প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
টগবগে যুবকের এটি কি মৃত্যু, না অন্য কিছু ?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত সরব চাঁদপুরের এক টগবগে যুবক অহিদুর রহমান প্রান্তের অকাল মৃত্যু হয়েছে প্রমত্তা মেঘনার বুকে। যে মেঘনার তীরে চাঁদপুর বড় স্টেশন এলাকায় ১৯৯৬ সালের ৯মে তার জন্ম, সে মেঘনার বুকে ২৬ বছর ৩ মাস ২১ দিন বয়সে গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এ মৃত্যু নৌকা থেকে মেঘনার বুকে পড়ে নিতান্তই ডুবে যাওয়ায় মৃত্যু, না অন্য কিছু সেটা নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। এটির অবসানে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ও ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানা পুলিশের নিশ্চয়ই বাড়তি কিছু করণীয় আছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
|আরো খবর
প্রান্ত হচ্ছেন চাঁদপুর রেল শ্রমিক লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি, চাঁদপুর জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, কমিউনিটি পুলিশিং চাঁদপুর অঞ্চল-৫-এর দুদশক সময়কালের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত টিটিই আলহাজ্ব মোঃ মাহবুবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। প্রান্তের মা ছিলেন একজন নারী নেত্রী (নাজনীন রহমান), যিনি প্রান্তের শৈশবকালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অকালে মা-হারা ছেলে প্রান্ত তার বাবা এবং বড় ভাই-বোনের আদরে চাঁদপুর বড় স্টেশন রেল শ্রমিক কলোনী এলাকায় ক্রমশ বেড়ে উঠেন। রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি কলেজে ক্রমশ কাটে তার শিক্ষাজীবন। শিক্ষাজীবন চলাকালে তিনি বিয়েও করেন। ঘরে তোলেন নবপরিণীতা স্ত্রী। কিন্তু কতোটা দুর্ভাগ্য তার! মায়ের মতোই তিনি অকালে অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। মা আগুনে পুড়ে মরলেন, আর পুত্র মরলেন পানিতে ডুবে।
২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রান্ত নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে ৫ সেপ্টেম্বর তার বাবা চাঁদপুর মডেল থানায় জিডি করেন। এ জিডির আলোকে পরদিন ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থেকে মেঘনার চরে প্রাপ্ত একটি লাশের ছবি আসে চাঁদপুর মডেল থানায়। হাতের ঘড়ি ও পরিধেয় বস্ত্রের মিল দেখে প্রান্তের বাবা ছুটে যান তজুমদ্দিনে। ততক্ষণে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন হওয়ায় শনাক্তকরণে জটিলতা সৃষ্টি হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলনক্রমে ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন করার পর চূড়ান্ত শনাক্তকরণের জন্যে চলচিলো অপেক্ষা। এ সময়টাতেই বসে থাকেনি চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ।
মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে সন্দেহভাজন হিসেবে গত ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রান্তের প্রতিবেশী বড় স্টেশন ক্লাব রোড এলাকার রেজাউল (১৭)কে আটক করে চাঁদপুর মডেল থানার এসআই রাশেদ। রেজাউলের তথ্য মতে ৫ জন মাদ্রাসা ছাত্রকে আটক করা হয়। আটককৃতদের ভাষ্য মতে, গত ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেলা আড়াইটায় রেজাউলসহ ৮ জন চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট সংলগ্ন ভিআইপি ঘাট থেকে নৌকা যোগে রাজরাজেশ্বরের মিনি কক্সবাজার চরে যাওয়ার প্রাক্কালে দেখা হয় প্রান্তের সাথে। প্রান্ত স্বেচ্ছায় তাদের নৌকায় উঠেন। নৌকাটি চালাচ্ছিল অপেশাদার মাঝি, যে কিনা রেজাউলের বন্ধু। বড় স্টেশন মোলহেড সংলগ্ন মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলন স্থলে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত পেরুতে গেলেই নৌকাটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলো না আনকোরা মাঝি। এ সময় নৌকার মাথায় বসে থাকা প্রান্ত মেঘনার ঘূর্ণিস্রোতে ছিটকে পড়ে এবং তাকে উদ্ধারের চেষ্টা সত্ত্বেও প্রান্ত তলিয়ে যান। তারা ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে বলে সরল স্বীকারোক্তিতে পুলিশকে জানায়।
পরিবারের লোকজনসহ প্রান্তের শুভাকাক্সক্ষী বিশেষ করে তার স্ত্রী ও বড় ভাই এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য, প্রান্ত যেহেতু সাঁতার জানতো, সে নদীতে নৌকা থেকে ছিটকে পড়লেও উদ্ধার পেতে পারতো যদি আন্তরিক প্রয়াস চালানো হতো। তাকে পরিকল্পিতভাবে নৌকায় তুলে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে হত্যার প্রয়াস চালানো হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে পুলিশের অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। নৌকার এতোজন সহযাত্রী প্রান্তের মৃত্যুর খবর জেনেও সেটা গোপন রাখার রহস্য কি শুধুই ভয় (!) না অন্য কিছু-সেটা খোলসা করতেই হবে। আর প্রান্তের মৃত্যুর জন্যে যদি কেউ দায়ী বলে নির্ণয় করা যায়, তাহলে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রান্তের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের অধিকতর তদন্তের বিষয়টি বিবেচনার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।