প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২২, ০০:০০
জন্মগত বা দুর্ঘটনাহেতু শারীরিক প্রতিবন্ধীরা বিশেষ মেধার জোরে সরকারি-বেসরকারি চাকুরি পেয়ে কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের অনেক নজির রয়েছে। কিন্তু মানসিক প্রতিবন্ধী তথা মানসিক রোগীরা এমন চাকুরি পাওয়ার নজির খুব কমই রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা বিশেষ উপায়ে ম্যানেজ করেই কেবল মানসিক রোগীকে কেউ সরকারি/বেসরকারি চাকুরি পাইয়ে দিতে পারে। সে চাকুরি পেলেও মানসিক রোগী যে একটি প্রতিষ্ঠানে নানা অঘটন ঘটায় তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
মতলব উত্তরে এক মানসিক রোগী গৃহবধূ ও সন্তানের জননী হবার পরও যা করেছেন, সেটি নিয়ে মারাত্মক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ‘ইনসেপ্টা’ ঔষধ কোম্পানির আরএমও পদে কর্মরত হায়দার আলী মতলব উত্তরে সপরিবারে বসবাস করলেও গ্রামের বাড়ি ভোলা উপজেলায়, তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার নুশরাত জাহান নামে যে নারীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, তিনি একজন মানসিক রোগী। তিনি নাকি স্বপ্নে দেখেছেন, পবিত্র কোরআন শরীফ নদীতে ফেলে দিলে তার রোগ সেরে যাবে এবং তিনি পুরোপুরি সুস্থ হবেন। এই স্বপ্নের আলোকে তিনি প্রায়শই ৯০-১০০ কপি কোরআন শরীফ ছেঙ্গারচর বাজারের ফরহাদ দর্জির দোকান থেকে কিনে নিতেন এবং মেঘনা নদীতে সকলের অগোচরে ফেলে দিতেন। এতে দোকানদারসহ কৌতূহলী লোকজনের সন্দেহ হয়। তারা নারীটির পিছু নেয় এবং কোরআন শরীফ নদীতে ফেলে দেয়ার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলে। বিজ্ঞ আলেমরা বিষয়টিকে কোরআন অবমাননার শামিল বলে মনে করলে স্থানীয় জনতা খেপে যায়। তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে থানায় খবর দিয়ে নারীটিকে পুলিশে সোপর্দ করে। মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল জানান, নারীটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সে একজন মানসিক রোগী। সেজন্যে তার চিকিৎসার প্রয়োজনে মুচলেকা নিয়ে তার স্বামীর জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
একজন মানুষ মানসিক রোগী হলে ঘর-সংসার করতে গিয়েও যে অনেক অঘটন ঘটায়, তার প্রমাণ তো মতলব উত্তরে বসবাসকারী নারী নুশরাত জাহান। তিনি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন নিয়ে যে অপকর্মটি করেছেন, তাতে তো বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নুশরাতের মতো আরেক নারী মানসিক রোগী হয়েও পেয়েছে সরকারি চাকুরি এবং ঘটিয়েছে আত্মহত্যার ঘটনা। সেটিও ঘটেছে মতলব উত্তরেই। এ নারীর নাম মনিরা কামাল (২৬)। তিনি মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) হিসেবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে যোগদান করেছেন এবং চার মাস পূর্ণ না হতেই সরকারি কোয়ার্টারে গত ১১ জুন আত্মহত্যা করেছেন। তিনি পঞ্চগড় জেলার দেবিগঞ্জ উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মমির উদ্দিন মন্টুর মেয়ে এবং নীলফামারী জেলার কাচারী বাজার গ্রামের জিয়াউল ইসলাম নাদেরের স্ত্রী।
পিতা হিসেবে মমির উদ্দিন মন্টু তার মানসিক রোগী মেয়ে মনিরা কামালকে অনেক কষ্ট স্বীকার করে লেখাপড়া করাতে সক্ষম হয়েছেন, পাত্রস্থ করেছেন এবং সরকারি চাকুরি পাইয়ে দেয়ার অস্বাভাবিক ব্যবস্থা করেছেন। সকল কিছুর পেছনে নিশ্চয়ই তার পিতৃত্বের দায়িত্ব ও মেয়ের প্রতি শুভ কামনা ছিলো প্রবল। হয়তো একদিন মেয়েটি পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে-এমন প্রত্যাশায় তিনি দিন গুণছিলেন। নিজের বোনসহ তিনি মেয়ের সাথে থাকতেন মেয়ের কর্মস্থল মতলব উত্তরে। এতো কিছু করেও তিনি মানসিক রোগী মেয়েটিকে শেষ রক্ষা করতে পারেন নি। তাই বলছি, পিতা হিসেবে মমির উদ্দিন দৃষ্টান্তই হয়ে থাকবেন, কিন্তু যারা তার মানসিক রোগী মেয়ে মনিরাকে সরকারি চাকুরি দিলেন, তারা কি বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন?