প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২২, ০০:০০
আমাদের দেশে সেতু, কালভার্ট করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের বেশ আগ্রহ। সেজন্যে সড়কবিহীন স্থানে, খালবিহীন মাঠে, বাড়ির সামনে ও পেছনে এবং পাহাড়ের মাঝখানেও সেতু-কালভার্ট নির্মাণের আলামত টের পাওয়া যায়। এমন সেতুতে কেউ কাপড় শুকায়, ভেজা ধান, মরিচসহ বিভিন্ন শস্য শুকায়, কেউ কেউ কেরাম বোর্ড খেলে, তাস খেলে, মাদক সেবন করে ইত্যাদি। আবার প্রকৃত স্থানে সেতু-কালভার্ট নির্মিত হলেও কোথাও কোথাও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মিত হয় না বছরের পর বছর। সেজন্যে এমন সেতু পার হতে গিয়ে পথচারীরা আগে বাঁশ/কাঠের সেতু পাড়ি দিতে হয়।
সেতু-কালভার্ট নির্মাণে ব্যস্ততম সড়কে ডাইভারশন রোড নির্মাণের নামে কিছু ঠিকাদার যা করে, তাতে মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচলে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়। খাল বন্ধ হয়ে একদিকে জলাবদ্ধতা এবং অন্যদিকে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়। আর কম ব্যস্ততাপূর্ণ সড়কে তো ডাইভারশন রোড দূরের কথা, প্রশস্ত বাঁধও তৈরি করা হয় না। সরু বাঁধ দিয়ে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে সেচ সঙ্কটসহ নানা সমস্যা তৈরি করা হয়। যেমনটি করা হয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে। এ নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে সচিত্র শীর্ষ সংবাদ ছাপা হয়, যার ব্যানার হেডিং হয়েছে এমন-‘কালভার্ট নির্মাণে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ ॥ ফরিদগঞ্জে ধানক্ষেত ফেটে চৌচির।’
সংবাদটিতে যা লিখা হয়েছে তার সারমর্ম হচ্ছে : ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বদরপুর, ভাটেরহদ ও রুস্তমপুর এবং ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমুঘুয়া এলাকার কয়েক হাজার একর ধানের জমি পনির অভাবে ফেটে চৌচির। এর কারণ, বারপাইকা মিজি বাড়ি সংলগ্ন সেচ খালে দুটি কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ খরা হয়েছে। ধানের জমির বিষয়টি বিবেচনা করে কালভার্টের কাজ একমাস বন্ধ রাখার জন্যে কৃষকরা লিখিত আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের অভিযোগ সম্বলিত আবেদন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। তাই তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন, যাতে ধানের ক্ষেতগুলোতে দ্রুত পানি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি কৃষকদের আবেদন অনুসারে সমস্যা সাধানের আশ^াস দিয়েছেন।
আমরা মনে করি, সেতু-কালভার্ট, রাস্তা নির্মাণসহ যে কোনো উন্নয়নের প্রাক্কালে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সুবিধা-অসুবিধাসহ তাদের মতামত নেয়া বাঞ্ছনীয়। শুধু তা-ই নয়, পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে ভাবতে হয়, প্রয়োজনে সমীক্ষা করতে হয়। ফরিদগঞ্জের ১৫নং রূপসা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে দুটি কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্ভবত আনুষঙ্গিক চিন্তা-ভাবনা করেনি, বরং ঠিকাদারের স্বার্থকে প্রধান্য দিতে গিয়ে কৃষকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। এটা অবশ্যই আপত্তিকর। আশা করি এই আপত্তিকর অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরে আসবে। অন্যথায় কৃষক বিদ্রোহ দানা বাঁধলে বিস্মিত হবার কিছু থাকবে বলে আমরা মনে করি না।