়ে গেট-প্যান্ডেলসহ অন্য সব সাজসজ্জাতো করেই, এমনকি আলোকসজ্জাও করে। বেরসিক এক বা একাধিক ব্যক্তি এ খবরটি জানিয়ে দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। আর যায় কোথায়? তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে দ্রুত ছুটে আসলেন ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে। তিনি দৃশ্যমান সকল আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করে দিলেন এবং ৪-৫ জনের উপস্থিতিতে বিয়ের কাজ সম্পাদনের নির্দেশ দিয়ে সেটি কার্যকর করলেন।

করোনার ব্যাপক প্রকোপের কারণে গত বছর সৌদি আরবে হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। এ বছর সীমিত আকারে হয়েছে কেবল সৌদি আরবের বাসিন্দা এবং ওইখানে পূর্ব থেকে অবস্থানকারীদের অংশগ্রহণে। মহামারীর ব্যাপকতায় দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে এবার পশুর হাট বসিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি করা, ঘটা করে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা, বনভোজন করাসহ জনাকীর্ণ অন্যান্য আয়োজন কি একেবারে অনিবার্য ছিলো?-অবশ্যই ছিলো না। তবুও অপরিণামদর্শীরা অবিবেচকের মতো সেগুলো করেছে। এদের অনেকেই সেগুলো করেছে তাদের জীবনে শেষ বারের মতো। কেননা ইতিমধ্যে এদের অনেকেই করোনাক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন কিংবা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই অকপটে আমাদের বলতেই হয়, হায় আনুষ্ঠানিকতা! হায় অপরিণামদর্শিতা!!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়