প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২২, ০০:০০
আমাদের দেশ কেনো, বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি চাকুরি যেনো সোনার হরিণ। এ সোনার হরিণ মানে কী? ইংরেজি প্রবাদ ‘অ্যা ওয়াইল্ড গুস চেজ’ থেকেই এসেছে এ সোনার হরিণ অর্থাৎ অসম্ভবের পেছনে ছোটা, বৃথা পরিশ্রম করা। শাব্দিক অর্থে ‘অ্যা ওয়াইল্ড গুস চেজ’ মানে বুনো হাঁসের পেছনে ছোটা, যে হাঁসকে ধরা একেবারে অসম্ভব। ঘোড়দৌড়ের মাধ্যমেও এ হাঁসকে ধরা যে যায় না সে বিষয়টি পনেরো শতকে প্রথম বাগ্ধারায় নিয়ে আসেন ইংরেজ কবি, নাট্যকার ও অভিনেতা শেক্সপিয়ার তাঁর ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকে। তাঁর সেই বুনো হাঁস বাংলায় হয়ে গেছে ‘সোনার হরিণ’। এই ‘সোনার হরিণ’কে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানে এনে যেনো অসম্ভব ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন। যেমন- ‘তোরা যে যা বলিস্ ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’। এই সোনার হরিণই হচ্ছে সরকারি চাকুরি।
চলমান করোনা মহামারীকালে লকডাউনের সময় সরকারি চাকুরিজীবীদের কাজ কম-বেশি বন্ধ থাকলেও বেতন-ভাতা বন্ধ থাকেনি। আর বেসরকারি চাকুরিজীবীদের কারো অর্ধবেতন, বেতনহীনতা, এমনকি চাকুরিচ্যুতিও ঘটেছে। এর ফলে সচ্ছল সংসারে এসেছে অসচ্ছলতা, অনিশ্চয়তার অন্ধকারে হতে হয়েছে নিপতিত। এমতাবস্থায় বেসরকারি চাকুরিজীবীদের কাছে সরকারি চাকুরিকে শুধু সোনার হরিণ নয়, তারচে’ মূল্যবান কিছু মনে হয়েছে।
সরকারি চাকুরি পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ আনুষঙ্গিক যোগ্যতা তো লাগেই, আমাদের দেশে তারচে’ বেশি লাগে তদবির (‘মামা’র জোর, অর্থের জোর, রাজনৈতিক প্রভাব তথা নেতার সুপারিশ ইত্যাদি)। এজন্যে তদবিরের ক্ষমতাহীন চাকুরিপ্রার্থীরা সরকারি চাকুরি তথা সোনার হরিণ/বুনো হাঁসের পেছনে ছোটার ক্ষেত্রে উদ্যমের চেয়ে হতাশাকেই বেশি অনুভব করে। এমনটাই যখন বাস্তব পরিস্থিতি, তখন যদি সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, চাঁদপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকুরি পেয়ে আনন্দিত ৬৭ কনস্টেবল এবং তাদেরকে দেয়া হয়েছে সংবর্ধনাও, তাতে বিস্মিত হতে হয় বৈকি। এ সংবাদে রীতিমত চোখ কচলিয়ে অনেককে বলতে শোনা যায়, এটা সত্যি তো!
চাঁদপুরে এ অসম্ভব সত্যি কাজটি একের পর এক করে চলছেন বর্তমান পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকের পুত্র। দেশপ্রেম ও নৈতিক দৃঢ়তায় তিনি এতোটাই শক্তিশালী যে, তিনি অকপটে বলেছেন, চাঁদপুর জেলায় ২ হাজার ২০২ জন থেকে যে ৬৭ জন কনস্টেবলের চাকুরি প্রাপ্তিতে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা উক্ত পদে এ জেলার সবচে’ যোগ্যতম। আমার বিশ^াস, যোগ্যতমের মাপকাঠিতে চাঁদপুরের এই ৬৭ জন সারাদেশেও সেরা হতে পারে। বোধকরি সে বিশ^াস থেকে তিনি এদেরকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনাও দিয়েছেন।
সরকারি চাকুরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অতীতের গ্লানি, বর্তমানের সাধারণ চিত্রের বিপরীতে চাঁদপুরে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরিপ্রাপ্তির অসাধারণ চিত্রে কম-বেশি বিস্মিত ও মুগ্ধ হতে হয়। এভাবে যদি সকল সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে, এমনকি বেসরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে তদবিরসহ সকল অনিয়মের ঊর্ধ্বে উঠে যোগ্যতমকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি বিচার করা হতো, তাহলে দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়ার দৌড়ে দেশটি অনেক এগিয়ে যেতে পারতো। আমরা হাতাশা, নেতিবাচকতাকে ক্রমশ ভুলে যেতে চাই। ‘চোখ বন্ধ করে প্রলয়’ থামাতে না পারলেও আমরা ইতিবাচক মানসিকতা লালন করতে চাই। আমাদের এই চাওয়াটা হয়তো একদিন সোনার হরিণকে পাইয়েও দিতে পারে।